ছোট্ট নাটিকা :

সাত রং স্রোত

engr mirza
ইঞ্জিনিয়ার মীর্জা শামীম হাসান

-তোর লাল আকাশী রংয়ের শাড়ীটা আছে এখনো?
–হ্যা , আছে তো। কেনো?
-ওখানে নদীর পাড়ে বেশ ক’টা বাবুই পাখি বাসা বেঁধেছে। দেখতে যাবো
–আমাকে আসতে হবে? শাড়ী পড়ে!
-শুধু কি তাই, সাজুগুজুটা তো….. ..
–কবে?
এ কথাগুলো ছিলো আজ থেকে প্রায় ষাট বছর আগে কোন এক দুপুরে পার্কে হাটার সময় দু’জনের। সেদিনের বিকেলে মেয়েটি দেখা দেয়নি। ঠিক সে খানে আজকে শেষ সন্ধ্যায় বৃদ্ধ একা দাঁড়িয়ে। ঠিক বয়সটা বোঝা যায়না, অনেক বয়স তাও যেনো শক্ত শরীরের লোকটা। চারপাশটা নিঝুম। দূরে মাঝেমাঝে হারিকিনের আলো দেখা যায় আর পিক-পিক পাখির শব্দ। দাঁড়িয়ে ছিলো গাছটার নিচে ।
(এমন সময় একজনের কথা)
— এতো দেরিতে এলে কবি?
-কে? আপনি আমাকে বলছেন! ভূল হচ্ছে । আমি কবি নই। তো আপনি? ঠিক.. .. ..
–ভূল হয়েছে প্রথম কথাতে বটে কিন্তু শেষ টা ঠিক।
-মানে?
–দেরি হয়েছে আমার। তোমার নয় কবি। আমি আসতে অনেক সময় নিলাম। এতো দঁড়ির প্যাচে আর ডাক্তারের করে দেয়া ছিন্ন ভিন্ন অংশে নিজেকে গুছিয়ে নিতে অনেক দেরী হয়ে গেলো। তাই আর পথে আসতে. .
-আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। কে আপনি!
(পাশে অন্য একজনের কথা শোনা যায়।)
—ও আপনি। আমি খবর পেয়ে ছুটে এলাম
-কেনো? আমি কি নামি দামি কেউ? কোথায় থেকে এলেন? কেনো?
—চিতা থেকে। হিন্দুর মেয়েতো তাই। আমাকে জ্বালানোর চেষ্টা চালান হচ্ছিলো। বৃষ্টির পরের দিন তাই স্বশান যাত্রীরা কোন এক বইয়ের পাতা ছিঁড়ে আগুনের ব্যবস্থা করছিলো। মুক্তির পরে পাতাটা নিয়ে দেখলাম কবিতা আর নাম আপনার। তাই দেখতে এলাম। ভাবলাম কবকে দেখে আছি।
– কিন্তু কেনো। আমাকে আপনাদের দেখার কি হলো বলুনতো! আর কিসের মুক্তি? কবিতাটা কি শুনি..

— ( আবৃতি করলো)

