আন্দোলনের ভাগ্য নির্ধারণ বুধবার!

সোয়া ৫ কোটি টাকা দুর্নীতির দুই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি এবং বুধবার আদালতে হাজিরা দেওয়াকে কেন্দ্র করে দলের নেতা-কর্মীদের দৃষ্টি এখন গুলশান কার্যালয়ের দিকে।

তাদের প্রশ্ন, খালেদা জিয়া কি কার্যালয়ে থাকছেন? তিনি কি আদালতে হাজিরা দেবেন? তাকে কি গ্রেফতার করা হবে? এ কারণে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের ভবিষ্যৎ আন্দোলনের গতিপথ কেমন হবে তা অনেকটাই নির্ভর করছে বুধবারের কী ঘটে তার ওপর। দলের বিভিন্ন মাধ্যমগুলো এমনটাই বলছে।

দুই মাস নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থান করা, দীর্ঘ সময়ে বিভিন্ন প্রতিকূল ঘটনাপ্রবাহেও কার্যালয় ত্যাগ না করা, এমনকি নিজের প্রিয় সন্তান আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুসংবাদেও কার্যালয়ে অবস্থান করার পাশাপাশি লাগাতার আন্দোলনের দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া। তবে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও আদালতে হাজিরা দেওয়াকে কেন্দ্র করে কার্যালয়ে থাকা-না-থাকা নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। বিএনপির অভিযোগ, কার্যালয় ছাড়তে বাধ্য করার জন্যই তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বলেন, ‘মিথ্যা মামলায় ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) হয়রানি করা হবে তা তিনি আগে থেকেই জানতেন। শুধু ম্যাডাম নয়, তার পরিবার ও দল ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তাই তিনি (ম্যাডাম) অনুমান করে রেখেছিলেন শেষ পর্যন্ত এই ধরনের পরিস্থিতিতে তাকে পড়তে হতে পারে।’

খালেদা জিয়া গ্রেফতার হলে আন্দোলন থেমে যাবে না জানিয়ে বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘তিনি গ্রেফতার হলে আন্দোলনের প্রভাব পড়বে, এমনটি ভাবার কারণ নেই। তখন আন্দোলন আরো জোরদার ও বেগবান হবে। এতে কোনো নির্দেশনা লাগবে না। আন্দোলন তার আপন গতিতেই চলবে।’

গুলশান কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অফিসে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন খালেদা জিয়া। নেতাদের সঙ্গে ফোনালাপের সুযোগ রয়েছে সেখানে। সারা দেশে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অবরোধ-পরিস্থিতি সব সময় তাকে অবহিত করছেন চেয়ারপারসনের প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান সোহেল ও বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। কিন্তু গুলশানের নিজ বাসায় এসব সুবিধা নেই। সেজন্য কার্যালয়েই থাকার বিকল্প চিন্তা করছেন না তিনি।

বিএনপি নেতাদের মতে, এভাবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারলে সরকার আলোচনায় বসতে বাধ্য হবে। ইতিমধ্যে সব স্তর থেকেই সংকট নিরসনে আলোচনায় বসার প্রস্তাব জোরালো হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ছাড়াও বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোও চলমান সংকট নিরসনে দুই পক্ষকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানাচ্ছে। এই জন্য যেকোনো পরিস্থিতিতেই গুলশান কার্যালয়ে থাকতে চান বিএনপি প্রধান। এ সিদ্ধান্ত থেকে একচুলও নড়তে নারাজ তিনি। তাই দুর্নীতির দুই মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার বিরুদ্ধে জামিন চাইতে আদালতে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। আদালতে জামিন চাইতে গেলে কার্যালয়ে ফিরতে না পারার আশঙ্কা বিএনপির নীতিনির্ধারকদের। তবে কার্যালয়ে ফেরার নিশ্চয়তা পেলে আদালতে যেতে পারেন প্রাক্তন এই প্রধানমন্ত্রী।

যেমনটি বলেছেন তার আইনজীবী, উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. মাহবুব হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও কার্যালয়ে ফিরে আসার নিশ্চয়তা পেলে বেগম খালেদা জিয়া আত্মসমর্পণ করবেন।

তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং আদালতে আত্মসমর্পণ করতে ইচ্ছুক। তবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও জামিন পাওয়া সাপেক্ষে কার্যালয়ে ফেরার নিশ্চয়তা দিতে হবে।’

তবে ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর ওই দিন রাতেই বিচারপতি টি এইচ খানের বাসায় বৈঠকে এ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন বিএনপি-সমর্থিত সিনিয়র আইনজীবীরা। গ্রেফতারি পরোয়ানার পেছনে সরকারের কী কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে, তা নিয়েও আলোচনা হয়। তবে সূত্র বলছে, বুধবার জামিন চাইতে খালেদা জিয়া আদালতে যাবেন না।

দলের অন্য একটি সূত্রের দাবি, গ্রেফতারি পরোয়ানা চলমান রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলা বা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে খালেদা জিয়াকে নানাভাবে চাপে রাখার কৌশল। তাকে গুলশান কার্যালয়ের বাইরে নিতে পারলে সেখানে ফিরতে দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। ওই কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে বাসায় যেতে বাধ্য করা হতে পারে। খালেদা জিয়া আত্মসমর্পণ করবেন, নাকি গ্রেফতার করা হবে-বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ভেতরে-বাইরেও এ নিয়ে তুমুল আলোচনা ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে সরকারি দলেও আগ্রহের কমতি নেই।

সোয়া ৫ কোটি টাকা দুর্নীতির দুই মামলায় ধার্য তারিখে হাজির না হওয়ায় গত বুধবার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদার এ দিন তাদের জামিন বাতিল করে পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। খালেদার আইনজীবীরা পরোয়ানা বাতিলের আবেদন করলে তাও নাকচ হয়ে যায়।

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এবং ২০১১ সালের ৮ অাগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের দুর্নীতির অভিযোগে এ দুটি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন। গত বছর ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আদালত বিএনপির চেয়ারপারসনসহ আসামিদের বিচার শুরু করে।

এদিকে দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর অন্য একটি মামলায় তার কার্যালয়ে তল্লাশি চালাতে গত রোববার আদালতের অনুমতি নিয়েছে পুলিশ। নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের মিছিলে বোমা হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় পুলিশ তল্লাশি চালাতে পরোয়ানা চেয়ে আদালতে আবেদন করেছিল।

ওই আবেদনে ঢাকার মহানগর হাকিম এস এম মাসুদ জামান গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে তল্লাশির জন্য রোববার পরোয়ানা জারি করেন। পুলিশের আবেদনে বলা হয়, ওই কার্যালয়ে বিস্ফোরক থাকতে পারে এবং পলাতক আসামিরা সেখানে থাকতে পারেন।



মন্তব্য চালু নেই