দমবন্ধ পরিস্থিতি আর কত দিন?

দেশে দীর্ঘ একমাস ধরে চলছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল ও সহিংস পরিস্থিতি। প্রতিদিনই পেট্রল বোমার আঘাতে পুড়ে মরছে মানুষ। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাস-ট্রাক-লঞ্চ-ট্রেনসহ কোনো পরিবহনই আর নিরাপদ নয়। দেশবাসী ভুগছে চরম হতাশা ও আতঙ্কে। জনজীবনে বিরাজ করছে দমবন্ধ পরিস্থিতি।

এ অবস্থায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাব্যবস্থা, নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সব কিছুই ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। দেশ পিছিয়ে পড়ছে অর্থনীতিসহ সব দিক থেকেই।

সাধারণ মানুষ চাইছে এমন দমবন্ধ করা পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হতে। কিন্তু খুব শিগগিরই এমন পরিস্থিতি দূর হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বরং পরিস্থিতি যেন ক্রমশ খারাপ থেকে আরও খারাপের দিকেই যাচ্ছে।

বিভিন্ন রাজনৈতি কর্মসূচি আর সহিংস কর্মকাণ্ডে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ। স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৫ লাখ পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা পরীক্ষা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে প্রতিটি মুহূর্ত অতিবাহিত করছে।

অথচ দেশের এই বৃহত্তম পাবলিক পরীক্ষার সঙ্গে সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থা গভীরভাবে সম্পৃক্ত। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমের ক্ষেত্রও একই হাল। এ পরিস্থিতিতে এমন রাজনৈতিক অস্থিতিশীল অবস্থা ও দমবন্ধ করা পরিবেশ দূর করার দাবি সকল অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।

এদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা, হলতাল, অবরোধ ও সহিংস পরিস্থিতিতে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পথে বসার উপক্রম হয়েছে ২৫ লাখ ক্ষুদ্র দোকানির। বিদেশি ক্রেতারা রপ্তানির অর্ডার বাতিল করছে। স্থবিরতা শুরু হয়েছে নির্মাণ ও পর্যটন শিল্পেও।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছেন কৃষক। বোমা আতঙ্কে পরিবহনের অভাবে কৃষক বিক্রি করতে পারছেন না মৌসুমের উৎপাদিত ফসল ও সবজি । পরিবহন, বীমা, রাজস্ব আদায়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন, পর্যটন, মুদ্রণ শিল্পসহ সব খাতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কালো ছায়া পড়ছে।

পাইকারি বাজারগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ, রাজধানীর চকবাজার, মৌলভীবাজার, কৃষি মার্কেটে বিক্রি কমে গেছে। রাজধানীর মৌচাক মার্কেট, পলওয়েল সুপার মার্কেট, মালিবাগ সুপার মার্কেটের মতো অন্যান্য প্রায় সব মার্কেটেই বেচাকেনা কমে গেছে।

প্রতিনিয়তই মূলধন হারাচ্ছে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা। ঋণের অর্থ ফেরত না আসার আতঙ্কে উদ্বিগ্ন ব্যাংক ও আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলো। চলমান পরিস্থিতিতে গোটা দেশের অর্থনীতির চাকা থমকে দাঁড়িয়েছে।

কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী কিংবা চাকুরিজীবীসহ সকল শ্রেণির মানুষের দাবি দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দূর করার জন্য সমঝোতার পথ খুঁজে বের করা। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট কারও কাছ থেকেই মিলছে না সঠিক সমাধানের পথ। প্রত্যেকেই যার যার অবস্থানে গো ধরে আছেন।

সার্বিক বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘অতীতেও এরকম দমবন্ধ পরিস্থিতি ছিল। সেই সঙ্কটও সমাধান হয়েছে। তবে বর্তমান সঙ্কটময় পরিস্থিতি কখন শেষ হবে সেটা আমরা কেউ জানি না। এটা দুইজন নেত্রী ভাল জানেন। তারা যদি জনগণের স্বার্থেই রাজনীতি করেন, তাহলে এই সঙ্কট সমাধানে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এই দুই নেত্রীর উদ্যোগ ছাড়া সঙ্কট সমাধানের কোনো পথ নেই।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এরকম দমবন্ধ পরিস্থিতি যদি বেশি দিন চলতে থাকে তাহলে অরাজনৈতিক পক্ষের কাছে দেশের নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে। তখন রাজনীতিকদের হাতে আর নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। তখন যে কী হবে তা আমরা কেউ জানি না।’

জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার  জানান, ‘দমবন্ধ পরিস্থিতির শেষ আমরা জানি না। তবে আমরা এটা বলতে পারি- যেকোনো মূল্যে এই পরিস্থিতির অবসান দরকার।’ ঢাকা টাইমস



মন্তব্য চালু নেই