সব কথা সবার মুখে শোভা পায় না

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

সপ্তাহটা ছিল দারুণ উত্তেজনাপূর্ণ নানা ঘটনায় ভরা। ষড়যন্ত্রের অভিযোগে নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না গ্রেফতার হয়েছেন। রাষ্ট্রের মতা আছে আইনের দ্বারা নাগরিকদের গ্রেফতার করার। কিন্তু যেনতেনভাবে আইনবহির্ভূত কিছু করলে মানুষ অসন্তুষ্ট না হয়ে পারে না। যদিও আমাদের দেশে এখন মানুষের অসন্তুষ্ট হওয়ার মতাও হারিয়ে গেছে। পরাধীন ভারতেও সূর্য ওঠার আগে কাউকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা যেত না। কাউকে গ্রেফতার করতে গ্রেফতারি পরোয়ানা লাগত। সাক্ষী হিসেবে প্রতিবেশী নিয়ে বাড়িতে ঢুকতে হতো। ঢোকার সময় পুলিশদের দেহ তল্লাশি করে নেয়া হতো, যাতে অভিযুক্তের বাড়িতে কোনো জিনিস রেখে তাকে হ্যারাজ করতে না পারে। এখন আর আইনের কোনো বালাই নেই। সব কিছু চলছে গায়ের জোরে। যদিও এমন গাওজুরি কখনো জয়ী হয় না। অন্তঃসারশূন্য গাওজুরির পরাজয় ঠেকানোর মতা কারো নেই। ব্রিটিশ ভারতে দেখা গেছে, দেখা গেছে পাকিস্তানে। মাহমুদুর রহমান মান্না এবং সাদেক হোসেন খোকার কথোপকথনের দু-চার কথা নিশ্চয়ই আপত্তিকর মনে হতে পারে। কিন্তু অমন আলাপ এখন ঘরে-বাইরে সবাই করছে। কারণ, ওই ধরনের আলাপ-আলোচনার পরিবেশই এখন দেশে বিদ্যমান। সেনাবাহিনীর সাথে কথা বলা আর ষড়যন্ত্রের উসকানি দেয়া এক কথা নয়। আমাদের দেশের সেনাবাহিনী অন্য গ্রহের জীব নয়, তারা আমাদেরই সন্তান। তাই তাদের সাথে কথাবার্তা হওয়া কোনো দোষের নয়, দোষের হলো তাদের বিপথগামী করা বা বিপথগামী করার চেষ্টা করা। মাহমুদুর রহমান মান্নাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা নিশ্চয়ই আশা করব, তার সাথে আইনের ব্যবহার করা হবে। গভীর রাতে উঠিয়ে নিয়ে ২০-২২ ঘণ্টা কাউকে আড়ালে রাখা একজন মানুষের নাগরিক অধিকার হত্যার শামিল। বঙ্গবন্ধুর কন্যা দেশের প্রধানমন্ত্রী, তার বাবাকে কতবার গ্রেফতার করা হয়েছে। তার কন্যা দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে কোনো রাজনৈতিক মানুষকে গ্রেফতারের সময় মানবিক দিকগুলো ল করবেন না- এটা ভাবতেই যেন কেমন লাগে। জনাব মান্নাকে গ্রেফতার করে যখন কোর্টে নেয়াই হলো- তখন কেন তাকে এক দিন ওভাবে লুকিয়ে রেখে তার আত্মীয়স্বজন, পরিবার-পরিজন; উপরন্তু দেশবাসীকে শঙ্কার মধ্যে রাখা হলো? এটা কি আইনের লঙ্ঘন নয়? মানবাধিকারের প্রতি অবজ্ঞা নয়? ঠিক বুঝতে পারছি না। কোনো রাজনৈতিক সরকারের রাজনৈতিক লোকদের প্রতি কেন এত রূঢ় আচরণ?

