হুদার নেতৃত্বে ২৫ দলের নতুন জোট
আলোচনা ছাড়া দুই নেত্রীর রেহাই নেই
মধ্যবর্তী নির্বাচন ছাড়া এই জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি থেকে দেশকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। তাই সংসদে আইন প্রণয়ন করে অথবা প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করে হলেও অবাধ-নিরপেক্ষ মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে হবে বলে মত দিয়েছেন সদ্য গঠিত বাংলাদেশ জাতীয় জোটের (বিএনএ) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান দেশের রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। আর আলোচনা ছাড়া প্রধান দুই নেত্রীর রেহাই নেই।’
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয় জোটের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মতামত ব্যক্ত করেন।
২৫ দলের সমন্বয়ে বাংলাদেশ জাতীয় জোটের ঘোষণা এবং জোটের পক্ষে ইশতেহার পাঠ করেন নবগঠিত এই জোটের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা।
নাজমুল হুদা বলেন, ‘দেশে যে রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে তাতে মধ্যবর্তী নির্বাচন জরুরি হয়ে পড়েছে। আর নির্বাচনের জন্য শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে শিগগিরই আলোচনায় বসতে হবে। অন্যথায় তাদের একগুঁয়েমির কারণে দেশের জনগণের জানমালের যে ক্ষতি হচ্ছে তার দায় তাদেরকে নিতে হবে। নইলে এই জাতীয় জোট জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদেরকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে বাধ্য হবে।’
দেশের প্রধান দুই দলের নেত্রীর উদ্দেশে হুদা বলেন, ‘দেশের জনগণের কথা চিন্তা করে জ্বালাও পোড়াও, খুন-গুম, হত্যা এসব বন্ধ করে অবিলম্বে জাতিসংঘের সহায়তায় আলোচনার সূত্রপাত করুন।’
বর্তমান প্রেক্ষাপটে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোনো নির্বাচনই অর্থবহ হবে না, যদি নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন না করে। তবে বিএনএ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে কাজ করবে।’
নাজমুল হুদা ২৫ দলের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ জাতীয় জোটের ইশতাহারে বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রয়াত পাঁচ জাতীয় নেতা শের-ই-বাংলা একে ফজলুল হক, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও স্বাধীনতার ঘোষক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের প্রতি সর্বদা শ্রদ্ধাশীল থাকবো এবং তাদের মর্যাদা ও সম্মান অক্ষুণ্ণ রাখতে তাদের কারো প্রতি অসম্মান সূচক আচরণ, কটূক্তি, বিদ্রুপ, কটাক্ষ কিংবা কৌতুক কঠোরভাবে প্রতিহত করবো।’
আরো বলেন, ‘আমরা দেশের সুস্থ রাজনীতির মাধ্যমে দেশে সুশাসন নিশ্চিত করতে বিরাজমান মুখোমুখি, পাল্টাপাল্টি, প্রতিহিংসাপরায়ন সাংঘর্ষিক ও সংঘাতপূর্ণ অপরাজনীতির অবসান ঘটাবো। আমরা আমাদের ইস্পাতকঠিন ঐক্যের মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন সমুন্নত রাখবো এবং আমাদের পবিত্র সংবিধানে সংরক্ষিত মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি মানবাধিকার সম্মত রাষ্ট্রে পরিণত করবো।’
‘আমরা বাংলাদেশের জনগণের পাঁচটি মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের যথাযথ সংস্থানের লক্ষ্যে আমাদের নিরলস প্রচেষ্টা অব্যহত রাখবো। দেশকে সন্ত্রাস ও দুর্নীতি মুক্ত করবো। দলীয় অনুকরণের অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করবো। প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ রাখবো। আমরা দেশকে স্বৈরাচার মুক্ত রাখবো এবং জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে দেশে স্থায়ীভবে এমন একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করবো। যে নির্বাচনের রায়ে জনগণের সঠিক ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর মাধ্যমে দেশের সত্যিকার অর্থে একটি জবাবদিহিমূলক জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং জনপ্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র সুসংহত হবে।’ জোটের ইশতেহারে বলা হয়।
আরো বলা হয়, ‘আমরা দেশের আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দেখতে চাই এবং রাজনীতির কারণে আইনের গতি রুদ্ধ হোক সেটা আমরা সহ্য করবো না। হত্যা, খুন-গুম, জ্বালাও-পোড়াও, গাড়ি ভাঙচুর, মারামারি ইত্যাদি আইনের চোখে দণ্ডনীয় অপরাধ এবং কোনো অপরাধীকে এ সমস্ত অপরাধের দায় থেকে রাজনীতির অজুহাতে মুক্ত হতে দেবো না।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জোটভুক্ত ২৫ দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
মন্তব্য চালু নেই