বেরোবিতে রেজিস্ট্রারের নাম ভাঙিয়ে কোটায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি

বেরোবি প্রতিনিধি : রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) হাইকো্র্টের নির্দেশ অমান্য করে রেজিস্ট্রারের নাম ভাঙিয়ে করে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদানের ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের এক কর্মকর্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাবশালী দুই শিক্ষকের সাথে যোগসাজশে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কোটা সংরক্ষণ না করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের রিটের বিপরীতে গত ৪ এপ্রিল হাইকোর্ট শিক্ষক নিয়োগে তিন মাসের স্থগিতাদেশ প্রদান করেন। একই সঙ্গে শিক্ষক নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ব্যত্যয় ঘটানো কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। চার সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষা সচিব, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে রুলের জবাব দিতে বলেন হাইকোর্ট। কিন্তু এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে গত ২১ এপ্রিল কোটায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

হাইকো্র্টের নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষর ব্যবহার করে নিয়োগের বিষয়ে রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইব্রাহীম কবীরকে জিজ্ঞেস করলে বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না।এটা আমার অগোচরে হয়েছে।’

এর আগে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর ১১৮টি পদের নিয়োগ কার্যক্রমে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ না করায় একজন শিক্ষকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ প্রক্রিয়ার ওপর তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিষয়টি জায়েজ করার জন্য শুক্রবার (২১ এপ্রিল) দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় অনলাইন সংস্করণে একটি সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ সংক্রান্ত তিনটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলেও কোটা সংরক্ষণের বিষয়টি উল্লেখ ছিল না। যারা কোটা অনুযায়ী আবেদন করতে ইচ্ছুক তাদের ২৮ এপ্রিলের মধ্যে আবেদন করতে হবে।’

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ না করার প্রসঙ্গে রেজিস্ট্রার বলেন, ‘আমি নিজেই একজন মুক্তিযোদ্ধা, এখানে আমার কোনও ইনটেনশন ছিল না। তবে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নাকি মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ করা হয় না, সেজন্য এখানে করা হয়নি।’

এদিকে আগামী ৫ মে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তড়িঘড়ি শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে চান বলে অভিযোগ উঠেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূর উন নবীর বিরুদ্ধে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার সুনাম ক্ষুণ্ণ করার জন্য একটি মহল অপপ্রচার চালিয়েছে। সব কাজ শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গেই করেছি।’

মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা সংরক্ষণ না করে শিক্ষকসহ ১১৮টি পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কারণে রংপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের কমান্ডার মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু উপাচার্যের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
উল্লেখ্য যে, নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় গত ৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাবিউর রহমান হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।

পরদিন ৪ এপ্রিল বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মুক্তিযোদ্ধা কোটা অনুসরণ না করায় ২৫ শিক্ষকের নিয়োগ প্রক্রিয়া তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার আদেশ দেন। একই সঙ্গে শিক্ষক নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ব্যত্যয় ঘটানো কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। চার সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষা সচিব, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে রুলের জবাব দিতে বলেছেন হাইকোর্ট।



মন্তব্য চালু নেই