ক’দিন আগে বীর উত্তম জিয়াউর রহমানের পুত্র তারেক রহমান সীমা ছাড়া লাগামহীন কথাবার্তা বলে দেশবাসীকে দারুণ মর্মাহত করেছেন। আবার ইদানীং আমার ভাগ্নে সজীব ওয়াজেদ জয় কেমন যেন তার মুখে যা শোভা পায় না তাই বলে আমাদের মর্মাহত করছেন। জয় কেন ড. কামাল হোসেনকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলতে যাবেন? ওসব কথা বলার আওয়ামী লীগে কি লোকের আকাল পড়েছে? জয়-তারেকরা তো আমাদের প্রিয়। রাজনীতির বাইরেও তো একটা সম্পর্ক আছে। স্বাধীনতার পরের একটা ঘটনা বলি। এখন তো আমরা নাম-গোত্রহীন। কিন্তু ’৭২, ’৭৩ সালে আমাদের নাম ছিল বিশ্বজোড়া। রাস্তাঘাটে শত-সহস্র মানুষ ছুটে আসত, কথা বলত। ’৭২-এর শেষে অথবা ’৭৩-এর শুরুতে দিনাজপুর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনের জন্য কয়েকজনের সাথে এক লিকলিকে ছাত্র এসে আমার মোহাম্মদপুরের বাড়িতে হাজির, দিনাজপুর ছাত্রলীগের সম্মেলনে যেতে হবে। আমি তখন খুব একটা সভা-সমাবেশে যেতাম না। ওদের হাত যে এত লম্বা জানা ছিল না। পরদিন গণভবনে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা। তিনি বললেন, দিনাজপুরের সম্মেলনে সবাই তোকে চায়। তুই যা। পরদিন রওনা হয়েছিলাম ঢাকা থেকে দিনাজপুরের পথে। এখনকার মতো তখন রাস্তা ছিল না। ঢাকা থেকে আরিচা যেতেই ৩-৪ ঘণ্টা, আরিচা থেকে নগরবাড়ি ঘাট উজান যেতে সেখানেও ৩ ঘণ্টা। বাঘাবাড়ি ফেরি পার হয়ে বগুড়া পৌঁছতে অনেক রাত হয়েছিল। রাত সাড়ে ৩-৪টায় পৌঁছেছিলাম রংপুর সার্কিট হাউজে। সেখান থেকে ৭টায় আবার দিনাজপুরের পথে রওনা। মনে হয় দিনাজপুর পৌঁছতে সাড়ে ৯ অথবা পৌনে ১০টা বেজেছিল। দিনাজপুর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লিকলিকে মকসুদ যে প্রায় হাতে-পায়ে ধরে দিনাজপুর নিয়ে গিয়েছিল। মনে হলো সে আমাদের চেনে না। প্রথম দেখাতেই তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেছিল। অতিথির সাথে অমন বেয়াদবের মতো ব্যবহার কেউ করতে পারে, জানা ছিল না। মকসুদের কথাবার্তায় কিছুটা অসন্তুষ্ট হয়েছিলাম। হাতমুখ ধুয়ে১০টা-সাড়ে ১০টায় ছাত্রলীগের মিছিলে শরিক হয়ে তাজ্জব বনে গেলাম, না হলেও ১০ হাজার ছাত্রজনতার মিছিল। ঘণ্টা দেড়েক মিছিলে ছিলাম। মিছিল শেষে সম্মেলনস্থলে গিয়ে বুঝলাম মকসুদের রাগারাগির কারণ। সাড়ে ৯টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। মিছিল শুরু হয়েছে ১০টায়। আমরা দিনাজপুরে পৌঁছেছি পৌনে ১০টায়। আমাদের না দেখে লোকজন সমালোচনা করেছে, গালাগাল করেছে। ভণ্ড, প্রতারক বলে মকসুদকে বকাঝকা করেছে। তখন ফোনের ছড়াছড়ি ছিল না। তাই আমরা পৌঁছেছি, এটাও তারা জানতে পারেনি। অসম্ভব সুন্দর সম্মেলন হয়েছিল। অনেক কিছু মনে নেই, কিন্তু পঞ্চগড়ের অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম ছিলেন