মেসি ৪ রোনাল্ডো ৩

ব্যালন ডি’অর সাত বছরেও রোনাল্ডো-মেসির গ্রহ থেকে বেরোতে পারল না!

সিআর সেভেন আর এলএম টেন-এর বাইরে শেষ বার ফিফা বর্ষসেরার হওয়ার সুযোগ ঘটেছিল কাকা-র। তার পর সোনার বল হয় রোনাল্ডো, নয় মেসির। ২০০৮ থেকে সেই ট্র্যাডিশন চলছে!

সে জন্যই কি তিন নম্বর ব্যালন ডি’অর পেয়ে ব্রাজিলের রোনাল্ডো এবং জিদানকে ছুঁয়ে মহাপ্রতিদ্বন্দ্বী মেসির (চার বার) মাত্র এক কদম পিছনে চলে আসার মুহূর্তেও ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো অত স্বাভাবিক? সোমবার রাতে জুরিখের কনগ্রাসহস এরিনায় যে মুহূর্তে ব্যালন ডি’অরের তিন চূড়ান্ত মনোনীতের পরিচয়পর্ব সংক্ষেপে সারছেন চার-পাঁচটা বিভিন্ন ভাষায় সাবলীল সুবেশী তরুণী অ্যাঙ্কর, টিভিতে রোনাল্ডোর দুই ‘প্রতিপক্ষে’র মুখ টেনশনাক্রান্ত গম্ভীর। লিও মেসি আর ম্যানুয়েল ন্যয়ারের পাশে বসা রোনাল্ডো তখন চুলটা হালকা হাতে ঠিক করে নিচ্ছেন! যেন জানাই আছে পরের সেকেন্ডে তাঁকে চেয়ার ছেড়ে উঠে মঞ্চের দিকে এগোতে হবে!

মেসির টানা পঞ্চম বার এই গ্রহের সেরা ফুটবলার হওয়া আটকানোর পর গত বার পেলের হাত থেকে ব্যালন ডি’অর নেওয়ার সময় রোনাল্ডো কেঁদে ফেলেছিলেন। আজ থিয়েরি অঁরির থেকে নিয়ে ‘জুউউউ…’ বলে চিত্‌কার করে উঠলেন রিয়াল মাদ্রিদের মহাতারকা।

ছেলে ক্রিশ্চিয়ানো জুনিয়র-এর হাতে গত বারের মতোই মঞ্চে বাবার পুরস্কার হস্তান্তরিত হল। কিন্তু ছেলের মা কোথায়? রোনাল্ডোর বিখ্যাত বান্ধবী ইরিনা শায়েককে এ বার ব্যালন ডি’অর অনুষ্ঠানে দেখাই গেল না। বরং রোনাল্ডো এসেছিলেন তাঁর মা এবং পরিবারের আরও কয়েক জনকে নিয়ে। টানা দ্বিতীয় বার ব্যালন ডি’অর জেতার পর ছেলের মায়ের বুকে ধরা দেওয়াটাই বলতে গেলে আবেগের একমাত্র ফ্রেম!

মেসি-নয়্যারও কি ধরে নিয়েছিলেন বার্সেলোনা আর দোহা থেকে প্রাইভেট জেটে উড়ে এসে অনুষ্ঠানের দর্শক হয়েই থাকতে হবে? গত বার মেসির মুখ কঠিন হয়ে গিয়েছিল রোনাল্ডোর নাম ঘোষণার মুহূর্তে। রিবেরির তো প্রায় কেঁদে ফেলার জোগাড় হয়েছিল। এ বারও মেসি অনেকটা গত বারের মতোই উজ্জ্বল মেরুন স্যুটে বান্ধবী আন্তোনেলা রকুজ্জো-কে নিয়ে এসেছিলেন। ‘অপয়া’ ড্রেস পরতে গিয়েও হয়তো ভাবেননি। রোনাল্ডো যে পাচ্ছেন সেটা ধরেই রেখেছিলেন বলেই কি অনুষ্ঠানের প্রাক মুহূর্তে সাংবাদিক সম্মেলনে মহাপ্রতিপক্ষের পাশে বলেই বলে দিয়েছিলেন, “ক্রিশ্চিয়ানো ২০১৪-এ যা করেছে অসাধারণ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছে। প্রচুর ভাল ভাল গোল করেছে।”

আর ন্যয়ার? তাঁর ক্লাব (বায়ার্ন মিউনিখ) কোচ গুয়ার্দিওলা তো আগেই বলে রেখেছিলেন, “ম্যানুয়েল ইতিমধ্যেই জিতে বসে আছে। ব্যালন ডি’অরের জন্য চূড়ান্ত মনোনীত হওয়াটাই বিরাট সম্মান। গত বার রিবেরিকে যা বলেছিলাম, ন্যয়ারকেও তাই বলেছি। যাও, গিয়ে গোটা অনুষ্ঠানটা উপভোগ করো। পুরস্কার পেলে ভাল, না পেলেও ভাল।”

তিন মহাতারার ২০১৪-র পারফরম্যান্স-সিভি বিচার করলে অবশ্য ন্যয়ারেরটা সবচেয়ে ঝলমলে। দেশের হয়ে বিশ্বকাপ, ক্লাবের হয়ে জার্মান ‘ডাবল’। ৫৬ শতাংশ ম্যাচে ক্লিনশিট। ব্যালন ডি’অর পেলে ফুটবলের অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় পর প্রথম গোলকিপার হিসেবে রেকর্ড করতেন।

দুর্ভাগ্য নয়্যারের, কর্ণ আর অর্জুনের মধ্যে যে বৈষম্য বরাবর থাকে, তাঁর আর ক্রিশ্চিয়ানোর মধ্যে ঠিক সেটাই থেকে গেল ফুটবলের অস্কার রাতে। ফুটবলবিশ্বের ‘অর্জুন’ প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলেন, আরও অনেক যুদ্ধ জিতবেন, আরও অনেক ট্রফি পাবেন, তার জন্য প্রাণপাত করতে দু’বার ভাববেন না!

 



মন্তব্য চালু নেই