খালেদা জিয়া গ্রেফতার হলে অসহযোগ
অবরোধ-হরতালে চলা বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের লাগাতার আন্দোলন ইতোমধ্যে দেড় মাস পেরিয়ে গেছে। আন্দোলনের এ পর্যায়ে এসে সরকারের অবস্থান বুঝে সতর্ক পদক্ষেপে এগোচ্ছে বিএনপি। সঙ্কট নিরসনে সরকারের ‘বাহ্যিক’ নির্বিকার অবস্থা আমলে এনে আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নেয়া হয়েছে কৌশলী ভূমিকা। তৃণমূলে ‘যত দিন প্রয়োজন’ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের আগেই আন্দোলন অসহযোগে রূপ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গ্রেফতারের উদ্যোগ নেয়া হলে তার আগেই খালেদা জিয়া নিজেই এ কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেন বলে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত বিএনপি নেতারা বলেছেন, সরকার আন্দোলন থামাতে বেশ কিছু কৌশল নিয়েছে। খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা তাদের কৌশলের চূড়ান্ত অংশ। পাশাপাশি সরকার মনে করছে, দীর্ঘ সময় পার হয়ে যাওয়ায় বিএনপি নিজে থেকেই কর্মসূচির ইতি টানবে। অথবা আন্দোলনের দাবির প্রতি কর্ণপাত না করে নেতাকর্মীদের কান্ত করে তুলে কর্মসূচি বিমুখ করা হবে।
নেতারা বলেছেন, সরকারের এই অবস্থান বিবেচনায় এনেই ২০ দল আন্দোলন কর্মসূচি স্থিরভাবে এগিয়ে নিচ্ছে। হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে আপাতত হরতাল-অবরোধেই কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া হবে। আর খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হলে পাল্টে যাবে আন্দোলনের ধরন।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের ডাকে ৬ জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধ চলছে। শুক্র-শনি বাদ দিয়ে অবরোধের পাশাপাশি হরতাল চলছে চার সপ্তাহ ধরে। এ সপ্তাহজুড়েও হরতাল থাকছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, গ্রেফতার নিয়ে ন্যূনতম চিন্তিত নন খালেদা জিয়া। ইতোমধ্যে তার নির্দেশনা দলের সবপর্যায়ে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। গত দুই দিনে কমপক্ষে ৩০টি জেলার নেতাদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কার্যালয়ের ওই নেতা জানান, তৃণমূলের নেতাদের এখন চাওয়া দ্’ুটি। প্রথমত, তৃণমূলের নেতারা বলেছেন, আন্দোলন কোনোভাবেই থামানো যাবে না। দীর্ঘসময় পার হয়ে যাওয়ায় তারা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। দ্বিতীয়ত, তারা বলেছেন, ঢাকায় কর্মসূচি জোরদার করতে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করেন, সারা দেশের মানুষ কষ্ট করছে ফলের আশায়। চলমান আন্দোলনের একটি যৌক্তিক সমাপ্তি এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আরো ত্যাগ স্বীকারের জন্য প্রস্তুত আছেন। এ ব্যাপারে কোনো রকম ছাড়ের জন্য তারা প্রস্তুত নন।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, অবরোধ-হরতালের মধ্যেই ঢাকায় বড় ধরনের শোডাউন করার প্রস্তুতি চলছে। আগামীকাল রোববার রাজধানীসহ সারা দেশে গণমিছিলের কর্মসূচি দেয়া হয়েছে।
আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে অবরোধ-হরতাল প্রত্যাহার করে নয়। কর্মসূচি যেভাবে চলছে, আপাতত সেভাবেই চলবে। তিনি জানান, সপ্তাহে দুই দিন বিক্ষোভ মিছিল দেয়া হচ্ছে নেতাকর্মীদের মূলত মাঠে নামানোর জন্য। দলের এই নেতা আরো বলেন, খালেদা জিয়া গ্রেফতার হলে অসহযোগের ডাক দেয়া হবে। আর সে কর্মসূচি খালেদা জিয়া নিজেই ঘোষণা করবেন।
তিনি বলেন, ঢাকায় ২০ দলের নেতাকর্মীরা মাঠে নামছেন। সারা দেশেও তৃণমূল নেতাকর্মীরা মাঠে থেকে আন্দোলনকে সফলতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আন্দোলনের ফল আসতে হয়তো একটু দেরি হচ্ছে, তবে চূড়ান্তভাবে বিএনপিই বিজয়ী হবে।
গুলশান কার্যালয়ে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ এক নেতা জানিয়েছেন, আন্দোলন থেকে সরে আসার কোনো পথ বিএনপির সামনে খোলা নেই। সংলাপ হোক, আর যাই হোক, সরকারকে শিগগিরই নতি স্বীকার করতেই হবে।
আন্দোলন কর্মসূচির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বিএনপি নানামুখী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। শিগগিরই জাতিসঙ্ঘ থেকে ‘কার্যকর বার্তা’ আসবে এমন খবরও বিএনপির কাছে রয়েছে। বিএনপির মূল্যায়ন হচ্ছে, চলমান আন্দোলনকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সাথে তুলনা করে সরকার যে প্রচারণা শুরু করেছিলÑ তা বিশ্বাসযোগ্যতা পায়নি।
এ আন্দোলনের মূল যে ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচন, জনগণ ও আন্তর্জাতিক দুনিয়া তা ভালোভাবেই বোঝে। সরকার শক্তি প্রয়োগ করে এ আন্দোলনকে দমানোর চেষ্টা করছে এবং এ পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি বিরোধী দলের নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের গুলিতে মারা গেছে শতাধিক নেতাকর্মী। সরকারের অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের ফলেই তাদের বিদায় ত্বরান্বিত করবে বলে বিএনপি নেতৃবৃন্দের বিশ্বাস। আলাপকালে একাধিক নেতা জানান, গণ-আন্দোলনের বিপরীতে দমননীতি গ্রহণ করে সরকার ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের এ ধারণা অচিরেই ভুল প্রমাণিত হবে। বিএনপির কৌশলের কাছে সরকারকে নতি স্বীকার করতে হবে।
মন্তব্য চালু নেই