বিশ্বকাপের বাকি আর ৪৯ দিন
দ্রুততম সেঞ্চুরির অবিশ্বাস্য রেকর্ড কেভিনের
দ্রুততম সেঞ্চুরির অবিশ্বাস্য রেকর্ড কেভিনের। দরজায় কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ। চূড়ান্ত হয়ে গেছে দিনক্ষণ। এখন শুধু অপেক্ষার পালা। ফেব্রুয়ারী-মার্চে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড যৌথভাবে আয়োজন করবে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ১১তম আসর। যে আসরে সামিল হবে বাংলাদেশও। স্বাগতিক দুই দেশে ১০০দিন আগে থেকেই শুরু হয়েছে ক্ষণগণনা।
২০১১ বিশ্বকাপে ভারতের ব্যাঙ্গালোরের এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কেভিন ও’ব্রেইনের গড়া ৫০ বলে বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরিটির গল্প…
গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট। বার বার এই চিরন্তন সত্যটা প্রমানিত হয়েছে ২২ গজি উইকেটে। ক্রিকেট মাঠ যে শুধুই বড়দের কীর্তি দেখানোর মঞ্চ নয়, কখনও কখনও ছোটরাও সেখানে গিয়ে রোশনাই ছড়িয়ে দিয়ে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করে নেয় নিজের নাম। তেমনই এক কীর্তি গড়ে ক্রিকেটের ইতিহাসে নিজের নাম স্বর্নাক্ষরে লিখে রেখেছেন আয়ারল্যান্ডের কেভিন ও’ব্রেইন।
আয়ারল্যান্ড সবসময়ই বড়দের জন্য আন্ডারডগ। ২০০৭ বিশ্বকাপেই এর প্রমান মিলেছিল। আইরিশদের কাছে হেরে পাকিস্তানের বিদায় ঘণ্টাই বেজে গিয়েছিল সেবার। শুধু তাই নয়, নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপেই উঠে গিয়েছিল সুপার এইটে।
সেই দলটিই চার বছর পর এল বাংলাদেশ-ভারত-শ্রীলংকায় বিশ্বকাপ খেলতে। প্রথম ম্যাচেই ঢাকায় স্বাগতিক বাংলাদেশের বিপক্ষে দারুন সম্ভাবনা জাগিয়েও হেরে হতাশার সূচনা করে আইরিশরা। এরপরই উড়ে যেতে হয়েছে ভারতের ব্যাঙ্গালোরে।
ব্যাঙ্গালোরের এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে ইংলিশরা যেদিন তাদের প্রতিবেশি আইরিশদের মুখোমুখি হয়েছিল, তার তিনদিন আগেই একই স্টেয়িামে রানের ফোয়ারা বইয়ে দিয়ে ম্যাচ টাই করেছিল ভারত আর ইংল্যান্ড।
ওই ম্যাচটিতে সেঞ্চুরি করেছিলেন শচীন টেন্ডুলকার আর এন্ড্রু স্ট্রস- দু’জনই। ৩৩৮*২ রানের হাই স্কোরিং ম্যাচটিতে কেউ জেতেনি। পয়েন্ট ভাগাভাগি করে নিয়েই একই মাঠে এগিয়ে যাওয়ার লড়াইয়ে আইরিশদের মুখোমুখি স্ট্রস বাহিনি।
কিন্তু কে জানত, এই ম্যাচেও বিশাল স্কোর করে থ্রিলারের মুখোমুখি হতে হবে রানীর দেশের ক্রিকেটারদের। ৩২৭ রানের বিশাল স্কোর করেও সেটাকে নিরাপদ রাখতে পারলো না ইংলিশ ক্রিকেটাররা।
হাইস্কোরিং উইকেট বলে টস জিতেই চোখ বন্ধ করে প্রথমে ব্যাট বেছে নেন ইংলিশ অধিনাক এন্ড্রু স্ট্রস। কারও ব্যাট থেকে সেঞ্চুরি আসেনি ঠিক। কিন্তু তিনটি সেঞ্চুরি ছুঁই ছুঁই হাফ সেঞ্চুরির সুবাধে আইরিশদের সামনে ৩২৭ রানের বিশাল এক চ্যালেঞ্জই ছুড়ে দেন ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা।
সর্বোচ্চ ৯২ রান করেন জনাথন ট্রট। ৮১ রান করেন ইয়ান বেল। ৫৯ রান আসে কেভিন পিটারসেনের ব্যাট তেকে। স্ট্রসও কম যাননি, করেছেন ৩৪ রান। আইরিশ বোলার জন মুনি ৬৩ রানে নেন চার উইকেট।
ম্যাচ শুরুর আগে কেউ কেউ হয়তো ভেবেছিলেন, আইসিসির সহযোগি দেশ হলেও আপসেট ঘটানোর ক্ষমতা আছে আয়ারল্যান্ডের। কিন্তু প্রথমে ব্যাট করে যখন ইংলিশরা ৩২৭ রানের এতবড় একটা ইনিংস গড়ে ফেলে, তখন সেই ভাবনা আর কেউ এগুতে চাননি। বাজিকরদের যারা আইরিশদের পক্ষে বাজি ধরেছিল তারাও হয়তো ততক্ষণে আশা ছেড়ে দিয়েছিল।
কিন্তু কে জানতা, দিন শেষে বিকালটা অন্যরকম হয়েই ধরা দেবে এন্ড্রু স্ট্রস আর কেভিন পিটারসেনদের জন্য! আইরিশরা এতটা বিধ্বংসী হয়ে ভারত মহাসাগর থেকে টর্নোডো টেনে এনে বইয়ে দেবে ইংলিশদের ওপর, সেটাই বা ভেবেছে কে?