সময় যদি এমন হয় আমার পাশে শুধুই আমি , তখন পুরনো কিছু তৃপ্তি নিজের কাছে বেজায় দামি। এটা বুঝি না, ওটা শুনি না – যতোই যাবে সময়, এমন সময় অপরকে পরিনা করতে জয়। আজকে তোমরো সুখে আছো , আছো অন্য মোহে, এমন সময় সবাই কাদে বড়-ছোট দেহে।। দূরের একটা পথ দেখেছি তাই ভেবেছিলুম যেবা, পেছন ফিরে কাউকে না দেখে রেখে গেলাম কাব্য; আামি কি আর থেমে থাকবো?
(বলে চললো). . বাকি অংশ পাইনি। বন্ধুর অসুখের কথায় তাকে দেখতে গিয়েছিলাম তার মেসে। আসলে কথাটা ছিলো মিথ্যা। সেখানে যেতেই পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে বেঁধে ফেলে আমাকে। সাত জনের মতো মানুষের মতো হিংস্র পশুরা একে একে আঘাতে আঘাতে আমাকে ছিন্ন করে দিলো। জ্ঞান ফেরার পর বাড়ী গিয়েও ঠাই পেলাম না সমাজের দায়। তাই শিশির সব বিশ এক ঢুকে খেয়ে নিলাম। কি জে জ্বালা পোড়া সুরু হলো । তার পরে এখানে।
-কিন্তু আমি কেনো? আমি তো কোন প্রশ্নের উত্তর নই।
দূর থেকে কে যেনো দৌড়ে আসছিলো। কবি দাঁড়াও দাঁড়াও। আমি আসছি। যেও না। কাছে এলো।
-আপনি আবার কে?
আমি! আমি বেশ ক’বরছ আগে ও পথের পাশেই এক রাস্তায় পড়ে ছিলাম। সেখানেই আমার ছারপত্র মিলেছে।
-কি ভাবে?
( আবৃতি করলো)
অর্থ,বহর,পথের ধূসর ধূলো, অতীত বর্তমান সব এলোমেলো। কারও খোলা হাওয়ায় কেশের মতন কিছুটা। ভালো লাগা টাও বরাবর মিথ্যা ছায়াটা। সব কথা ফেলনা পাতা আর অবধের কথা নি:স্ব কথা না বলা ভাসায় মিশে থাকা। হাসা,আড্ডা , গরম শীতে পথ চলা , কিছুটা অভিমান তাই মিথ্যা সৃস্টির দূরে থাকা, যাক;ভূলে যাব আর বলবোনা অযথা, কেনা, স্পস্টত কিছুতেই কেউ দোলে না। দেলার মতন মতি আজ কাল আর মেলেনা পূর্বেও কি এমন ছিলো তা বোধহয় জানিনা। এরপর যদি আমি দেখি আবার এমন আমি করবো কঠিন অনশন।।
(বলে চললো). . সেদিন কাদের যেনো স্ট্রাইক ছিলো সারাদিন থমথমে ভাব। দুদিন থেকে ঘরে কিছু ছিলো না। বের হলাম কিছু কিনে আনতে। রাতার ধারে সব দোকান বন্ধ। তাই রাতা এপারে আসতেই কোথা হতে যেনো একটি বুলেট ঠিক আমার মাথায় লেগেছিলো। বুঝে ওঠার আগেই সমত আকাশ কালো , কেউ নেই আশেপাশে। আর একটু পরেই পেলাম ছাড়পত্র।
সন্ধ্যাটা বাড়ছিলো। নদীর ধারটা জমে গেলো অনেকের ভীরে। ওপারে অশাত , এপারে অগনিতো। ডান-বাম সব জায়গাতে অনেক ভীর।
– আমার শুনতে ভালো লাগছে না। আমি যাবো। আমাকে আর শুনিও না।
সবাই যেনো একসাথে বলে, না,না তোমাকে শুনতে হবে। তোমাকে জানতে হবে। তোমাকে আমাদের কথা শোনাতে হবে সবার কাছে।
-কি লাভ? কাকে শোনাবো। কেনো?
তাদের একজনে এগিয়ে এসে বললো। ও মানুষদের। যারা কানা-বোবা-খোরা-হাবা তাদের। যারা বসে থাকে কিন্তু কথায় পটু তাদের।
-কি হবে।ওরা তো মরাদের থেকে মরা।
একএক সামনে এগিয়ে এস বলে তাদরে কথা। বলতে লাগতো একে একে.. ..
আমি ছিলাম রিভল্যুশনবাদী। একদিন মিছিলের মধ্যে গুলিতে. . .
আমি ছিলাম ছাত্র। কিছু কথা বলতে গিয়ে সারা রাত গরম পানি আর বরফর উপরে রেখে হাজতে আমাকে পেটানো হলো। আর তাই আমার ছাড়পত্র মিললো অন্ধকার সেফটি টেঙ্কে।
আমার বাহুবল কম থাকায় পাঁচ জনের সাথে পেড়ে উঠিনি। এক বড়োলোতের ছেলের সাথে আমার ঝসড়া হয়েছিলো। সে এলাকায় আফিমের ব্যবসা করতে চাইছিলো কিন্তু আমি সায় দেই নি তাই একদিন ছুড়ির আঘাতে . .
-আমি আর শুনবো না। আর না। দয়া করো। আমি পারবো না লিখতে, বা কাইকে শোনাতে। আমি অসহায়। তোমরা কার এসো আমার সাখে দেখা করতে। আজ আর আমি পারছিনা কথা বলতে।
সবার কন্ঠে সে জোর অধিরার না-না না। আমরা বলবো। তোমাকে শোনাবো। থেকে যাও আমাদের সাথে।
একজন নারী সামনে এগিয়ে এ বললো। বুজতে পারিনি জীবন , কি হবে কি করবো তা নিয়ে পার করতে চেয়েছি। আজ আর কাকে কি শোনাবো। ঔ মানুষদের যারা অুীতের আমার মতো। আমি তুয়াক্কা করিনি তো ওরা কেনো করবে।।
সবাই এক সাথে আবৃতি করতে লাগলো. .
বিসর্জন . . .।
মিথ্যাচারি বুঝেও বুঝিস না ,শুনেও মানিস না।
নষ্ট হয়ে কষ্ট পাস।
তুই যদি কোনদিন রবীন্দ্রসংগীত বলিস দেশের শাসন যেনো তোকে ফাঁসি দেয়।
তোমাদের জন্য নয় সে সব।
এসব গান পবিত্র,সৃস্টির সুর।
আর তোরা , পিতা-মাতার ভূল ফসল।
অনেক ঘৃনা হয় সৃষ্টিকে , মিথ্যা মনে হয় সব। চিৎকার করে গালি দিতে মন চায় দুনিয়াটাকে। শুধু তোদের কারনে,বরনে,গর্জনে,হরনে।
আমিএটা শুনেছি,
বারিফা বা, খিআ.. . . উদাহরনে যাকেই আনি,
খুব আগে কোন এক নষ্ট স্বপেড়বর কাছে হার মেনেছে।
আর,
ছিরিয়ে ফেলেছো প্রথম বন্ধন ,যা কিছু মিথ্যা সময়ের ফল।
যেন তুমি এটা বুঝেছো, ঠিক তখনই আর একটা কোথায় যেনো কার সে বন্ধনী ছিরে চলে গেলো।
তুমি কাঁদলে আপাতোত সে হাসসে, কিছুদিন পর . . .
সে কাঁদলো ও সুখে হাসে আজ , বৃষ্টির দিনে
মোটেও চাইনি লিখবো..
মোটেও ভাবিনি . . .
আর একজন বাসায় ফিরছে, বাঁধা মানছে না।

——– ——– ———— ———– ———— ———— ———– ———-
লেখক পরিচিতি: লেখনের পূর্ণ নাম প্রকৌশলী মীর্জা শামীম হাসান। তিনি পেশায় একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এবং আই.ই.বি’র সদস্য।



মন্তব্য চালু নেই