বিদেশগামী সহজ সরল যাত্রীরা সাবধান থাকবেন এ সমস্ত প্রতারনা থেকে
– বাহ, গ্যালাক্সি S4 দেখছি! কয় কোটি টাকার মালিক?
– জীবনে কখনও অবৈধ কাজ করিনি স্যার.. এই প্রথম
– ফেইসবুকও ব্যবহার কর দেখছি, ভেরি ট্যালেন্ট! পড়াশোনা কতটুক?
– ট্যালেন্ট হলে কি আর ধরা পড়ি অষ্টম শ্রেণী মাত্র স্যার
– ফেইসবুক আইডি “Awng Bin Bakri Bakri” এর মানে কী?
– জানিনা স্যার, রাজিব করে দিছে কুয়েত থেকে
– রাজিব কে? কুয়েতে কী করে?
– ওয়ালার নসীব কোম্পানিতে ক্লিনারের কাজ করে। এই গ্যালাক্সি সেট সে-ই পাঠাইছে
– কলার লিস্টে H.H টা কে? কী করে?
– কিশোরগঞ্জের ওয়াসিম, “মা-বাবা” রেন্ট-এ-কারের মালিক
– তার সাথে কী সম্পর্ক?
– রাজিব বলছে ওয়াসিমের সাথে যোগাযোগ করে তার জন্য গাঁজা পাঠাতে
– ওয়াসিম তো গাড়ির ব্যবসা করে.. গাঁজাও??
– ওয়াসিমের কথামত ফরিদপুরের টেপাখোলার জাহিদের কাছ থেকে ১ কেজি গাঁজা কিনি ৫০০০ টাকা দিয়ে
…….. গাঁজার প্যাকেট একটা বক্সে ঢুকিয়ে উপরে কিছু গরুর মাংস দিয়ে ব্যাগ ভরে রাতে চলে আসেন এয়ারপোর্টে ফরিদপুরের নগরকান্দার তৈয়ব আলী। এদিকে ফেনির ছাগলনাইয়ার রুবেল জীবনে প্রথম কুয়েত যাচ্ছেন। এগিয়ে দিতে আসা তাঁর বাবা কামাল উদ্দিন (০১৮৩২৯৯১৯৯৪) ও চাচাতো ভাই শহিদুল করিম (০১৮১১৩৫৯৩৫৪) রুবেলকে নিয়ে উদ্বিগ্ন… এয়ারপোর্টের ঝক্কিঝামেলা পার হতে পারবেতো? তাই কুয়েতগামি একজন পুরান যাত্রি খুঁজছিলেন বাইরে। ভোর ছয়টায় ফ্লাইট।
রাত দেড়টায় কালো ব্যাগ হাতে এগিয়ে আসেন গাঁজা ব্যবসায়ী তৈয়ব। কুয়েতগামি যাত্রি পরিচয় দিয়ে রুবেলকে যাবতীয় সহায়তার আশ্বাস দেয়। শুরু হয় অভিনয়! টয়লেট সারার নাম করে ১০/১৫ মিনিট আড়ালে থেকে পুনরায় হন্তদন্ত হয়ে ফিরে এসে “এইমাত্র ফোন আসছে.. মা ইন্তেকাল করেছেন” frown emoticon আজকে যাওয়া হবে না। আহারে.. কুয়েতপ্রবাসি ছোট ভাই রাজীবের জন্য মা এক কেজি গরুর মাংস দিয়েছিল… মায়ের শেষ ইচ্ছাটাও পূরণ হলো না
***
– এরকম কয়বার মা-কে পরকালে পাঠিয়েছিলে?
– একবারও না স্যার, মা এখনও জীবিত
– বউ থাকতে মা’রে মেরে ফেলছো কেন??
– দুইটা ছোট বাচ্চা আছে স্যার… তাই..
– তুমি মায়ের বাচ্চা না? বুক কাঁপে নাই??
***
মায়ের শোকে কাতর তৈয়বকে শান্তনা দেয় রুবেলের বাবা ও চাচাতো ভাই। রুবেল সরল বিশ্বাসে তৈয়বের মাংসের (গাঁজার) বক্সটি ব্যাগে নিয়ে কাগজের টুকরোয় রাজিবের মোবাইল নম্বর (+৯৬৫৫১৬৭২৭৮৮) টুকে নেয়। রাত আড়াইটায় সবাই মিলে রুবেলকে বিদায় জানিয়ে বিমানবন্দরে ঢুকিয়ে দেয়। রুবেলের বাবা ও চাচাতো ভাইকে নিয়ে তৈয়ব চলে যায় বহুতল কার পার্কিং-এর নীচ তলার কফি শপে। আরামসে কফি খায় আর এজন-ওজনকে ফোন করে খোশগল্পের শেষ নাই… ভুলে যায় মায়ের মৃত্যুর শোক..! সন্দেহ জাগে রুবেলের বাবার!!
***
– এত অভিনয় করলে..আর একটু করলেই পারতে
– জীবনে প্রথম সফলতা দেখে.. ভুলে গেছি খুশিতে
***
চ্যালেঞ্জ করে পাসপোর্ট দেখাতে বললে ঘাবড়ে যায় তৈয়ব। বামবাহুতে ঝাপটে ধরে রুবেলের বাবা কামাল সাহেব। ডানবাহু চেপে ধরে শহিদুল। পালাবে কোথায়?? লোকজন ঘিরে ধরে। এপিবিএন আটক করে নিয়ে আসে। ইমিগ্রেশন থেকে রুবেলকে সনাক্ত করে তার ব্যাগ কনভেয়ার বেল্ট থেকে তুলে নিয়ে উদ্ধার করা হয় গাঁজা ভর্তি বক্সটি।
অজ-পাড়া গাঁয়ের ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ বাবা কামাল সাহেবের সাহসিকতায় নির্বিঘ্নে রুবেল পাড়ি দেয় কুয়েতের মাটিতে। বাবা না থাকলে সহজ সরল রুবেল হয়তো এতক্ষণে বসে কাঁদতো কুয়েতের চার-দেয়ালের জেল-হাজতে। এ নিয়ে যখন বিচার চলমান… আরেকজন আসলেন এবার আরও ১ কেজি বাড়িয়ে… ২ কেজি নিয়ে। নতুন ট্রেন্ড..নতুন ট্রিক্স..! সুতরাং শুধু সতর্ক হলেই চলবে না… বৃদ্ধ কামাল সাহেব পারলে আমি আপনি কেন পারবো না? সচেতন হউন, সাহসি হউন… নিজে বাঁচুন.. দেশের ভাবমূর্তি বাঁচাতে এগিয়ে আসুন।
মন্তব্য চালু নেই