তাহসান-মিথিলার ভালবাসা শুরু চিঠিতে

ভালবাসা দিবস এলেই বাড়ির দরজায় ফুল রেখে এসে মিথিলাকে ফোন করতেন তাহসান। তখন তারা দু’জনই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সে গল্প এক দশক আগের। বর্তমান সময়ে অভিনয়-সঙ্গীতে জনপ্রিয় তারকা ও সুখী দম্পতি হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত তাহসান-মিথিলা জুটি। ভালবাসা দিবস উপলক্ষে ভালবাসার গল্প শুনিয়েছেন এ তারকা দম্পতি।

গল্পটি এক দশক আগের

বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াকালে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেন মেধাবী ছাত্র তাহসান। সে সময় মিথিলার সঙ্গে পরিচয়। সেই গল্প মিথিলার কাছেই শোনা যাক, ‘আমার এক বন্ধু তার ছোট ভাইয়ের জন্য তাহসানের অটোগ্রাফ নিতে যাচ্ছে। মূলত তাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্যই তাহসানের বাড়িতে হাজির হওয়া।’ ওই সময় মিথিলাও তাহসানের কিছু গান শুনেছেন, কিন্তু ভক্ত হননি। তাই প্রথম পরিচয়েই তাহসানের ব্যান্ড ব্ল্যাককে নিয়ে অনেক সমালোচনা করেন মিথিলা। আর বুঝে ওঠার আগেই তাহসানের মনের ঘরে বাঁধা পড়লেন।

শুরুটা চিঠি বিনিময়ে

২০০৪ সাল, মোবাইল ফোন তখন অনেকটাই সহজলভ্য। ঠিক সেই সময় মিথিলার কাছে তাহসান লিখলেন একটি চিঠি। পরিচয়ের পরদিনই তাহসান চিঠি নিয়ে কলাভবনের প্রথম গেটের সামনে অপেক্ষা করছিলেন। এক সময় মিথিলার সামনে পড়ে গেলেন। মিথিলা কথা বললেন প্রথম। তাহসান অনুরোধ করলেন, ‘চলো হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি।’ হাঁটতে হাঁটতে অনেক কথা হল। এক পর্যায়ে তাহসান সাহস করে মিথিলার হাতে গুঁজে দিলেন চিঠি। যাতে লেখা ছিল, ‘Some call it love at first sight, some call it infatution. I just ignore it.’ মনে মনে তাহসানকে পছন্দ করেছিলেন মিথিলাও। কিন্তু চিঠির উত্তর দিয়েছিলেন ফোনে। যার প্রথম বাক্যটি ছিল এমন, ‘এই এটা কী লিখেছ?’

এরপর থেকেই দু’জনের ঠোঁট থেকেই ঝরতে থাকল কথার ফুলঝুরি। নিয়ম করে রাতভর চলত ফোনালাপ। শুধুই কি ফোনালাপ! রিকশায় চড়ে চলল ঠিকানাহীন ঘোরাঘুরি। চিঠি লেখা প্রসঙ্গে তাহসান বললেন, ‘যেহেতু আমার কবিতার প্রতি প্রেম, ভাবলাম ফোন করার আগে এক চিঠিই লিখি।’

মিথিলার জন্য গান

চলছে ফোনালাপ, আড্ডাবাজি ও চুপিচুপি ঘোরাঘুরি। এরই মধ্যে মিথিলার জন্য তাহসান লিখে ফেললেন গান। তাহসানের সুরে গান গাইলেন মিথিলা। গানের রেকর্ডিং ও অনুশীলনের মধ্যদিয়ে টানা আটঘণ্টা সময় পার হয়ে যায়। এই গান গাওয়ার মধ্য দিয়েই তাদের ভালবাসা আরও ঘনীভূত হয়। গান শুধু তাদের শখ বা প্রফেশন নয়, দু’টি জীবনকেও বেঁধে দিয়েছে একই সুতোয়। তাহসান বলেন, ‘আমাদের সম্পর্কটা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পরিণত হয়েছে। তার কারণ হতে পারে আমরা একই ইউনিভার্সিটি পড়তাম, প্রায়ই আমাদের দেখা হতো, সাক্ষাতেও কথা হতো।’

ভালবাসার শেষ কোথায়

প্রেম করেই ২০০৪-০৬ সাল পর্যন্ত কেটে গেল তাহসান-মিথিলার। সময়গুলো বেশ আনন্দে কেটেছে তাদের। সেই দুই বছর তাদের মধ্যে ঝগড়া কিংবা খুনসুঁটি কী হতো না! তাহসান বলেন, ‘প্রায় রাতের বেলা ওর সঙ্গে কথা বলতাম। আর সত্যি কথা বলতে, ফোনে কথা বলতে আমার ভাল লাগে না। মিথিলা বলে নয়, কারো সঙ্গেই ফোনে বেশিক্ষণ কথা বলতে ভাল লাগে না। রাত জেগে জেগে কথা বলার সময় আমি যখন ফোন রাখতে চাইতাম, ও বলত এত তাড়াতাড়ি ফোন রাখছ কেন? এ সব নিয়ে সামান্য খুনসুঁটি হতো না, তা নয়। তবে তার স্থায়িত্ব থাকত খুব অল্প সময়।’

