ফের ‘টাগের্ট’ পুলিশ
অনেক মামলা ঘাড়ের ওপরে থাকায় রাজশাহীতে জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ নেতারা পুলিশের চোখে পলাতক। পলাতক থাকলেও চলছে তাদের নাশকতা। যখনই সুযোগ পেয়েছে তখই হামলা। তাদের চোরাগোপ্তা হামলা সামাল দিতে পুলিশও অনেক সময় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
গত দুই বছরে ছোট-বড় সব মিলিয়ে মহানগরীতে অর্ধশতাধিক হামলা হয়েছে পুলিশের ওপর। কখনও কখনও তারা পুলিশের রাইফেল কেড়ে নিয়ে পুলিশেরই মাথা থেতলে দিয়েছে। কখনও বা বন্দুক কেড়ে নিয়ে ওসির পা ভেঙে দিয়েছে। কোনো হামলায় হাত হারিয়েছে, কখনো ককটেলের হামলায় প্রাণ গেছে পুলিশ সদস্যের। তবে হামলাকারীদের মূলহোতাদের এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
শুধু মঙ্গলবারই পুলিশকে টাগের্ট করে মহানগরীর কয়েক জায়গায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। মহানগরীর শাহ মখদুম থানার আলিফ-লাম-মিম ভাটার মোড়ে সকাল ১০টায় পুলিশের ওপর হামলা চালায় শিবিরকর্মীরা। এসময় হামলাকারীরা রাইফেল কেড়ে নিয়ে সেই রাইফেল দিয়েই পুলিশকে পেটায়। এ হামলার ঘটনায় ৪ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
আহত চার পুলিশ সদস্য হলেন- শাহ মখদুম থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গির (৩৫), কনস্টেবল জামাল (৩৪), কনস্টেবল শফিকুল ইসলাম (৩৬) ও আমজাদ (৩২)। আহতদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে আমজাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে পুলিশ জানিয়েছেন।
এরপরে রাতে পুলিশের বহনকরা পিকআপভ্যান লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা পুলিশকে বহন করা ইমা গাড়িটি ভাঙচুর করেন।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে ও পুলিশের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে মনোবল ভেঙে দিতেই বারবার শিবির ক্যাডাররা গত কয়েক বছর থেকেই এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে।
২০১৩ সালে সবচেয়ে বেশি পুলিশের ওপরে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
ওই বছর ২৬ ডিসেম্বর নগরীর লোকনাথ স্কুলে এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশভ্যানে বোমা হামলা চালিয়ে পুলিশের কনস্টেবল সিদ্ধার্থ রায়কে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় আহত হন ভ্যানে থাকা অপর ৮ পুলিশ সদস্য।
১০ ডিসেম্বর নগরীর বিনোদপুর এলাকায় পুলিশ কনস্টেবলের রাইফেল কেড়ে নিয়ে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল মজিদের পা ভেঙে দিয়েছিল শিবির ক্যাডাররা। ওই সময় আরো চার পুলিশ কনস্টেবলের মাথা ফাটিয়ে দেয় তারা।
ওই বছর ২ ডিসেম্বর নগরীর কোর্ট এলাকায় পুলিশের ওপর হামলা চালায় ১৮ দলের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা পুলিশের রিক্যুইজিশন করা একটি লেগুনায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে অন্তত ৫ পুলিশ সদস্য আহত হন।
২৮ নভেম্বর নগরীর শালবাগান এলাকায় পুলিশের ওপর পেট্রলবোমা হামলা চালায় জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা। ৮ ডিসেম্বর নগরীর ধরমপুর বেতার মাঠ এলাকায় চোরাগোপ্তা হামলার শিকার হন সহকারী কমিশনার আবুল হাসনাত ও কনস্টেবল শরিফ উদ্দিন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় শরিফ উদ্দিনকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।
৩১ মার্চ নগরীর রানিবাজার এলাকায় পুলিশের ওপর হামলা চালায় শিবিরের ক্যাডাররা। সংঘর্ষের সময় শিবিরের ছোড়া ককটেলে
বোয়ালিয়া থানার শিক্ষানবিশ উপ-পরিদর্শক (পিএসআই) মকবুলের হাতের কব্জি উড়ে যায়। তাকে প্রথমে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে ওই দিনই হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয় তাকে।
ওই ঘটনার একদিন পরই ১ এপ্রিল নগরীর শালবাগান এলাকায় ফের পুলিশের ওপর হামলা চালায় শিবিরের ক্যাডাররা। শিবিরের ক্যাডারদের ঝটিকা মিছিলের মাঝখানে পড়েন পুলিশের উপ-পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম। এসময় তারই হেলমেট ও ইট দিয়ে জাহাঙ্গীরের মাথা থেতলে দেয় শিবির ক্যাডাররা। জাহাঙ্গীরের কোমরে থাকা অস্ত্রটিও ছিনিয়ে নিয়ে যায় হামলাকারীরা।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, ‘রাজশাহী নগরীতে কোনো কারণ ছাড়াই বা তুচ্ছ কারণে জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডাররা পুলিশের ওপর হামলা করছে।
রাজশাহী মহানগর জামায়াতের নেতাকর্মীদের অভিযোগ উল্টো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের নেতৃবৃন্দদের কয়েকজন জানান, তারা নয় বরং পুলিশই তাদের ওপরে অবিচার করছে। কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে গেলেই পুলিশ তাদের নেতাকর্মীদের মামলায় জড়িয়ে দিচ্ছে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপত্র ও বোয়ালিয়া থানা পুলিশের সহকারী কমিশনার ইফতে খায়ের আলম জানান, ইতোমধ্যেই মঙ্গলবারসহ আগে পুলিশের ওপরে হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে মাঠে নেমেছে পুলিশ।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. শামসুদ্দিন জানান, পুলিশ জনগণের জান ও মাল রক্ষার কাজ করে যাচ্ছে। সে জন্য পুলিশের যা প্রয়োজন তা করবে। এতে বাধা দিতে আসলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য চালু নেই