তুখোড় নেতা। তার ছোট ভাই সুজন তখনো আলোচনায় ছিল না। দিনাজপুর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিল মকসুদ, সভাপতি বর্তমান এটিএনের চেয়ারম্যান ড. মাহফুজের বড় ভাই মাহমুদুর রহমান। ছয়-সাত দিন সেখানে ছিলাম। ফেরার পথে বগুড়ার সাত রাস্তার মোড়ে এক জনসভা ছিল। সেই জনসভায় হুজুর মওলানা ভাসানীর সমালোচনা করে বক্তৃতা করেছিলাম। তখন উত্তরবঙ্গের সবচাইতে প্রচারিত পত্রিকা করতোয়ার সম্পাদক ছিলেন আমানউল্লাহ। ৮ কলামের ব্যানার হেডিং করেছিলেন, ‘ভাসানীর ভীমরতি ধরেছে- কাদের সিদ্দিকী।’ পরদিন আমরা ছিলাম ঢাকার পথে। বাঘাবাড়ি ফেরি পাড় হয়ে কয়েক কিলোমিটার এগিয়েছিলাম। মনে হয় আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলাম। হঠাৎই শক্ত ব্রেকে তন্দ্রা ভেঙে যায়। মুছু ড্রাইভার ইউসুফ বলছিল, হুজুর যাচ্ছেন। হুজুর মানে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। আমাদের গাড়ি পেছাচ্ছিল, হুজুরের গাড়িও। কাছাকাছি হতেই আমি গিয়ে হুজুরকে সালাম করতেই তার ডান পাশে দৈনিক করতোয়ায় বড় বড় করে লেখা : ‘ভাসানীর ভীমরতি ধরেছে- কাদের সিদ্দিকী’ চোখে পড়তেই আমার হাত-পা-শরীর কেঁপে ওঠে, মাথা ঘেমে যায়। কদমবুচি করার সময় হুজুর আমার মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করছিলেন। বলছিলেন, ‘মনে হয় খুব সফর করলা? সভা সমাবেশ করলা? ভালো ভালো। কাজ করো। তোমাকে দেশের মানুষ খুব ভালোবাসে। দোয়া করি অনেক বড় হও।’ হুজুর চলে গেলেন। আমার সারা শরীর ঘেমে ভিজে গিয়েছিল। গাড়িতে বসে বারবার মনে হচ্ছিল, এসব আমি কী করছি। আমি কি হুজুর মওলানা ভাসানীর সমক। তার সমালোচনা করা আমার শোভা পায়? সেই যে হুজুরের সমালোচনা বন্ধ করেছিলাম, আর কোনো দিন বড়দের সম্পর্কে কোনো আলোচনা করতে যাইনি। মামা জয়, ভাতিজা তারেককে এসব বলা যাবে কি না জানি না, কিন্তু তাদের এ ব্যাপারে যত্নবান হওয়া উচিত। বাঙালি কৃষ্টি-সভ্যতা, আচার-ব্যবহারের বাইরে চলে গেলে এক সময় আমাদের গর্ব করার কিছুই থাকবে না। জাতি হিসেবে আমরা তখন বড়ই গরিব হয়ে যাবো।
বাঙালির হাজার বছরের গর্ব তার কৃষ্টি-সভ্যতা, আচার-ব্যবহার, বড়কে সম্মান, ছোটকে আদর-সোহাগ-ভালোবাসা। কিন্তু দুই নেত্রীর দুই পুত্র যেভাবে বড়দের অসম্মান করে চলেছেন, তাতে ভাবীকাল তাদের বাঙালির সভ্যতার ধারক-বাহক হিসেবে স্বীকার করবে না। তাই সময় থাকতে সংশোধন হওয়া উচিত। সবাইকে বলতে হবে কেন, এই জগৎ সংসারে শোনার লোক তো কিছু থাকতে হবে। দুই নেত্রীর দুই সন্তান তারা যদি জাতির দুঃসময়ে জাতিকে আরো অন্ধকারে ঠেলে দেয়ার পথ প্রশস্ত না করে যন্ত্রণাকিষ্ট জাতির শিয়রে বেদনানাশকের ভূমিকা নিতে পারতেন- সেটাই কি ভালো হতো না? তারেক রহমান বঙ্গবন্ধুকে রাজাকার বলবে, সজীব ওয়াজেদ জয় ড. কামাল হোসেনকে বলবে দেশদ্রোহী- এসব জাতি শুনতে চায় না।

