উখিয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের বই বিতরণ ও ভর্তিতে শিক্ষকদের বানিজ্য

সরকার শিশুদের জন্য শূণ্য পদ সৃষ্টি, শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষা উপকরণ, বিনামূল্যে বই, বিস্কিট বিতরণ ও নানা সুযোগ সুবিধা দেওয়ার সত্বেও উখিয়ার পুর্ব ভালুকিয়া তুলাতলী ও আমতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে প্রাক-প্রাথমিক ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে ভর্তি ফি, বই বিতরণে টাকা আদায়, অনিয়ম-দুর্নীতি ও জালিয়তীর মাধ্যমে দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েদের অভিভাবকদের কাছ অবৈধ উপায়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারের হাতে নেওয়া শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে উখিয়া উপজেলার অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে তা কোন কাজে আসছে না। এ ঘটনা নিয়ে স্থানীয় লোকজনসহ স্কুলের অভিভাবক ও ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে শিক্ষার উপর অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে ঝড়ে পড়া রোধ ও শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের ক্ষেত্রে নানা ভাবে সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে আসছে। ভালুকিয়া গ্রামের এ ২ বিদ্যালয়ের তুলাতলী প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহমান ও আমতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা হাসিনা বেগম ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা সুমি আক্তারের যোগসাজসে ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট থেকে ১ম ও ২য় শ্রেণী ২০ টাকা করে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ৩০ থেকে ৪০ টাকা, প্রশংসাপত্র ও পিএসসিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সনদ প্রদানের ক্ষেত্রেও ৩ থেকে ৪ শ টাকা করে আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। ভালুকিয়া তুলাতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২০১৫ ইং বর্ষে নতুন বই বিতরণে অবৈধভাবে টাকা আদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য জাবেরুল ইসলাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। গতকাল বুধবার সকালে ২য় শ্রেণীর ছাত্র আবুল হোছন বই নিতে গিয়ে টাকা না দেওয়ায় প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহমান তাকে ফেরত পাঠায়। তার পিতা জানান, কোন অজুহাত ছাড়াই তুলাতলী স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছাত্র/ছাত্রীদের নিকট থেকে অবৈধভাবে বই বিতরণ ও ভর্তির ক্ষেত্রে ব্যাপক হারে টাকা আদায় করে নিচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিদ্যালয় ২টির প্রশাসনিক কার্যক্রম অব্যস্থাপনায় ভরপুর। যার ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারী থেকে শুরু করে ছাত্র/ছাত্রী ও অভিভাবক পর্যন্ত কোন চেইন অব কমান্ডের আওতায় নেই বলে জানিয়েছেন একাধিক এলাকাবাসী। এছাড়াও ইতিপূর্বে প্রায় ৬০ জন ছাত্র-ছাত্রীর নিকট থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগে উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবরে অভিযোগ জানালে অফিসের কথিত দুর্নীতিবাজ অফিস সহকারী বশির আহমদ ও উখিয়া সদরের কতিপয় দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষক সিন্ডিকেট মিলে জাবেরুল ইসলামের করা অভিযোগটি উৎকোচের বিনিময়ে শিক্ষা অফিস থেকে গায়েব করে ফেলার এরকম হাজারো অভিযোগ রয়েছে এ কর্মচারীর বিরুদ্ধে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা শিক্ষা অফিসারের নির্দেশে উক্ত ৬০ জন ছাত্র-ছাত্রীর টাকা ফেরত দেন। স্থানীয়রা জানান, একই উপজেলার সন্তান একই স্থানে দীর্ঘদিন ধরে চাকুরী করে আসার ফলে কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে অফিস সহকারী বশির আহমদ শিক্ষা অফিসটিকে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিনত করেছে। এভাবে তুলাতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৫ শত জন ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট থেকে বিভিন্ন অবৈধ উপায়ে গলা কাটা ভর্তি ফি ও বই বিতরণের অর্থ আদায় করে যাচ্ছে। যা সরকারের ভাবমুর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। অপর দিকে পার্শ্ববর্তী আমতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একই অবস্থা বিরাজ করছে। এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হাসিনা বেগম ও সহকারী শিক্ষিকা সুমির আপন খালা-ভাগিনী। এ সুবাদে খালা-ভাগিনী মিলে স্কুলটিতে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির পাহাড় গড়ে তুলে। সহকারী স্কুল শিক্ষিকা সুমি ইতিপূর্বে স্থানীয় রাজাপালংয়ের জিয়া উদ্দিন নামে এক বখাটের হাত ধরে বেশ কয়েকবার পালিয়ে যাওয়ার মত ন্যাক্কার জনক ঘটনার জন্মদেন। যা নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে নানা কানাগুষা শুরু হয়। স্থানীয়দের প্রশ্ন, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্যজনের হাত ধরে উধাও হওয়া ওই শিক্ষিকার নিকট বিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীরা কি সুশিক্ষা আশা করতে পারে? বিদ্যালয়টি চরম অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার মধ্যে পরিচালিত হয় অভিযোগ করে স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য কামরুন্নাহার লায়লা বলেন, প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে আসা ৪০ জন ছাত্র-ছাত্রীর নিকট থেকে প্রধান শিক্ষিকার ইশারায় জন প্রতি ৩০/৪০ টাকা করে সহকারী শিক্ষিকা আদায় করে নিচ্ছেন। দু’জনই পরস্পর আতœীয় হওয়ায় বিদ্যালয় চালিয়ে নিতেও কোন অসুবিধা হয় না। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য আব্দুস সালাম জানান, গত কয়েক বছর ধরে এ বিদ্যালয়ে অনিয়ম দুর্নীতি কিছুটা বেড়েছে। তা প্রতিকার ও প্রতিরোধে দ্রুত বিদ্যালয়ের ওই প্রধান শিক্ষিকাকে অন্যত্রে অপসারণ জরুরী হয়ে পড়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষিকা হাসিনা আক্তারের বক্তব্য নেওয়ার জন্য বার বার মূঠোফোনে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। আমতলী বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য জাবেরুল ইসলাম জানান, দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষক, শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাস্টার কামাল উদ্দিন, বিদ্যালয়ের সভাপতি নূরুল আলমসহ অপরাপর শিক্ষক কর্মচারীরা যোগসাজসের মাধ্যমে সরকারী এসব বিদ্যালয় গুলো থেকে গোপনে বিভিন্ন অজুহাতে গলাকাটা অর্থ আদায় করছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার সাহাব উদ্দিন অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন বলে তিনি জানান।



মন্তব্য চালু নেই