পুড়ে যাওয়া মুখগুলো রাজনীতিকরা দেখেন কি?
যানবাহনে পেট্রোল বোমায় ধরে যাওয়া আগুনে পুড়ে নিহত ও আহতের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আগুনে পুড়ে যারা মারা গেছেন তারাতো গেছেনই; কিন্তু যারা ঝলসে যাওয়া শরীর নিয়ে হাসপাতালে অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তাদের দেখেও চোখের পানি ধরে রাখা কঠিন। আগুনে পুড়ে যাওয়া মানুষেরা যেমন সীমাহীন বেদনায় কাতরাচ্ছেন তেমনি তাদের ক্ষতগুলো সাধারণ মানুষের অন্তরকেও পুড়িয়ে দিচ্ছে। মানুষ হিসেবে মানুষের এ অসহায় আর যন্ত্রণাদায়ক অবস্থা মেনে নেওয়া আসলেই সম্ভব নয়।
পুড়ে নিহত মানুষদের পরিবারে কি দুর্দশা আর বেদনার সূত্রপাত ঘটেছে তা কি একটু ভাবা যায় না! ঝলসে যাওয়া শিশুটি বেঁচে থাকলেও তার ভবিষ্যত যে পুরোটাই শেষ তা ভাবার কি সুযোগ নেই! দগ্ধ বোনটির ভবিষ্যত পুরোপুরি অন্ধকারে নিক্ষেপ করে লাভ কি! দগ্ধ পিতার পরিবারে যে অন্ধকারের অমানিশা নেমে এসেছে তা কীভাবে মেনে নেওয়া যায়?
বাংলাদেশের রাজনীতির পাশবিক এ রূপ নতুন নয়। মানুষ পোড়ানোর রাজনীতি বিগত ৪ দলীয় জোটের আমলে সরকার বিরোধী আন্দলনের সময়েও ঘটেছে অনেক। সে সময় কারা পেট্রল বোমা ছুঁড়েছে আর এখন কারা ছুঁড়ছে তার প্রকৃত তথ্য হয়তো রাজনীতিবিদরাই জানেন। পেট্রল বোমা ছোড়া মানুষ নামের পশুটিকে সব সময় আমরা দেখি না, তার সঠিক রাজনৈতিক পরিচয়ও সাধারণ জনগণের নির্নয় করা সম্ভব নয়। কিন্তু সাধারণ একজন মানুষ হিসেবে যেটা বলা যায় সেটা হলো পেট্রোল বোমার আগুনেই পুড়ে মরছি আমরা। মরছে আমাদেরই কারো মা, বাবা, ছোট্ট ভাই অথবা আদরের বোনটি। দিনের পর দিন পুড়ে যাওয়া আদম সন্তানের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
গত ২০ দিনেরও বেশি সময় ধরে দেশে অস্থিরতা চলছে। সরকার বিরোধীদের আক্রমনাত্মক অনড় অবস্থান আর সরকারের দমন-পীড়নে আতঙ্কের মধ্যে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউই ঘরের বাইরে নামছেন না, বিশেষ করে শহরগুলোতে। কিন্তু মানুষের বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম কিছু প্রয়োজনতো মেটাতেই হয়। তাছাড়া শহরে থাকা মানুষের অধিকাংশইতো দিনমজুর অথবা চাকুরিজীবী। এছাড়া রয়েছে বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থী। ফলে চাকুরি বাঁচানো, বেঁচে থাকার জন্য কিছু হলেও আয় করা, পরীক্ষাসহ অন্য মৌলিক শিক্ষাকার্যক্রম আর মৌলিক প্রয়োজনের জন্য হলেও অনেক মানুষকে রাস্তায় নামতেই হয়, চড়তে হয় বাস বা অন্য যানবাহনে। কিন্তু নিরুপায় এ মানুষগুলোর ওপরেই হচ্ছে পাশবিক পেট্রোলবোমা হামলা। পুড়ছে সাধারণ মানুষের দেহ, স্বপ্ন, সংসার আর ভবিষ্যত।
পুড়ে যাওয়া মানুষগুলোর প্রতি সমবেদনাও জানানো হচ্ছে সরকার ও বিরোধীদের পক্ষ থেকে। কিন্তু তাতে কী বন্ধ হচ্ছে এ পাশবিকতা! গত শুক্রবারেই পুড়েছে ৪০ জন। রাজনীতিবিদরা কী দেখেন না পোড়া মানুষগুলোর বিকৃত চেহারাগুলো? অসহায় মানুষগুলোর করুণ চেহারাগুলোকে একটুও দাগ কাটেনা তাদের মনে!
ক্ষমতার লড়াইয়ে অসহায় জনগণের কোন স্বার্থ নেই। তাঁরা আপনাদের কাছে কিছুই চান না। তাঁরা শুধু চান একটু শান্তিতে দু’মুঠো ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতে। তাই জনগণকে একটু নিরাপদে বাঁচতে দিন। জনগণকে নিয়ে একটু ভাবুন। দোহাই আপনাদের, ক্ষমতায় যাওয়া বা ক্ষমতা ছাড়ার নিয়মতান্ত্রিক প্র্রক্রিয়া অবলম্বন করুন। ব্যক্তি বা দলের স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে দেশ নিয়ে একটু ভাবুন। যে কোন সমস্যার যোক্তিক সমাধানে এগিয়ে আসুন। সমস্যা সমাধানে সংলাপ, সমঝোতার পন্থা অনুসরণ করুন। বাংলাদেশের অভাগা মানুষদের একটু বাঁচতে দিন, দোহাই আপনাদের।
লেখক: পিএইচডি গবেষক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ব্লাক সি টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, ট্রাবজোন, টার্কি। সাবেক শিক্ষার্থী, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। Email: [email protected]
মন্তব্য চালু নেই