এসব শোনার কথাও নয়। একজন বিদেশে লেখাপড়া করেছে, তার তো চেতনা-চৈতন্যে সেসবের একটা শুভ প্রভাব পড়বে, যে প্রভাবে অন্যরা সামান্য হলেও প্রভাবিত হবে। তা না হয়ে কুপ্রভাবে তাদের অন্তরাত্মা কলুষিত হোক, এটা আমরা চাই না। আজ ৩৪ দিন মতিঝিলের ফুটপাথে। কত শত হাজার লোকের সান্নিধ্য পেলাম, কত অভিজ্ঞতা অর্জিত হলো যা আরো অনেক বছরে হতো না। তাই কবি দার্শনিকেরা অযথা বলেননি, রাস্তাঘাটে ঘোরাফেরা করে অমূল্য রতন কুড়িয়ে নিতে। আজ দু-তিন সপ্তাহ বারবার মনে হচ্ছে, কেন ঘরে থেকে এমন একটা লম্বা জীবন কাটালাম। আরো কিছু সময় রাস্তায় থাকলে জ্ঞানের কাঙ্গাল থাকতাম না। ২৮ ফেব্রুয়ারি সকালে হঠাৎ শুনলাম, বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী হৃদরোগে আক্রান্ত। ৩২ দিন হেঁটে বায়তুল মোকাররমে নামাজ পড়তে যাওয়া ছাড়া কোথাও যাইনি। লম্বা মানুষ বসে থাকতে থাকতে মাজা লেগে আসে। হঠাৎই বড় ভাইয়ের হৃদরোগের কথা শুনে মনটা ভারী হয়ে গিয়েছিল। সাথে সাথে ছুটেছিলাম বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। ৩২ দিন পর গাড়িতে বসে কিছুটা নতুন নতুন ঠেকছিল। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকীকে দেখলাম প্রায় ছয় মাস পর। তিনি যখন আমেরিকার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন তার এক-দুই দিন আগে দেখা হয়েছিল। তখন তিনি ছিলেন মন্ত্রী। কিন্তু গত শনিবার সাড়ে ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের বিছানায় প্রায় অচেতন যাকে দেখলাম তিনি আমার মতো সর্বহারা। কারণ সারা জীবন যে দল করেছেন আজ তিনি সে দলের কেউ নন, দেশের কেউ নন। আমার সাথে কোনো কথা হয়নি। আমি যে তাকে দেখতে গিয়েছিলাম তা বুঝতে পেরেছেন কি না জানি না। আমার সাদামাটা স্ত্রী নাসরীনকে হাসপাতালে আসতে বলেছিলাম। মোহাম্মদপুর থেকে এলিফ্যান্ট রোড ধরে আসতে বেশ সময় লেগেছিল। মতিঝিলের অবস্থানস্থল থেকে শুধু শুক্রবারে জুমার নামাজের জন্য ঘণ্টা দেড়-দুই করে দূরে থেকেছি। শনিবারে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালেও দুই ঘণ্টার মতো ছিলাম। সে অল্প সময়ে অধ্যাপক আব্দুল্লাহ, ভিসিপ্রাণ গোপাল, লতিফ ভাইকে যিনি দেখাশোনা করেন অধ্যাপক সজল ব্যানার্জী এবং অধ্যাপক নাজির আহমেদ রঞ্জুর সাথে দেখা। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি, তিনি যেন তাকে সুস্থ করে তুলেন। তবে তার অচৈতন্য অবস্থা দেখে বারবার মনে হয়েছে, মানুষ কত দুর্বল, যার এক মুহূর্তের ভরসা নেই। রক্ত এক দিক থেকে আরেক দিকে যেতে সামান্য হেরফের হলে কত বিভ্রাট। সেই তারাই মানুষের সাথে এত নির্দয় ব্যবহার করে কী করে? যে স্রষ্টা এই জগৎ সংসার সৃষ্টি করেছেন, তাঁর সৃষ্টিকে নিয়ে কিভাবে এমন সব নকশা করেন। ভাবীকে, নুরু