৫ জানুয়ারি ঘিরে উত্তাপ, উৎকণ্ঠা
৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিনটিকে ঘিরে মুখোমুখি অবস্থানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোট এবং বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। এ দিন উভয় পক্ষই সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়ে রাজপথে থাকার অঙ্গীকার জানিয়েছে। দুই পক্ষের এমন অনড় অবস্থানে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। দিনটিকে ঘিরে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার। ৫ জানুয়ারি কী হবে-এই প্রশ্ন এখন মুখে মুখে।
৫ জানুয়ারিকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে এ দিন সারাদেশে সমাবেশ ও কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। কেন্দ্রীয়ভাবে সমাবেশের জন্য ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, মতিঝিলের শাপলা চত্বর অথবা নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে জনসভা করতে পুলিশের অনুমতি চেয়েছে তারা। তবে, সরকার বলছে, নাশকতার আশঙ্কা থাকলে বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হবে না। কিন্তু বিএনপির নেতাদের দাবি, অনুমতি না পেলেও রাজপথে থাকবেন তারা। অপরদিকে, ওই দিনটি সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষা দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে দলটির নেতারা বলছেন, এ সমাবেশ কোনো শক্তিই ঠেকাতে পারবে না। সমাবেশ করতে না দিলে টানা ৭২ ঘণ্টার হরতাল ডাকা হবে বলেও জানিয়েছে দলের একটি সূত্র।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ৫ জানুয়ারি রাজপথ দখলে রাখার রণকৌশল চূড়ান্ত করছে উভয় দল। প্রতিপক্ষকে ঘায়েলেও নেয়া হচ্ছে ব্যাপক প্রস্তুতি। ওইদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ব্যাপক শোডাউনের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি রাজধানীসহ আশপাশের জেলা থেকেও নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসার নির্দেশ দিয়েছে বলে জানা গেছে। বিএনপিকে সমাবেশ করতে দেয়া হোক বা না হোক ওইদিন রাজধানীতে তারা ব্যাপক শোডাউন করবে দলের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বাধা দিলে পাল্টা আঘাতেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে নেতাকর্মীরা।
৫ জানুয়ারিতে করণীয় নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মহানগর আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন খালেদা জিয়া। দলের পাশাপাশি জোটের নেতাদেরও ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তুতি সভা করতে না পারায় নেয়া হচ্ছে প্রযুক্তির সহায়তা। নেতাকর্মীদের ‘ক্ষুদে বার্তার’ মাধ্যমে দলের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে ৫ জানুয়ারি ঘিরে সব ধরনের নৈরাজ্য রোধে কঠোর পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। ইতিমধ্যে বিএনপি এবং জামায়াতের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার অভিযান শুরু হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, গণতন্ত্রের বিজয় দিবসে রাজধানী ঢাকায় বিরোধী পক্ষকে সমবেত হওয়ার কোনো সুযোগ দেয়া হবে না। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাদের দমনে প্রশাসনিক এবং দলীয় সম্ভাব্য সব কিছু কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করেছে ক্ষমতাসীনরা।
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, নাশকতার আশংকা থাকলে ৫ জানুয়ারি ঢাকায় বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হবে না। বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে শুক্রবার বিকেলে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ঢাকায় ৫ জানুয়ারি ‘যেকোনো মূল্যে’ জনসভা করার ঘোষণা দেন দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘দৃঢ়তার সঙ্গে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে আমরা বলতে চাই, ৫ জানুয়ারি আমরা কর্মসূচি করবই।’
আর এ কর্মসূচি করতে সরকারের সহযোগিতা চেয়ে রিজভী বলেন, আমরা বারবার অঙ্গীকার করছি, ৫ জানুয়ারি ২০ দলীয় জোটের জনসভা হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। আমরা এ জনসভায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সার্বিক সহযোগিতা চাই। সরকার কর্মসূচির অনুমতি না দিলে কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনুমতি না দিলে সে ক্ষেত্রে আমাদের কর্মসূচি দিতেই হবে। এ জন্য সরকারকেই দায় নিতে হবে।
মন্তব্য চালু নেই