আরও পাঁচ পৃথিবীসদৃশ গ্রহ আবিষ্কার
এ প্রশ্ন বারবার করা হয়েছে, আমরা এ মহাবিশ্বে একা কিনা। উত্তরটা হ্যাঁ হওয়ার সম্ভাবনা কম। নাসার কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ সম্প্রতি এর সমর্থনসূচক উপাত্ত নিয়ে হাজির হয়েছে। সম্প্রতি আরও পাঁচটি গ্রহ সম্পর্কে তথ্য এসেছে, প্রাণের বিকাশগত আনুকূল্যের দিক থেকে যেগুলো পৃথিবীর মতো যোগ্যতর, আকৃতির দিক থেকে তো বটেই, আবর্তণীয় নক্ষত্রের সঙ্গে দূরত্বের দিক থেকেও। গ্রহগুলো তাদের আবর্তণীয় নক্ষত্র থেকে প্রয়োজনীয় দূরত্ব বজায় রাখছে, যে দূরত্বে সেখানে পানি বরফও হবে না, বাষ্পীভূত হয়ে উড়েও যাবে না। আর পানি যেহেতু পৃথিবীতে প্রাণের আবাদের জমি হিসেবে কাজ করেছে, সুতরাং ঐ সকল গ্রহেও তা হতে বাধা কোথায়। সুতরাং পৃথিবীর প্রাণের অনুরূপ প্রাণের বিকাশ সেখানেও ঘটতে পারে।
নাসার কর্মকর্তা চার্লস বল্ডেন বলছেন, ‘বর্তমান সময়ে মহাজগত, মহাজাগতিক প্রাণ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর মূল উপজীব্য হয়ে উঠেছে, দেখতে পাই। কেপলার, কল্পকাহিনীর পাতা থেকে ওগুলোকে বাস্তবে উত্তরিত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।’ কেপলারের পাঠানো তথ্য থেকে আকারে পৃথিবীসদৃশ গ্রহের সংখ্যা পাঁচ হলেও, পৃথিবী থেকে আকারে বড় প্রাণানুকূল গ্রহ ছয়টি। এ গ্রহগুলোও নিজস্ব সৌর পরিবারে সূর্যের মতো একটি নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে আবর্তন ঘটিয়ে যাচ্ছে। সূর্যসদৃশ ঐ নক্ষত্রটি পৃথিবী থেকে ২০০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। আজকাল আর বলার অবকাশ নেই, সবাই জানে, সেকেন্ডে ১ লাখ ৮৬ হাজার মাইল অতিক্রমকারী আলো ১ বছর ধরে চললে যত দূরে যাবে, তত দূরত্বকে আলোকবর্ষ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।
কেপলার পর্যবেক্ষক দলের প্রধান বিজ্ঞানী উইলিয়াম বরুকি; বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে যা দেখানো হয়, তার সত্য হওয়ার সম্ভাবনাকে আরও উসকে দিতে জানালেন, মূলত, প্রায় ১২০০ গ্রহ প্রাণের আবাদের অনুকূল বলে নিজেদের পক্ষে শক্ত দাবি জানাচ্ছে। যাদের মধ্য থেকে মাত্র ১১টি সম্পর্কে তারা মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছেন। শুধুমাত্র আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতেই গুণে শেষ করা যাবে না এমন সংখ্যক গ্রহ আছে, যারা হুবহু সূর্যের মতো নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে প্রাণানুকূল দূরত্বে আবর্তিত হচ্ছে।
কেপলার কিন্তু সব ক’টি গ্রহকে তেমন পরিষ্কার আকৃতিতে ঘুরপাক খেতে দেখতে পারছে না, টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে যেমন দেখা যায়। যেহেতু মধ্যকার দূরত্ব অকল্পনীয়, ঐ দূরত্বে আলোর বেগে পৌঁছুতেও যেখানে ২০০০ বছর লেগে যাবে, তখন ওভাবে দেখাটা সম্ভবও নয়। কেপলার শুধুমাত্র আভাস পেয়েছে। পর্যবেক্ষকরা দেখেছেন, নক্ষত্রের আলোর উৎস ও পথ, ক্ষণকালের জন্যে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এটা তখনই ঘটছে, যখন ঐ নক্ষত্রকে আবর্তনকারী গ্রহ, তার বার্ষিক কক্ষপথে পরিভ্রমণ সেরে নিচ্ছে। যে পাঁচটি গ্রহ আকারেও পৃথিবীর সমান, সেগুলোর আবর্তণীয় সূর্য সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত মাত্র এটুকু বলা যাচ্ছে, ঐ সূর্যের চেয়ে আমাদেরটি বড়। আরও কিছু বলতে পারবে শিগগিরই এ টেলিস্কোপ, তবে তার জন্যে আরও কিছু সময়ের প্রয়োজন। ততক্ষণে আরও কিছু বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর গল্পকথা মগজে অমৃত ঢালতে থাকুক পাঠকের।
মন্তব্য চালু নেই