‘মিলিয়ন ম্যান শো’ ফ্লপের খেসারত দিতে হচ্ছে বাবলুকে

‘মিলিয়ন ম্যান শো’ ফ্লপ করায় বেজায় চটেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
এই ব্যর্থতার দায় নিয়ে মহাসচিব পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হচ্ছে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে। এনিয়ে পর্দার অন্তরালে খেলা শুরু হয়েছে। জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে সরিয়ে দিয়ে তার স্থলে এরশাদ আস্থাভাজনকে বসাতে চাচ্ছেন। এজন্য একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চেয়ারম্যানের বিশেষ উপদেষ্টার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। শিগগির এই রদবদল হতে যাচ্ছে বলে জাতীয় পার্টির কয়েকটি সূত্র আভাস দিয়েছে।

তবে বিষয়টি একেবারেই উড়িয়ে দিয়ে পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া বলেছেন, ‘বাবলু ভাই মহাসচিব আছেন, তিনিই থাকবেন।’

জাপা সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাত সোয়া দশটার ফ্লাইটে চিকিৎসার অজুহাতে বাবলুকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে। এসময় বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ দলের কয়েকজন সাংসদ এবং নেতা। পার্টির ইতিহাসে এই প্রথম মহাসচিবকে বিদেশে পাঠানোর জন্য এরশাদ নিজেই বিমানবন্দরে গেলেন।

বাবলুকে বিদেশ পাঠানোর নেপথ্যে কি কারণ থাকতে পারে জানতে চাইলে পার্টির একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, ‘গত ১ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ‘মিলিয়ন ম্যান শো’ সফল করার দায়িত্ব ছিল মহাসচিবের। কিন্তু তিনি ১০ লাখ লোকের সমাবেশ ঘটাতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।’

ওই মহাসমাবেশে কতো লোকের সমাগম ঘটেছিল সে ব্যাপারে গত সোমবার রাতে একটি গোয়েন্দা রিপোর্ট এরশাদের হাতে এসে পৌঁছলে তিনি বেশ ক্ষুব্ধ হন। এতে বলা হয়, ১০ হাজার লোকও হয়নি সমাবেশে। জাপার কেন্দ্রীয় সম্মেলন সম্পন্ন করতে না পারায় এমননিতেই বাবলুর ওপর নাখোশ ছিলেন এরশাদ। তার ওপর মহাসমাবেশে লোক সমাগমে ব্যর্থ হওয়ায় এরশাদ তাকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

জাপার একটি সূত্র জানায়, এরশাদ অনেক আশা করেই রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে পার্টির মহাসচিব করেছিলেন বাবলুকে। কিন্তু এক বছর হলেও বাবলু তার যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারেননি। ফলে এরশাদ তাকে কৌশলেই বিদেশে পাঠিয়েছেন।

এ বিষয়ে পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, ‘তিনি (বাবলু) চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে গেছেন। সেখানে পাঁচ থেকে সাতদিন অবস্থান করবেন। চেকআপ শেষ করেই করিয়ে তিনি দেশে ফিরবেন।’

সূত্র জানায়, বাবলুকে সরিয়ে দ্রুত নতুন কাউকে মহাসচিব করা হচ্ছে। এজন্য তিনজনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে এরশাদের কাছে। তারা হচ্ছেন চেয়ারম্যানের ভাই সাবেক মন্ত্রী জিএম কাদের, সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ ও চেয়ারম্যানের বিশেষ উপদেষ্টা ববি হাজ্জাজ। এর মধ্যে জিএম কাদের কোনোভাবেই দলের দায়িত্ব নিতে চান না। তাই বাবলুর স্থলে কাজী ফিরোজ রশীদ অথবা এরশাদের উপদেষ্টা ববি হাজ্জাজকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করা হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।

জাপার একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চেয়ারম্যানের একান্ত ও বিশ্বস্ত ব্যক্তি হলেন তার উপদেষ্টা ববি হাজ্জাজ। তাকেই পার্টির মহাসচিব করতে চান এরশাদ। জাপার বিপদকালে এরশাদের পাশে থেকেছেন ববি হাজ্জাজ। তিনি বলেন, এর জন্য একটু সময় দরকার।

এ ব্যাপারে ববি হাজ্জাজ ও কাজী ফিরোজ রশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা উভয়ই বিষয়টি ‘জানেন না’ বলে জানান।

পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রেজাউল বলেন, তিনি (বাবলু) যেহেতু বিদেশে গেছেন, তাই যে কয়দিন সেখানে অবস্থান করবেন সেই কয়দিন গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।’

মহাসচিব বাবলু গত ৩ জানুয়ারি চট্টগ্রামে তার বাসায় বিকেলে হঠাৎ করেই ‘মাইল্ড স্ট্রোকে’ আক্রান্ত হন। তাকে তাৎক্ষণিক সেখানকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় পার্টির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে উনি খুব পরিশ্রম করেছেন। এ কারণে হয়ত অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তিনি।



মন্তব্য চালু নেই