প্রথম জয়ের মুখ দেখল পাকিস্তান

প্রথম ম্যাচেই ভারতের কাছে ৭৬ রানের হার। দ্বিতীয় ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে হারের ব্যবধানটাও আরও বেশী, ১৫০ রানে। বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচ হেরে খাদের কিনারায় চলে গিয়েছিল পাকিস্তান। সমালোচনার তীর ধেয়ে আসছিল মিসবাহ শিবিরের দিকে। সব মিলিয়ে পাক শিবিরে বিরাজ করছিল রাজ্যের অস্থিরতা। তবে আজ ব্রিসবেনে স্বস্তি পেয়েছে পাকিস্তান। চলমান বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম জয়ের মুখ দেখেছে ইমরান খানের উত্তরসূরীরা। অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে পাকিস্তান জিতেছে ২০ রানে।

জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে জিততে হয় পাকিস্তানকে, কথাটি বেশ তীর্যকই মনে হয়। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। যা বুঝিয়ে দিয়েছে জিম্বাবুয়ে। টসে জিতে আগে ব্যাট করেও সুবিধা করতে পারেনি পাকিস্তান। নির্ধারিত ৫০ ওভারে সাত উইকেটে তাদের সংগ্রহ ২৩৫। জবাবে ৪৯.৪ ওভারে ২১৫ রানে অল আউট হয় জিম্বাবুয়ে। বল হাতে চার উইকেট আর ব্যাট হাতে নয়নকাড়া ফিফটির সুবাদে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছেন পাকিস্তানের পেসার ওয়াহাব রিয়াজ।

২৩৬ রানের জয়ের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছিল জিম্বাবুয়ে। ৯ রান করে মোহাম্মদ ইরফানের বলে হারিস সোহেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ওপেনার চামু চিবাবা। এরপর দলীয় ২২ রানের মাথায় আউট হন সিকান্দার রাজা (৮)। তিনিও সেই ইরফানের বলেই ক্যাচ দেন সোহেলের হাতে।

তৃতীয় উইকেট জুটিতে হাল ধরেন মাসাকাদজা ও টেইলর। এই জুটি থেকে আসে গুরুত্বপূর্ণ ৫২ রান। দলীয় ৭৪ রানে জিম্বাবুয়ের তৃতীয় উইকেটের পতন। ইরফানের বলে পাক অধিনায়ক মিসবাহর হাতে ক্যাচ দেন তিনি। তবে করে যান ৫৪ বলে ২৯ রানের ধৈর্যশীল এক ইনিংস। এরপর চতুর্থ উইকেট ৫৪ রানের জুটি গড়ে দলকে ভরসা দেন টেইলর ও উইলিয়ামস। ক্যারিয়ারের ৩২তম ফিফটি করে আউট হন ব্রেন্ডন টেইলর। ওয়াহাব রিয়াজের বলে উইকেটরক্ষক উমর আকমলের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ৭২ বলে ৫০ রানের ইনিংসে টেইলর ছক্কা হাঁকাতে পারেননি, তবে বাউন্ডারি মেরেছেন ছয়টি।

ভালোমতো এগুচ্ছিলেন শন উইলিয়াসমসও। তবে দলীয় ১৫০ রানের মাথায় তাকে ফেরান রাহাত আলী। আউট হওয়ার আগে ৩২ বলে ৩৩ রান করে যান শন উইলিয়ামস। এরপর আবার মোহাম্মদ ইরফানের আঘাত। সলোমোন মায়ারকে ফেরান তিনি উমর আকমলের হাতে ক্যাচ বানিয়ে। ১৪ বলে ৮ রান করেন মায়ার। এরপর ছোট্ট একটা ধাক্কা। দুই রানের ব্যবধানে নেই দুটি উইকেট। ১৬৮ রানের মাথায় বিদায় নেন ক্রেইগ আরভিন (১৪) ও মুপারিয়া (০)। দুজনেই পাক পেসার ওয়াহাব রিয়াজের শিকার। জিম্বাবুয়ের নেই তখন আট উইকেট। এরপর নবম উইকেট জুটিতে পানিয়াঙ্গারা ও চিগুম্বুরা ভয়ই ধরিয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানকে। এই জুটি করে ৪৭ রান। তবে শেষটা সুখের হয়নি তাদের। ২৮ বলে ১০ রান করে রান আউটের শিকার পানিয়াঙ্গারা। দলীয় রান তখন ২১৫। পরের বলেই আউট চিগুম্বুরাও, করেন ৩৫ বলে ৩৫ রান।

এই দিনে বল হাতে বেশ সফল ছিলেন পাকিস্তানের সবচেয়ে লম্বা পেসার মোহাম্মদ ইরফান। ১০ ওভার বল করে রান দিয়েছেন ৩০, উইকেট পেয়েছেন চারটি। যা তার ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং ফিগার। এছাড়া ওয়াহাব রিয়াজ চারটি ও রাহাত আলী খান নেন একটি উইকেট।

এর আগে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে পাকিস্তান। ৪ রান তুলতেই নেই দুই উইকেট! টেন্ডাই চাতারার শিকার হয়ে ফিরেন দুই ওপেনার নাসির জামশেদ (১) ও আহমেদ শেহজাদ (০)। তৃতীয় উইকেটে বিপর্যয় সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন হারিস সোহেল-মিসবাহ। এ জুটি থেকে আসে ৫৪ রান। সিকান্দার রাজার বলে ফেরার আগে হারিসের সংগ্রহ ২৭ রান।

এরপর উমর আকমলকে নিয়ে আরেকটি জুটি গড়েন মিসবাহ। দুজনের চতুর্থ উইকেট জুটিতে আসে ৬৯ রান। এ জুটি ভাঙেন শন উইলিয়ামস। উইলিয়ামসের বলে ফেরার আগে আকমলের সংগ্রহ ৩৩ রান। এরপর আরেকটি বিপর্যয়। ২৮ রানের ব্যবধানে নেই তিন উইকেট। এ পর্যায়ে দলকে কক্ষপথে ফেরায় মিসবাহ-রিয়াজের সপ্তম উইকেট জুটি। এ জুটিতে আসে ৪৭ রান।

১২১ বলে ৭৩ রান করে ফিরেন পাক অধিনায়ক মিসবাহ উল হক। চার মেরেছেন মাত্র ৩টি! মিসবাহ দলের বিপর্যয় সামাল দিয়েছেন ঠিকই, তবে পাকিস্তানকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দিয়েছে শেষ দিকে রিয়াজের ৪৬ বলে করা ৫৪ রানের ইনিংসটি। সোহেল খানের সঙ্গে রিয়াজের অবিচ্ছিন্ন অষ্টম উইকেট জুটিতে আসে ২৩ বলে ৩৩ রান। জিম্বাবুয়ের হয়ে চাতারা তিনটি, উইলিয়ামস দুটি, সিকান্দার রাজা ও মুপারিয়া নেন একটি করে উইকেট।



মন্তব্য চালু নেই