টট্টগ্রামের লালদীঘিতে হেফাজতের ২ দিনের সম্মেলন
হঠাৎ ধুমকেতুর মতো হাজির হওয়া আলোচিত সংগঠন হেফাজত ইসলাম এবার পুলিশের কঠিন শর্তে ধরা দিয়ে প্রকাশ্যে মাঠে নামতে যাচ্ছে। বারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে এবার লালদীঘির ময়দানে দু’দিনব্যাপী শানে রেসালত সম্মেলনের মাধ্যমে তারা প্রকাশ্যে বড় ধরনের শোডাউন করবে। সংগঠনটি কঠিন ৯টি শর্তে সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে সিএমপিতে থেকে। সমম্মেলনের যাবতীয় প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে তারা। সূত্র জানায়, মহানবী (স.) এর পবিত্র সীরাত আলোচনা উপলক্ষে আগামী ১১ ও ১২ এপ্রিল নগরীর লালদীঘি ময়দানের দু’দিনব্যাপী শানে রেসালত সম্মেলনের অনুমতি পেয়েছে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ। প্রতিদিন দুপুর ২টার পর থেকে শুরু হওয়া এ সম্মেলনের জন্য সিএমপি কমিশনারের পক্ষ থেকে অনুমতি মেলেছে ৯টি কঠিন শর্তে। সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের আমির আহমদ শফী প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন।
তবে পুলিশের পক্ষ থেকে শর্ত সাপেক্ষে হেফাজতকে সম্মেলনের অনুমতি দেয়া হয়েছে জানানো হলেও হেফাজত নেতারা বলছেন, বিশেষ কোনো শর্তে হেফাজত সম্মেলন করছে না। আল্লাহ ও রাসুলের কথা বলার জন্য সব ধর্মের মানুষকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই রেসালত সম্মেলন।
অনুমতি প্রসঙ্গে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (সদর) মাসুদ উল হাসান জানান, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুকূলে থাকায় বিশেষ শর্তে তাদের (হেফাজত) সম্মেলনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তারা আমাদের লিখিত দিয়েছে, এটি একটি ধর্মীয় সম্মেলন হবে বিধায় এখানে কোনো ধরনের রাজনৈতিক বক্তব্য ও ধর্মীয় উষ্কানিমূলক কথা বলা হবে না।’ তিনি বলেন, ‘তাছাড়াও বিশেষ যে কোনো পরিস্থিতিতে সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে তারা সমাবেশ বাতিল করতে বাধ্য থাকবে। যাদের নামে মামলা রয়েছে তাদের সমাবেশ থেকে গ্রেপ্তার করলেও কোনো ধরনের কথা বলা যাবে না। আগের মতো রাজপথে অবস্থান নিয়ে যানবাহন চলাচলে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। এরকম মোট ৯টি শর্ত মেনে নিয়েই তারা সম্মেলন করার অনুমতি পেয়েছে।’ সিএমপি সূত্র জানায়, শানে রেসালত সম্মেলনের জন্য মার্চের মাঝামাঝিতে হেফাজতে ইসলামের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি তাজুল ইসলাম নগর পুলিশের কাছে আবেদন করেন। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিএমপি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে অনুমতি নিয়ে ৯টি শর্তে সম্মেলনের অনুমতি দেয় হেফাজতকে।
শর্তগুলো হচ্ছে, হেফাজত সংশ্লিষ্ট কোনো নেতাকর্মী যদি মামলার আসামি হয় তাহলে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করলে কোনো আপত্তি চলবে না। সম্মেলনে অনুষ্ঠানের অনুমতির বিষয়ে সরকারি বিধি অনুযায়ী অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমোদন অথবা অনাপত্তি প্রয়োজন থাকলে অবশ্যই তা নিতে হবে এবং কর্তৃপক্ষ যে কোনো মুহূর্তে চাইলে সম্মেলন স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে।
সম্মেলনে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করা এবং মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে সুইপিং করে কোনো বিস্ফোরক ও ক্ষতিকর দ্রব্য নেই মর্মে নিশ্চিত করা। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আবেদনকারী ব্যক্তিগতভাবে দায়ি থাকবেন। নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং লোকজন যাতে নির্বিঘ্নে সম্মেলনস্থলে প্রবেশ ও বের হতে পারে তার ব্যবস্থা রাখা। অগ্নি দুর্ঘটনা রোধ করতে বাধ্যতামূলকভাবে ফায়ার এক্সটিংগুইসার রাখতে হবে। আযান ও নামাজের সময় মাইক প্রচারের সীমাবদ্ধতা বজায় রাখতে হবে। রাজনৈতিক উষ্কানিমূলক কিংবা ধর্মীয় এবং সাম্প্রদায়িক অনুভূতিতে আঘাত হানে এমন কোনো বক্তব্য দেয়া যাবে না। রাষ্ট্রবিরোধী, সামাজিক, নৈতিকতা বিরোধী এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সৃষ্টি করে এমন কার্যকলাপ করা যাবে না। মাহফিলকে কেন্দ্র করে কোনো রাস্তা, রাজপথ, যানবাহন চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। মাহফিলস্থলে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলার অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখতে হবে।
এ প্রসঙ্গে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী জানান, ‘মুসলমানদের ঈমান ও আকীদ্বা রক্ষার যে আন্দোলন ১৩ দফাকে সামনে রেখে হেফাজতে ইসলাম শুরু করেছিল তা এখনো অব্যাহত রয়েছে। আমাদের আমীর সাহেব কোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠীর পক্ষ হয়ে কথা বলছেন না কিংবা আমরা কোনো রাজনীতিও করছি না। আমরা সব ধর্মের মানুষের ধর্মীয় অধিকার সংরক্ষণের জন্য আইন প্রণয়নের কথা বলছি। রেসালত সম্মেলনেও একই কথা বলবো। আশা করছি পুলিশের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। এখানে বিশেষ শর্ত মেনে সম্মেলন করার কথা বলা ঠিক না।’
মন্তব্য চালু নেই