বাংলাদেশকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়ন মালয়েশিয়া

ছুঁই ছুঁই করেও ছোঁয়া হয়নি। বিজলির মতো একটা চমক দিয়ে মিলিয়ে গেল অন্ধকারের গহীনে, দূর আকাশে। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন রয়ে গেছে অধরাই। মালয়েশিয়ার কাছে ৩-২ গোলে হেরে কেঁদেছেন মামুনুলরা। কেঁদেছেন বাংলাদেশের কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমী।

যদিও ২ গোলে পিছিয়ে পড়ে জয়ের আশাটা এক রকম ছেড়েই দিয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই পাল্টে গেছে বাংলাদেশ। মামুনুলদের অসাধারণ প্রত্যাবর্তনে আনন্দের জোয়ার বইয়ে দিয়েছে। অসম্ভবকে সম্ভব করে সমতা ফিরেছে ডি ক্রুইফের শিষ্যরা। স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছিল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের উপচেপড়া গ্যালারি। কিন্তু সেই আনন্দস্রোত ইনজুরি টাইমে হাওয়ায় মিলিয়ে দিয়েছেন মালয়েশিয়ার ফাইজাত। আচানক এক কর্নার, অবিশ্বাস্য এক হেডে উৎসবমঞ্চে এনে দিয়েছেন শ্মশানের নীরবতা।

ক্লান্তিটা যে লাল-সবুজ জার্সিধারীদের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে তা আগের দিন শনিবারই বোঝা গিয়েছে। সেমিফাইনালের পর মালয়েশিয়া দল ২ দিন সময় পেলেও বাংলাদেশ পেয়েছে মাত্র একদিন। এ নিয়ে কিছুটা শঙ্কা দলের কোচ ও অধিনায়কের মুখে শোনা গেছে। হাজার হাজার দর্শকের কথা চিন্তা করে হয়তো ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। স্বপ্ন-প্রত্যাশার মেলবন্ধন গড়তে নিজেদের উজাড় করে দিয়েছেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি বাংলাদেশের।

মালয়েশিয়া লাল দল প্রথম আসরে ১৯৯৬ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এবার অনূর্ধ্ব-২৩ দলও আবার মালয়েশিয়ায় উড়িয়ে নিয়েছে শিরোপা। আসরের প্রথম ম্যাচে হারার প্রতিশোধ নিতে জানবাজি করেও পারেনি বাংলাদেশের ফুটবলাররা।

শুরু এবং শেষটাই বাজে হল বাংলাদেশের জন্য। আগের দু’টি ম্যাচে যেমন দাপুটে শুরু করেন লোডভিক ডি ক্রুইফের শিষ্যরা। ফাইনালে ঠিক সেভাবে খেলতে পারেননি। শরীরী ভাষা দেখে কিছুটা হলেও ক্লান্ত মনে হয়েছে। যার খেসারত দিতে হয়েছে প্রথমার্ধেই।

খেলার ৩১ মিনিটে দারুণ গোল করে এগিয়ে নিয়েছে মালয়েশিয়ান অধিনায়ক নাজিরুল নাঈম। ডি বক্সের অনেকটা বাইরে থেকে ফ্রি কিকে সরাসরি বল জড়িয়েছেন বাংলাদেশের জালে (১-০)। দূরপাল্লার পাওয়ার শটটি গোলরক্ষক ঠিক বুঝে উঠতে পারেননি। বাংলাদেশ বলে-পাসে-নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে থাকালেও প্রথম গোলের ৯ মিনিটের মাথায় দ্বিতীয় গোলটি করেছেন অতিথি ফুটবলার কুমারান। স্রেফ পাল্টা আক্রমণে সাফওয়ানের পাস থেকে বল নিয়ে নিখুঁত নিশানায় পরাস্ত করেছেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক শহীদুল ইসলামকে (২-০)।

ঘুরে দাঁড়াতে খুব বেশী সময় অপেক্ষা করতে হয়নি বাংলাদেশকে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোল করেছেন এমিলি। খেলার ৪৮ মিনিটে রায়হানের লম্বা থ্রো থেকে নাসিরের প্রথম প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছেন মালয়েশিয়ার গোলরক্ষক ফারহান। তবে দ্বিতীয় ধাপে এমিলির লক্ষ্যভেদ আর ঠেকাতে পারেননি (১-২)।

খেলার ৫৪ মিনিটে সমতায় ফিরে বাংলাদেশ। অধিনায়ক মামুনুলের কর্নার কিক থেকে ইয়াসিন খান দর্শনীয় এক হেডে মালয়েশিয়ার জাল স্পর্শ করেছেন (২-২)। এরপর যেন আবারও আক্রমণের ধার কমে যায় বাংলাদেশের। পাল্টা আক্রমণে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকে মালয়েশিয়া।

চলছে ইনজুরি টাইমের খেলা। খেলা শেষ হতে তখনও বাকি ২ মিনিট। মালয়েশিয়ার সাফওয়ানের কর্নার কিক। এক সামনে চলে গিয়েছেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক। সেই সুযোগে পাওয়ার শটে আলতো করে মাথা ছুঁইয়ে বলের দিক পরিবর্তন বিজয়ের গোল করেছেন মোহাম্মদ ফাইজাত। সেই সুবাদে ম্যাচ সেরাও হয়েছেন তিনি। আর টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছেন বাংলাদেশের ডিফেন্ডার জামাল ভূঁইয়া।

ম্যাচে শেষে চ্যাম্পিয়ন মালয়েশিয়া ও রানার্স-আপ বাংলাদেশ দলের হাতে ট্রফি তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন— অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিয়ষক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় ও বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন আহমেদ।



মন্তব্য চালু নেই