মান্না-খোকা ফোনালাপের মধ্যমণি মামুন

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে ‘স্পর্শকাতর’ বিষয় নিয়ে ফোনালাপকারী মশিউর রহমান মামুন ঢাকার প্রাক্তন মেয়র ও বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার ডান হাত। মান্না তার কাছ থেকেই নিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী খোকার টেলিফোন নম্বর।

আটক হওয়ার পর একটি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে এসব তথ্য জানিয়ে মামুন বলেছেন, তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ভাইবারে ফোনালাপের সময় তিনি রাজধানীর ধানমন্ডিতে (রোড-১৪/এ, বাংলাদেশ মেডিক্যালের পাশে) নিজের বাসায় অবস্থান করছিলেন।

এমন তথ্য জানার পর গোয়েন্দা সংস্থা নিশ্চিত হয় যে, এই ব্যক্তি বেশির ভাগ সময় ধানমন্ডি ১৪/এ এলাকায় অবস্থান করেন। এ জন্য সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তি এর আগের এক সপ্তাহ ধরে কোথায় কার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন, তা জানার উদ্যোগ নেওয়া হয়। একই সঙ্গে তার সার্বিক কর্মকাণ্ডও নজরদারির মধ্যে আনা হয়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট টিম আরো জানতে পেরেছে, মামুন লন্ডনপ্রবাসী একজন ব্যবসায়ী এবং তার সঙ্গে সমাজের শীর্ষ পর্যায়ের অনেকের যোগাযোগ রয়েছে। এ ছাড়া একটি স্পর্শকাতর বাহিনীর পদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গেও তার নিয়মিত যোগাযোগ আছে বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। পাশাপাশি মামুন একটি টিভি চ্যানেলের আইডি কার্ড ব্যবহার করেন বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রটি রাইজিংবিডিকে জানায়, এই মশিউর রহমান মামুন ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময়ে একজন প্রভাবশালী সেনা কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সে সময় ওই কর্মকর্তার প্রভাবে তিনি বিভিন্ন সরকারি অফিসে দাপটের সঙ্গে ছড়ি ঘুরাতেন। তাকে দেখলে অনেকে গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগতেন। দুই বছর মেয়াদি ওয়ান-ইলেভেন সরকার বিদায় হলে তিনি পাততাড়ি গুটিয়ে বিদেশে পাড়ি জমান।

সূত্র জানায়, ওয়ান-ইলেভেনের সময় নানা উপায়ে উপার্জন করা বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে যুক্তরাজ্যে গিয়ে মামুন একক মালিকানায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ব্যবসায় লগ্নি করা টাকা তিনি হুন্ডির মাধ্যমে নিয়ে যান। বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থের জোরে দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার উপরতলার মানুষের সঙ্গে তার বিশেষ যোগাযোগ গড়ে ওঠে।

সূত্র বলছে, এ রকম একটি মাধ্যমে মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে তার পরিচয় ও সখ্য গড়ে ওঠে। পরে মান্না তার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী খোকার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন। গোয়েন্দা হেফাজতে এসব কথা অকপটে স্বীকার করেছেন মামুন।

সূত্র জানায়, ২৩ ফেব্রুয়ারি মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে ফোনালাপের মাত্র এক সপ্তাহ আগে মামুন দেশে আসেন। যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালীন মামুন বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ’ রাখছিলেন। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতাও রয়েছেন।

গোয়েন্দা সূত্রটি জানায়, মশিউর রহমান মামুনের গ্রামের বাড়ি পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলার পারসাতুরিয়া গ্রামে। তার গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জানান, মামুনের পিতার নাম মতিউর রহমান মতি মিয়া। অনেক আগে থেকেই তাদের পরিবারের সদস্যরা এলাকা ছেড়ে ঢাকায় বসবাস করছেন। গ্রামের বাড়িতে শুধু মামুনের দূরসম্পর্কের এক চাচা থাকেন। এলাকায় তারা তেমন একটা যাতায়াতও করেন না। এলাকাবাসী জানে মামুন স্থায়ীভাবে ঢাকায় থাকলেও বেশির ভাগ সময় ব্যবসায়িক কাজে থাইল্যান্ডে অবস্থান করেন। কিন্তু বাস্তবে তিনি থাকেন লন্ডনে।



মন্তব্য চালু নেই