অখচ বাস্তবতা হলো, অকল্পনীয় ব্যাপারটিই শেষ পর্যন্ত সত্যি হয়ে ধরা দিল ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে। অনিন্দ্য সুন্দর এত রোমাঞ্চকর ক্রিকেট ম্যাচ উপভোগ করলো তারা। আর সেই রোমাঞ্চটি যিনি জন্ম দিয়েছিলেন, ক্রিকেট প্রেমীদের নিয়ে গিয়েছিলেন অচিন্তনীয় এক কল্পলোকে, তিনি হলেন আইরিশ মিডল অর্ডার কেভিন ও’ব্রেইন।
১০৬ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে শুরু করে আয়ারল্যান্ড। এ সময় মাঠে নামেন ও’ব্রেইন। এরপর ২৫তম ওভারে ১১১ রানে ৫ উইকেট। আইরিশদের জয় তখন সুদুরপরাহত। কিন্তু এরপরই শুরু সেই অবিশ্বাস্য ঘটনাটি।
হঠাৎ করেই গ্যালারিজুড়ে নামল বৃষ্টি। আকাশ থেকে নয় ও’ব্রেইনের ব্যাট থেকে। একের পর এক বাউন্ডারি আর ছক্কা। ইংলিশ ফিল্ডাররা যে মাঠেই অবস্থান করছেন সে খেয়ালটাই সম্ভবত হারিয়ে ফেলেছিলেন কেভিন। তাদেরকে কাজে লাগালেন শুধুই বল কুড়ানিতে।
এরপর আইরিশ এই ব্যাটসম্যান যা করলেন তা তো ইতিহাস। মাত্র ৫০ বলে ১৩টি চার আর ৬টি ছক্কায় ছুঁয়ে ফেললেন তিন অংকের মাইলফলক। তৈরী হয়ে গেলো বিশ্বকাপের নতুন এক ইতিহাস। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান হলেন এখন শুধুই ও’ব্রেইন।
২০০৭ বিশ্বকাপে মাত্র ৬৬ বলে সেঞ্চুরি করে এই রেকর্ডটি দখলে রেখেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথ্যু হেইডেন। এর আগে ২০০৩ বিশ্বকাপে ৬৭ বলে বিশ্বকাপের দ্রুততম সেঞ্চুরিটি করেছিলেন কানাডার জন ডেভিসন। হেইডেন, ডেভিসনদের ছাড়িয়ে অন্য উচ্চতায় উঠে গেলেন কেভিন ও’ব্রেইন।
৩২তম ওভারেই ৩০ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেছিলেন কেভিন। ততক্ষণে ম্যাচের চেহারাও পাল্টে গিয়েছিল। প্রথম ফিফটি আসতে লেগেছিল ৩০ বল আর পরের ফিফটি আসতে লেগেছে ২০ বল। তবে জীবনও পেয়েছিলেন কেভিন। ৯১ রানে থাকাকালীন কেভিনের ক্যাচ ফেলে দেন ইংলিশ ফিল্ডাররা। যখন তিনি ৯৮ রানে পৌঁছে যান, তখনই লেগ সাইডে বল পাঞ্চ করে দিয়েই দু’বার জায়গা বদল করে নাম লিখিয়ে ফেলেন ইতিহাসের পাতায়।
এরপর প্রায়র আর ব্রেসনানের চেষ্টায় যখন কেভিন রানআউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন, তখন তার ব্যাট থেকে এসেছে ৬৩ বলে ১১৩ রান। অ্যালেক্স কিউসেকের সঙ্গে তার দ্রুতগতির ১৬২ রানের জুটি ততক্ষণে আইরিশদের জয়ের বন্দরের কাছাকাছি নিয়ে গেছে।
কেভিন ও’বেইন যখন আউট হন, তখন দলের রান ৩১৭। বাকি কাজ শেষ করতে জন মুনি আর ট্রেন্ট জনস্টনকে কোনই কষ্ট করতে হয়নি। ৫ বল হাতে রেখেই ৭ উইকেটে ইংলিশদের গড়া ৩২৭ রানের দুর্গও ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিল আইরিশরা। অবিশ্বাস্য জয়টি এরো ৩ উইকেটে।
মন্তব্য চালু নেই