মসজিদ নির্মাণে মতামত

ভোরের আযানের সুমধুর ধ্বনি থেকে শেষ বিকেলের ইসলামের ডাক। এর মাঝেই আমাদের জীবন। এর মাঝে যে সময় আছে হয়তো তার থেকে সামান্য সময় আমরা দুনিয়াতে থাকি। আমি শুনতে পাই আযানের সে ডাক,আল্লাহ সর্বশক্তিমান, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নেই, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (স) আল্লাহর প্রেরিত দূত, নামাজের জন্য এসো, সাফল্যের জন্য এসো, ঘুম হতে নামাজ উত্তম, আল্লাহ্ মহান, আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই। মনে পড়ে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই কবিতা, “ মসজিদের পাশে আমার কবর দিও ভাই, গোড়ে থেকেও আমি যেনো মোয়াজ্জিমের আজান শুনতে পাই। “ শুনেছি দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ মানুষ শেষ নবী হযরত ‍মুহাম্মদ ( স: ) এর সে কথা, প্রখর রোদের মাঝে বিশাল মরুভূমিতে খেজুরপাতা দয়ে নামাজের স্থান তৈরী করছিলেন সাহাবীগণ। মহান সে নবী নিজে এসে কাজ করতে শুরু করে দিলেন। প্রাণ প্রিয় নবী, ভালোবাসার মানুষ, সত্যবাদী পুরুষ মহান মানুষ এটি করছেন জিজ্ঞেস করলেন হযরত আলী (আ: ) তাঁকে কাজ করতে না বললেন। উত্তরে বললেন, না আমিও কাজ করবো। কাজ সকলের জন্য সমান। কিন্তু সে কথা কি আমাদের মনে আছে? আমরা কি সত্যিই মন দিয়ে মনের মতো মসজিদ নির্মাণে এগিয়ে আসছি?

মসজিদ হলো মহান আল্লাতায়ালার কাছে ইবাদতের স্থান। সব পবিত্র স্থানে মনটা পবিত্র করে পাক পবিত্র পোশাকের ইবাদত করলে তা সৃষ্টিকর্তার কাছে গ্রহণ যোগ্য তবে মসজিদ হলো আল্লাহর ঘর। আর বলাই আছে কেউ সমজিদে ইমামের পেছনে নামাজ আদায় করলে বেশী সওয়াব পাওয়া যায়। তাছাড়াও মসজিদে কুরআন ও হাদিস নিয়ে আলোচনা করা হয় ফলে সৎ সত্য সুন্দর জীবনের পথে চলতে ইচ্ছে জাগে। তবে সমজিদ বা ইমাম সাহেব কাউকে জান্নাত দিতে পারবেন না তেমনি ভালো মানুষ বানাতেও পারবেন না, যতোদিন না ধর্মের মূল কথাটা মানুষ নিজের মাঝে আয়ত্ত করে আর নিজে বদলাতে চায়। তার একমাত্র উদাহরণ হলো আমাদের দেশে এতো মসজিদ আছে তা হলো আমাদের সৌভাগ্য। কিন্তু মসজিদের চার দেয়ালের বাইরে ঘুষ, চুরি, হত্যা, ছিনটাই, নীতি কথার আলালে লালসা, নির্যাতন চলছেই। মসজিদ হলো মানবে জাতির জন্য শ্রেণীর যে ঘরের ছাত্র আমরা নিজে। কিন্তু ঘরের জ্ঞান বাইরে আসতে ভূলে যাই। আসলে সমাজ গঠনে মসজিদের ভূমিকা অতূলনীয়। কেননা, পিতা মাতার প্রতি যে শ্রদ্ধা নিবেদন সন্তানদের জন্য বধ্যতামূলক তার বিস্তারিত কথা একমাত্র সমসজিদেই নামাজের আগে বা জুম্মাবারে বলা হয়। সন্তানের প্রতি পমা-মাতার যে দায়িত্ব তাও এখানেই বিস্তারিত শেখানো হয়। তাছাড়া আরো আছে, বড়ো হলে সমাজের প্রতি দায়িত্ব, দেম প্রেম, বিবাহ, ন্যায অন্যায়—সব কিছুর বস্তারত আলোচনার একমাত্র ঠিকানা মসজিদ।

