গুলশানে তালা নাটক

সোমবার দুপুর ১২টা। হঠাৎ করে কোনো এক গণমাধ্যম কর্মীর মুঠোফোন বেজে উঠলো। ভেতর থেকে আসা কলটি ধরতেই অপরপ্রান্ত থেকে বলা হলো ম্যাডাম বের হচ্ছেন। দ্রুত মুঠোফোনের কল কেটে লাইভ টিভি ক্যামেরা অন করলেন ওই সংবাদকর্মী। সঙ্গে সঙ্গে নড়েচড়ে বসলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয় ফটকের বাইরে অবস্থানরত অন্যসব গণমাধ্যমকর্মীরাও।

খালেদা জিয়া বের হচ্ছেন এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই মূল ফটকের কাটা অংশের সামনে দাঁড়িয়ে যান তিন নারী পুলিশ। কিন্তু তারা তাকিয়ে ছিলেন রাস্তার দিকে।

এর কিছুক্ষণের মধ্যে এক নারী পুলিশ রাস্তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকার পর দু’হাত পেছনে নিয়েই চেয়ারপারসন কার্যালয়ের মূল ফটকে দ্রুত একটি তালা লাগিয়ে দেন। দেখে মনে হয়, যেন তিনি কিছুই জানেন না। ওইসময় তাকে আড়াল করে রাখেন পাশের দুই নারী পুলিশ সদস্য।

অল্প সময়ের মধ্যেই আটকে দেয়া হয় পাশের পকেট দরজা ও উত্তর পাশের জরুরি ফটকটিও। এভাবেই তালাবদ্ধ হয়ে পড়েন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

তালাবদ্ধ হয়ে পড়ায় উত্তর পাশের গ্রিল টপকেই ওইদির দুপুর ২টার দিকে চেয়ারপারসন কার্যালয়ের ভেতরে পাঠানো হয় বাইরে থেকে আনা দুপুরের খাবার।

বাইরে থেকে প্রতিটি ফটক তালাবদ্ধ থাকা অবস্থাতেই বিকেলে ৩টা ৪৮ মিনিটে ওই ভবনের দোতলা থেকে নিচে নেমে আসেন খালেদা জিয়া। এসময় বিএনপি চেয়ারপারসন রাস্তায় বের হওয়ার জন্য তার গাড়িতে ওঠেন। মূল ফটক বন্ধ থাকার কারণে গাড়িটি ১০ ফুটের মতো এগুনোর পর থেমে যায়। তখন বাইরে থাকা পুলিশকে মূল ফটক খুলে দিতে অনুরোধ করেন দলীয় নেতারা। কিন্তু পুলিশের সাফ জবাব, চেয়ারপারসনের নিরাপত্তার জন্যই তাকে বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না।

তখনও ফটকের বাইরে স্তরে স্তরে সারিবদ্ধভাবে পুলিশ সদস্যরা দাঁড়িয়ে ছিলেন। আর প্রধান ফটক ঘেঁষে থাকা নারী পুলিশ সদস্যদের দায়িত্বে ছিলেন পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) আয়েশা সিদ্দিকা। এর আগে ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচির দিনও বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবনের সামনে এডিসি আয়েশা সিদ্দিকা উপস্থিত ছিলেন। তখন অবরুদ্ধ বিএনপি চেয়ারপারসন ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে ‘গোপালী’ তিরস্কার করেন।

গত সোমবার বিকেলের ওই ঘটনায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মী ভেতর থেকে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের মূল ফটকে বারবার সজোরো ধাক্কা দিতে থাকেন। বিকেল ৪টার দিকে বিএনপির সাবেক এমপি সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া, রেহানা আক্তার রানুসহ অন্য নেতানেত্রী ‘জ্বালো জ্বালো’ শ্লোগান দিলে বাইরে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যরা উত্তর পাশের গ্রিলের ফাঁক দিয়ে বিক্ষুব্ধদের ওপর পিপার স্প্রে ছোঁড়ে। এতে কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। তবে গাড়ির ভেতরে বসে থাকায় খালেদা জিয়া পিপার স্প্রে থেকে রক্ষা পান। ওই সময় কার্যালয়ের বাইরে পুলিশের গরম পানির জলকামানও রাখা হয়।

শনিবার থেকেই বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের চারপাশের সব রাস্তায় ধাপে ধাপে চেকপোস্ট বসিয়ে চলাচলকারী ও গাড়ি তল্লাশি করে পুলিশ। ওইসময় স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিচয়পত্র বহনকারী গণমাধ্যমকর্মী ছাড়া কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। নিরাপত্তার অজুহাতে শুক্রবার থেকে গুলশান বনানীসহ পুরো রাজধানীর মোড়ে মোড়ে টহল বসিয়ে মোটরসাইকেলসহ সব ধরনের যানবাহন তল্লাশি চালানো হয়। তল্লাশি করা হয় সাধারণ মানুষকেও।

সবশেষে বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১২টায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের মূল ফটকে লাগানো তালাটি খুলে ফেলা হয়। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে তালা খুলে নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করা হয়নি।

কার্যালয়ে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইমন উল্টো বলেন, ‘এখানে আগেও কোনো তালা ছিল না। এখনো কোনো তালা নেই।’(!)

এদিকে গত পাঁচদিন ধরে গুলশান কার্যালয়ে খালেদার সঙ্গে অবস্থানরত তার প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খানকে তখন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেনে, ‘কিছুক্ষণ (সাড়ে ১১টার দিকে) আগে কার্যালয়ের মূল ফটকে লাগানো তালা খুলে নিয়ে গেছে পুলিশ।’

মূল ফটকে তালা ছিল না পুলিশের এমন বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘মূল ফটকে তালা ছিল- কি ছিল না, সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে সারা দেশবাসী জানে ও দেখেছে।’



মন্তব্য চালু নেই