নাগরিক সংলাপের উদ্যোগে ‘ভিন্ন মতলব’
সংলাপের আহ্বান জানিয়ে গত সোমবার নাগরিক সমাজের পক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনকে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে তাতে ‘ভিন্ন মতলব’ খুঁজছে ক্ষমতাসীনরা। ক্ষমতাসীনরা নাগরিক সমাজের এ উদ্যোগকে নেতিবাচক হিসেবে দেখেছেন এবং স্পষ্ট করে জানান, সরকার নাগরিক সমাজের উদ্যোগে সাড়া দেবে না।
এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার ক্ষমতাসীন দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের ১০/১২ জন নেতার সঙ্গে কথা বলা হয়।
সংলাপ উদ্যোক্তাদের মধ্যে ‘ভিন্ন মতলব’ রয়েছে দাবি করে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘এরা সবাই দলীয়। এরা নিরপেক্ষ মনোভাব পোষণ করে না।’
সভাপতিমণ্ডলীর অপর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি অংশ রয়েছে যারা সবসময় পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়। নাগরিক সমাজের নামে তারাই এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।’
এর আগে গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাগরিক সমাজের এ অংশকে এক-এগারোর অনির্বাচিত সরকারের কুশীলব হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা জানান, এরা সুশীলের খোলস গায়ে জড়িয়েছে। কিন্তু সুশীল নয়। এরা সবাই চিহ্নিত। কোনো না কোনো দলের। তারা পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার জন্যে মরিয়া তাই তারা এ ধরনের প্রস্তাব দিয়ে নিজেদের সামনে আসা ও জনগণের কাছে নিজেদের মেলে ধরার কৌশল গ্রহণ করেছে।
আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, নাগরিক সমাজের সংলাপের এ আহ্বান দলের নেতারা কৌশলে মোকাবিলা করবেন।
সাবেক প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ৫ জানুয়ারি থেকে নতুন নির্বাচনের দাবিতে টানা অবরোধ-হরতাল দিয়ে আসছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার দেশের নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সংলাপের দাবিতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে চিঠি দেওয়া হয়।
নাগরিক সমাজের এ উদ্যোগকে বিভিন্ন মহল থেকে সরকারের ওপর সংলাপের আয়োজনের জন্য বড় একটি চাপ মনে করা হলেও ক্ষমতাসীনরা এখনও সংলাপের বিপক্ষে অনড়। বরং ক্ষমতাসীনরা মনে করছে, নাগরিক সমাজ সংলাপের কথা বলে বিএনপি’র মানুষ পোড়ানোকে সমর্থন করছেন।
সরকারের নীতি নির্ধারকরা সংলাপ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব তুলে ধরে জানান, নাশকতাকারীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আপস করবেন না। যদি দেশে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসে সে ক্ষেত্রে সংলাপের বিষয়টি ভাবা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, ‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই।’
সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘সংলাপের ব্যাপারে দলীয় সিদ্ধান্ত হল আগে নাশকতা বন্ধ করতে হবে তারপরে সংলাপের বিয়ষটি এগুতে পারে। এর আগে নয়।’
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘নাগরিক সমাজের সংলাপের প্রস্তাব অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য। পেট্রোলবোমা দিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যাকারীদের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে না। সন্ত্রাস, নাশকতা ও সন্ত্রাসী তৎপরতাকে আড়াল করতে এবং একটি গণতান্ত্রিক দলকে তাদের সঙ্গে একই কাতারে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছে তারা।’ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘দেশ পরিচালনার জন্য আমাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত সংবিধান আছে। এ সংবিধানের আলোকেই দেশ চলবে। এর বাইরে রাজনৈতিক সংলাপ হতে হলে সে দলের দেশের মুক্তিযুদ্ধকে স্বীকার করে তার চেতনা ধারণ করতে হবে, যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের পক্ষে থাকতে হবে, নিরীহ মানুষকে দগ্ধ করার দায় স্বীকার করে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। অবরোধ দিয়ে জনগণকে অবরুদ্ধ করার জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে হবে।’
সিলেট বিভাগের এক মন্ত্রী বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যদি বাংলার মাটিতে রাজনীতি করতে চান, তবে তাকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। যদি তিনি ক্ষমা না চান তবে আলোচনার কোনো প্রয়োজন মনে করি না। তিনি যদি ক্ষমা চান তবেই আলোচনা, তা না হলে কীসের আলোচনা?’
এর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া আয়োজিত ‘জাতীয় সঙ্কট নিরসনে জাতীয় সংলাপ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতীয় সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা।
তারা মনে করেন, আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও মানুষ হত্যা বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে সরকারকেও সংলাপের উদ্যোগ নিতে হবে। সংলাপের উদ্যোগ না নিলে এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে প্রাণহানি বৃদ্ধি পাবে। রাষ্ট্রপতিকে রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে জাতীয় সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান তারা। দ্য রিপোর্ট
মন্তব্য চালু নেই