তাছাড়া, এমন কোন স্কুল নাই যে প্রতি নিয়ত ইসরামের কথা আলোচনা করা হবে। যদিও হয় তা হবে বিশেষ নিয়মে পাশ করার জন্য সিলেবাসের আলোকে আলোচনা। আর যেহেতু ঐ কোরআন ও হাদীসের আলোর পথের সন্ধান আমদের প্রয়োজন তাই মসজিদের কোন বিকল্প নাই। এখন আশা যাক নির্মাণ নিয়ে। যার সামর্থ্য আছে সে তাঁর জায়গা ইসলামের জন্য দেবে, যার নির্মাণের জ্ঞান আছে সে তার মেধা দিয়ে কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। আর যার দুটোই আছে তাকে আমি বেশী ভাগ্যবান বা বতী বলি তার কারন আলাদা ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নাই। তবে যদি এমন হয় যে, কোন ব্যক্তি খুব ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন মৃত্যূর পূর্বে একটি মসজিদ নির্মাণ করে যাবেন, তাঁর মৃত্যূর পড়ে সাই তাঁকে স্বরণ করবে দোয়া করবে। জায়গা নির্ধারণ করা হলো কিন্তু কাজ শুরু করতে পারছেন না। সে কি আশা ছেড়ে দেবেন? কারন স্বাভাবিক যে নকশা করে দেবেন সে যদি বিবেচনায় না করেন যে এটি মসইজদ, তাহলে তো ভালো মানের দাোন হবে না।

তবে কি মন খারাপ করে থাকবেন? আমি জন্মের আগে এমনটি হয়েছিলো কিনা জানিনা, বা আমার মৃত্যূর পরে এমনটি হবে কিনা তাও বলা মুসকিল। তবে আার জীবনকালে এমটি হলে এবং তা আার কানে এলে আম কি করবো তা জানি। কি করবো? নিজের মেধা. জ্ঞান দিয়ে সে মসজিদের জন্য নকশা করে দেবো যেনো কাজ শুরু হয়। আল্লাহর কোন কাজই পড়ে থাকবে না। তা যদি একবার শুরু হয় তাহলে আর থেমে থাকবে না। হ্যা, আমি আবার জোর দিয়ে বলছি। আমি প্রকৌশলী মীর্জা, সবাইকে জানাচ্ছিযে , কোন জায়গাতে কেউ মসজিদ বানাবেন ভাবছেন কিন্তু অর্থের অভাবে সকশার জন্য কাজ করতে পারছেন না, আমি নিজে সে নকশা করে দেবো যতো টুকুন আমার জ্ঞানে করা যায়্ এটি কোন মানুষের জন্য নয়, ইসলামের প্রতি আমার প্রতিজ্ঞা, আমার দাদার স্বপ্ন আমি হতে চাই আমার বাবার গর্ভিত ছেলে।

শুধু মসজিদের সংখ্যা বাড়লে চলবে না, নিয়মিতো মন থেকে যেতে হবে। লোক দেখানো নামাজ পড়লে হয়তো সাময়িক ভাবে সমাজে মুখ চেনানো যায় তবে মূলত নিজের কোন উস্সতি হবে না বরং আগুনে যেমন কাগজ পুড়ে যায় তেমনি নিজের জীবনটাও শেষ হয়ে যাবে। মসজিদ সবথেকে শান্তির জায়গা, প্রশান্তির জায়গা। আমি যেনো সমজিদ নির্মাণে নিজের মেধা দিয়ে এগিয়ে আসতে পারি সকলেই সে দোয়া করি। আসুন প্রতিজ্ঞা করি, অর্থের অভাবে যদি কোন মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করতে সম্যা হয়, কিন্তু সেখানে তা অনেক জরুরী তাহলে যেনো নিজেদের মেধা দয়ে বিনা পারিশ্রমিকে তার কাজটা এগিয়ে নিতে পারি।

 

( লেখক পরিচিতি: প্রকৌশলী মীর্জা শামীম হাসান ২০১২ তে বি.এসসি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে উত্তীর্ন হন। তিনি নির্মাণের স্ট্রাকচার এবং ট্রান্সপোর্টে থিসিস করেন। পরের বছর সিলেকশনের মাধ্যমে ইঞ্জিনিয়ারস ইস্টিটিউশন , বাংলাদেশ ( আই.ই.বি) –এ সদস্য সম্মান লাভ করেন।



মন্তব্য চালু নেই