দাম্পত্যে সঙ্কট? জেনে নিন কী করবেন
সুখ এবং সঙ্কট দাম্পত্যের দুই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সুখ সবার সাথে ভাগ করে নিতে আনন্দ। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্কট সহজে কি মুখ ফুটে বলা যায়? ঝগড়া, অশান্তি, কথা বন্ধের মতো ছোট ছোট ঘটনা দাম্পত্যের সাথে এত নিবিড়ভাবে জড়িত যে, এদের বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করা সত্যিই কঠিন। কিন্তু এই ছোটবড় অশান্তি এড়াবার কি কোনো উপায় নেই? উপায় বের করতে হবে আপনাকেই। রইল কিছু পরামর্শ।
আলোচনা করুন
যখনই টের পেতে শুরু করবেন যে আপনার দাম্পত্যে অশান্তি করছে, তখন কান্নাকাটি বা দোষারোপ না করে নিজেকে একটু সময় দিন। ঠান্ডা মাথায় সমস্যাটা নিয়ে ভাবুন। কী কারণে সমস্যাগুলো হচ্ছে সেটা খুঁজে বের করুন। নিজের কোনো দোষ থাকলে তা এড়িয়ে যাবেন না। নিজের মনে সমস্যার একটা খসড়া তালিকা বানিয়ে স্বামী বা স্ত্রীর সাথে আলোচনায় বসুন। বাড়িতে না বসে এমন কোনো জায়গায় যান যেখানে সহজে কেউ বিরক্ত করবে না। নিজের দোষ মেনে নিয়ে তার কাছ থেকে সম্পর্ক নতুন করে গড়ে তোলার ব্যাপারে সাহায্য চান। খুব স্বাভাবিক, আন্তরিকভাবে নিজের ভুল স্বীকার করলে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।
যোগাযোগ বাড়ান
সব সিদ্ধান্ত নিজে না নিয়ে প্রত্যেকটি ব্যাপারেই তার মতামত নিন। বাচ্চার পরীক্ষার রেজাল্ট, ডিনারের মেনু, সেভিংস – সবকিছুর জন্য কোনোরকম বাহানা না করে সময় দাবি করুন। একসাথে কাজ করলে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া দৃঢ় হবে।
একান্ত সময় কাটান
যত কাজই থাকুক না কেন নিজেদের জন্য একটা ‘পার্সোনাল টাইম’ অবশ্যই রাখবেন। অফিস থেকে ফিরে বিশ্রাম করতে করতে আলোচনা করুন দিনটা কে কেমন কাটালেন। অকারণে সঙ্গীকে নিয়ে ঠাট্টামশকরা করা, খোঁচা দিয়ে কথা বলা, পুরোনো ভুলের পুনরাবৃত্তি – এই সময়ে করবেন না। বরং কথাবার্তা যতটা সম্ভব হালকা এবং আনন্দায়ক রাখার চেষ্টা করুন। সপ্তাহের মাঝখানে এক দিন কোনো কারণ ছাড়াই ছোট্ট একটা উপহার দিন স্বামী বা স্ত্রীকে। দেখবেন সম্পর্কে লক্ষণীয় উন্নতি ঘটবে।
নিজের আলাদা জগত্ তৈরি করুন
স্বামী বা স্ত্রীকে খানিকটা স্পেস দেয়া সুস্থ সম্পর্কের লক্ষণ। সব সময় আঁকড়ে ধরে থাকাটা যেমন অসহ্য, ঠিক তেমনি উদ্বেগজনকভাবে পুরোপুরি উদাসীন হয়ে যাওয়াটাও। তাই নিজেদের কাজের ক্ষেত্রের দিকে বিশেষ নজর দিন। কর্মক্ষেত্র বা বাড়ির কাজের বাইরে নিজস্ব জগত্ তৈরি করে নিন। এতে হয়তো অভাববোধ কমবে না কিন্তু সময়টা ভালো কাটবে।
শারীরিক দূরত্ব দূর করুন
দাম্পত্য পুরোনো হওয়ার সাথে সাথে বেশির ভাগ দম্পতির যৌনজীবনে ভাঁটা পড়তে শুরু করে। এর ফলে অনেকেই পুরোনো সম্পর্কে উত্সাহ হারান। ছেলেমেয়ে বড় হচ্ছে বলে অকারণে নিজেদের গুটিয়ে নেয়া একটি প্রগৈতিহাসিক ধারণা। আসলে বাবা-মায়ের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক থাকলে বাচ্চারাও অনেকটা নিরাপদ বোধ করে। কোনো কারণ ছাড়াই হাত ধরে হাঁটা, অকারণে আলিঙ্গন করা, পুরোনো আদরের জায়গা একান্তে ছুঁয়ে দেয়া সম্পর্কে স্পার্ক ফিরিয়ে আনবে।
আত্মসমীক্ষা
যদি মনে হয় সন্দেহই আপনার সম্পর্কে ঘুণ ধরাচ্ছে তাহলে আত্মসমীক্ষার অত্যন্ত প্রয়োজন রয়েছে। সত্যিই কি আপনার স্বামী বা স্ত্রীর কোনো দোষ আছে না কি আপনার মনে জমে থাকা কোনো ক্ষোভ সম্পর্কটা জটিল করে তুলছে। অনেক সময় হেরে যাওয়া বা জনপ্রিয়তা হারাবার ভয় থেকেও ঈর্ষা জন্ম নেয়। নিজের কাছে সত্ থেকে ভাবনাচিন্তা কাটাছেঁড়া করলেই কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল সহজেই বুঝতে পারবেন।
বেড়াতে যান
বছরের মধ্যে কোনো একটি লম্বা ছুটিতে স্বামী বা স্ত্রীর সাথে দূরে কোথাও বেড়াতে যান। যেখানে আপনাদের প্রথম দেখা হয়েছিল যেতে পারেন সেই জায়গায়। সাংসারিক চিন্তাভাবনা ভুলে গিয়ে আগের মতো দুজনে আড্ডা দিন। কথায় কথায় গল্পচ্ছলে নিজের মধ্যে চেপে রাখা কষ্টগুলো তাকে জানান। বুঝিয়ে বলুন আপনি ঠিক কীভাবে তাকে পেতে চান। ধীরে ধীরে আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে দূরত্বটা কমিয়ে আনার চেষ্টা করুন।
জোর করবেন না বা সব মেনে নেবেন না
সম্পর্কের প্রথম ধাপ থেকেই শুধুমাত্র সঙ্গীকে খুশি করার জন্য নিজের ইচ্ছা বা পছন্দ চাপা দিয়ে রাখবেন না। আবার নিজের পছন্দও জোর করে সঙ্গীর ওপর চাপিয়ে দেবেন না। ভালোবাসার প্রথভ শর্তই হলো একজন মানুষকে তার দোষগুণসহ ভালোবাসা। না হয় নাই বা মিলল তার সাথে সব পছন্দ-অপছন্দ।
মন্তব্য চালু নেই