ভাইকে দেখলাম। হয়তো উন্নত চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের বাইরে কিংবা দেশের বাইরে নেয়ার পরিকল্পনা আছে। যেহেতু কারাবন্দী, সেহেতু সরকারের অনুমতির প্রয়োজন হবে, কোর্ট-কাচারির ব্যাপার স্যাপারও আছে। তবে হাসপাতালে গিয়েও মনে হলো সত্যিই দেশটা কেমন যেন ভাগ হয়ে গেছে। এক দিকে মতাবান আওয়ামী লীগ, অন্য দিকে মতায় যাওয়ার জন্য মরিয়া বিএনপি- মাঝে ল কোটি অসহায় মানুষ। চারদিকে শ্রমজীবী বেকার মানুষের হাহাকার। কাদা মাটির সুজলা সুফলা, শস্য শ্যামলা সোনার বাংলার কেন এমন হলো। প্রতিদিন বসে বসে কত কিছু দেখি, কত কিছু শুনি, কতজনের সাথে দেখা হয়, কতজন রাস্তায় বসে থাকার কষ্টে কান্নায় বুক ভেজায়, আবার কতজন আরো শক্ত কর্মসূচি চায়। শুক্রবার ভাটি বাংলা সুনামগঞ্জের ইন্টারমিডিয়েটের দুই ছাত্র এসেছিল। তার মধ্যে মহিউদ্দিন মানিক দুই শ’ টাকার ডায়েরি, চমৎকার একটি কলম ও গামছা দিয়ে গেছে। দেখতে শুনতে দু’জনই রাজপুত্রের মতো। মহিউদ্দিন মানিক ডায়েরিতে নাম লিখে গেছে তাই তার নাম উল্লেখ করতে পারলাম, আরেকজন লেখেনি। আমিও ছেলে দু’টিকে গামছা উপহার দিয়েছি। মহিউদ্দিন মানিকেরা তিন বোন চার ভাই। ভাইয়ের মধ্যে সে তিন নম্বর। বাবা মো: আব্দুল হক কৃষিকাজ করেন। আমার বড় ভালো লেগেছে ছেলেটিকে যখন জিজ্ঞেস করেছিলাম তার বাবা কী করে। সে খুব সহজভাবে বলেছিল, কৃষিকাজ। যা সাধারণত অনেকেই সহজভাবে বলতে চায় না। যাদের বাবা জজ ব্যারিস্টার তারা যত সহজে বলে গরিবের সন্তানেরা বাবা কৃষক এটা বলতে কেন যেন দ্বিধাবোধ করে। কিন্তু মানিকের মধ্যে তা দেখিনি। বহু দিন পর গতকাল আবার হঠাৎই আমি আমার এক পুরনো মানিক পেয়েছি। ’৯০-এ ঢাকা বিমানবন্দরে নেমেই মিরপুরের মোস্তফা আরিফ বাবুকে পেয়েছিলাম। সে এক অসাধারণ মতার অধিকারী। আরো ছিল দেওয়ান মান্নান, ওবায়েদ, জিয়া, তৌফিক, শাহাব উদ্দিন, বাবুর শ্বশুর সুরুজ খান। ১৬ বছর পর ১৬ ডিসেম্বর ঢাকা ফিরে ১৮ ডিসেম্বর জীবনের প্রথম টুঙ্গিপাড়া গিয়েছিলাম। তার আগে বঙ্গবন্ধুর কবর দেখিনি। টাঙ্গাইল ঘ-১ পৌরসভার টয়োটা গাড়িতে বড় কষ্ট করে প্রায় ২০ ঘণ্টায় ২০০-৩০০ কর্মীর লটবহর নিয়ে সে যাত্রায় টুঙ্গিপাড়ায় গিয়েছিলাম। সে যাত্রায় হ্যান্ডমাইক নিয়ে বাবু সাথী হয়েছিল। মনে হয় যাওয়া আসায় ২৫-৩০ ঘণ্টা মাইক চালিয়েছিল, কোনো কান্তিবোধ করেনি। আগে কী সব অসাধারণ কর্মী ছিল। আল্লাহর পরম মহিমা ধীরে ধীরে সবাই ফিরে এসে একত্র হচ্ছে। জানি না দয়াময় আমায় দেশের শুভদিন দেখার সুযোগ দেবেন কি না। কিন্তু শুভদিন যে আসবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। জানি ৩৪ দিনেও দুই নেত্রীর মান ভাঙেনি। দেখা যাক কত দিনে ভাঙে। কিন্তু দেশের যে সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে।



মন্তব্য চালু নেই