আমিরাতকে কাঁদিয়ে আইরিশদের জয়
অভিষেক বিশ্বকাপ ১৯৯৬ সালে। গ্রুপ পর্বে হল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয়ই একমাত্র সম্বল। তারপর ওয়ানডে ক্রিকেটে আসেনি আরাধ্যের জয়। প্রায় দুই যুগ পর বিশ্বকাপে আবারো আবির্ভাব সংযুক্ত আরব আমিরাতের। চলমান বিশ্বকাপ ক্রিকেটে নিজেদের ১৩তম ওয়ানডে ম্যাচে জয়ের খুব কাছাকাছি গিয়েও পারেনি মধ্য প্রাচে্যর এই দেশটি। আইরিশদের কাছে হারতে হয়েছে দুই উইকেটে। তবে ম্যাচে ছিল তুঙ্গস্পর্শী উত্তেজনা, ছিল আমিরাত শিবিরের চোয়ালবদ্ধ লড়াইয়ের প্রতিচ্ছবি। চলতি বিশ্বকাপে আরব আমিরাতের এটি টানা দ্বিতীয় হার। তারপরও ‘বুড়ো’ দল নিয়েও আরব আমিরাতের এমন পারফরমেন্স বিস্ময়জাগানিয়া। যেখানে অধিনায়ক মোহাম্মদ তৌকিরের বয়স ৪৪। দলটির গড় বয়স ৩৫।
যে আয়ারল্যান্ড প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে অঘটনের জন্ম দিয়েছিল, সেই আইরিশদের মনে আজ ভয়ই ঢুকিয়ে দিয়েছিল আরব আমিরাত। যা বড় পাওয়াই তাদের জন্য। ব্রিসবেনে টসে জিতে আইরিশ অধিনায়ক পোর্টারফিল্ড নিয়েছিলেন ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত। যাতে করে অল্প রানেই আটকে দেয়া যায় আরব আমিরাতকে। কিন্তু আইরিশ বোলারদের দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করে আরব আমিরাত সংগ্রহ করে নয় উইকেটে ২৭৮ রান। যা ওয়ানডে ক্রিকেটে চ্যালেঞ্জিং স্কোরই। সবচেয়ে বড় কথা প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে আরব আমিরাতের হয়ে এই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছেন সাইমান আনোয়ার। ৮৩ বলে ১০৬ রান, বেশ দাপুটে শতক। ২৭৯ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে শুরুতে বিপর্যয়ে পড়েছিল আয়ারল্যান্ড। ৭৮ রানে নেই চার উইকেট। তবে মিডল অর্ডারে গ্যারি উইলসনের ৮০ আর কেভিন ও ব্রেইনের ফিফটি (৫০) বাঁচিয়ে দেয় আয়ারল্যান্ডকে। চার বল হাতে রেখে আট উইকেটে জয়ের লক্ষ্যে পৌছায় পোর্টারফিল্ড শিবির।
তবে শুরুটা বেশ কঠিনই ছিল আয়ারল্যান্ডের। দলীয় চার রানের মাথায় গুরুগের বলে পাতিলের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন আইরিশ ওপেনার স্টারলিং (৩)। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে পোর্টারফিল্ড ও জয়েস হাল ধরেন শক্তহাতে। এই জুটি থেকে আসে ৬৮ রান। তবে দলীয় ৭২ রানে জয়েসকে (৩৭) ফেরান আমজাদ জাভেদ। ৯৪ রানে আউট হন অধিনায়ক উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড। ৩৭ রান করা আইরিশ কাপ্তান সরাসরি বোল্ড হন মোহাম্মদ তৌকিরের বলে। এর তিন রান যোগ না হতেই আবার তৌকিরের আঘাত।এবার তিনি ফেরান ১৭ রান করা নেইল ও ব্রেইনকে (১৭)।
তবে পঞ্চম উইকেট জুটিতে আস্থার পরিচয় দেন উইলসন ও ব্যালব্রিনে।এই জুটি থেকে আসে গুরুত্বপূর্ণ ৭৪রান। দলীয় ১৭১ রানের মাথায় মোহাম্মদ নাভিদের বলে ক্যাচ আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন ব্যালব্রিনে (৩০)।এরপর জয়ের জন্য মুখ্য ভূমিকা পালন করেন ষষ্ঠ উইকেটে উইলসন এবং ও ব্রেইন। এই উইকেটে তারা যোগ করেন ৭২ রান। দলীয় রান দাঁড়ায় ২৪৩। ফিফটি করে আমজাদ জাভেদের বলে আউট হন ও ব্রেইন। তবে চলেছে উইলসনের ব্যাট। এক প্রান্ত আগলে রেখে দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যান তিনি। শেষ পর্যন্ত মুনি (২) ও উইলসনকে (৮০) সাজঘরে পাঠিয়ে আশার আলো জ্বালিয়েছিল আরব আমিরাতের বোলাররা। তবে কুসাক ও ডকরেল খুব সহজেই দলকে নিয়ে যান জয়ের বন্দরে। আরব আমিরাতের হয়ে আমজাদ জাভেদ তিনটি, মোহাম্মদ নাভিদ ও মোহাম্মদ তৌকির দুটি, মানজুলা গুরুগে নেন একটি উইকেট। ইনিংস সর্বোচ্চ ৮০ রান করার সুবাদে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান আয়ারল্যান্ডের গ্যারি উইলসন।
এর আগে টসের প্রতিকূলে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালোই করেছিল আরব আমিরাত। প্রথম উইকেট জুটিতে আমজাদ আলী ও ব্রেনজার তোলেন ৪৯ রান। ১৩ রান করা ব্রেনজারকে বিদায় করেন স্টারলিং। এরপরই শুন্য রানে কৃষ্ণ চন্দ্রকে আউট করেন স্টারলিংই। দলীয় ৭৩ রানে ও ব্রেইনের শিকার হন ওপেনিং ব্যাটসম্যান আমজাদ আলী (৪৫)। এরপর দ্রুই বিদায় নেন উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান স্বপ্নীল পাতিলও (২)। ৭৮ রানে চার উইকেট খোয়ানো আরব আমিরাতকে পথ দেখান খুররম খান ও সাইমান আনোয়ার। পঞ্চম উইকেটে এই জুটি করেন ৪৭ রান। এরপর খুররম খান বিদায় নেন ৩৬ রান করে। পরের অধ্যায় সাইমন আনোয়ার ও আমজাদ জাভেদের। ৮৩ বলে ১০৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন সাইমন আনোয়ার। ৭৯ বলে করেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। শুধু তাই নয়, আরব আমিরাতের ইতিহাসে এটাই প্রথম শতকের ঘটনা। ৪২ রান করেন জাভেদ। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৭৮ রান সংগ্রহ করে আরব আমিরাত। আয়ারল্যান্ডের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন ও ব্রেইন, স্টারলিং, কুসাক ও সরেনসেন। এক উইকেট পান ডকরেল।
আয়ারল্যান্ডের এটি টানা দ্বিতীয় জয়, আমিরাতের টানা দ্বিতীয় হার। নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারী ভারতের মুখোমুখি হবে আরব আমিরাত। আর তিন মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকার মোকাবেলা করবে আয়ারল্যান্ড।
মন্তব্য চালু নেই