বাজল বিয়ের সানাই

২০০৬ সালের ৩ আগস্ট এক সুতোয় বাঁধা পড়ল তাহসান-মিথিলার জীবন। তাহসান বলেন, ‘বিয়ের সময় আমার বয়স ছিল মাত্র ২৬ বছর আর মিথিলার ২৩ বছর। হঠাৎ করেই বিয়ে হয়ে গেল আমাদের। একবার মনে হচ্ছিল খুব তাড়াহুড়ো করেই কি বিয়ে করে ফেললাম! তখন অনেকেই বুঝিয়েছিল, বিয়ে করলেই সব শেষ। বিয়ের পর আর এত জনপ্রিয়তা থাকবে না। মেয়ে ভক্তরা সব দূরে সরে যাবে। বিয়ের পরে দেখলাম সেই রকম কিছুই হয়নি।’

সংসার গোছানোর পালা

খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সংসার গুছিয়ে নিয়েছেন তারা। মিথিলা বললেন, ‘সংসার গোছানোর কি আর শেষ আছে! এখনো চলছে সংসার গোছানোর কাজ।’ তাদের একমাত্র মেয়ের বয়স বর্তমানে এক বছর চার মাস। তাকে নিয়ে বেশ কেটে যাচ্ছে দিন। তাহসান বলেন, ‘এখন আমি, মিথিলা আর আমাদের বাবু— তিনে মিলে খুব ভাল সময় কাটছে।’

মিল-অমিল

মিল-অমিল নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবলেন তাহসান। তারপর বললেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় মিল হচ্ছে— আমরা দু’জনেই মেয়েকে খুব ভালবাসি। আমি চাই, মেয়েকে পিয়ানিস্ট বানাব।’ আর মিথিলা বললেন, ‘আমি চাই মেয়েকে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়াব।’ পর মুহূর্তে দু’জন একসঙ্গে বলেন, ‘মেয়ে নিজে যা হতে চায় তাই হবে। তার ওপর আমরা কিছু চাপিয়ে দিতে চাই না।’

মান-অভিমান, ঝগড়াঝাটি

‘মান-অভিমান ঝগড়া আমাদের জীবনেরই একটি অংশ। সব মিলিয়ে মিলে মিশে থাকাটাই হচ্ছে সুখী জীবন। আমাদের বাবা-মার সঙ্গেও অনেক মান-অভিমান হয়। কিন্তু সে সব আমরা কখনই মনে রাখি না। ঠিক তেমনই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও ঝগড়া হয়। আবার আমরা সেসব ভুলেও যাই। এই তো জীবন। এমনই তো হওয়া উচিত।’— মান-অভিমান, ঝগড়াঝাটি নিয়ে এভাবেই বললেন তাহসান। মিথিলা বলেন, ‘তবে আমরা কেউ কারো ওপর বেশিক্ষণ মন খারাপ করে থাকতে পারি না। ওর বেশিক্ষণ অনুপস্থিতি আমার ভাল লাগে না। অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকলেও সব সময় ফোনে আমাদের কথা হয়। সব মিলিয়ে আমরা অনেক ভাল আছি। এই যে একসঙ্গে শুটিং করছি, গান গাইছি।’

বিয়ের আগে ও পরে

বলা হয়ে থাকে, বিয়ের আগে ভালবাসার একরূপ আর বিয়ের পর অন্যরূপ। কেউ কেউ বলেন, বিয়ের পর ভালবাসার রং ধূসর হয়ে যায়। কিন্তু তাহসানের ভাষ্য অন্যরকম। তিনি বলেন, ‘বিয়ের আগে প্রেম-ভালবাসায় নানারকম সামাজিক বাধা-বিপত্তিও থাকে। যেটা বিয়ের পরে থাকে না। যাই বলেন ভাই, বিয়ের পরে প্রেম করে শান্তি আছে। একসঙ্গে শুটিং, গান, ঘুরে বেড়ানো— কেউ বাঁকা চোখে তাকাতে পারবে না।’

আড্ডা শেষে সবার উদ্দেশে তাহসান-মিথিলা বলেন, ‘বাবা, মা, ভাই-বোন ও নিজের পরিবারকে ভালবাসুন। আর আনন্দে থাকুন।’



মন্তব্য চালু নেই