বিয়েতে রাজি না হওয়ায় মামিকে গলা কেটে হত্যা
মামা রফিকুল আলম চৌধুরী সৌদি আরবে থাকেন। তাই মামি রোজিনা আক্তার মিতু ও তার দুই সন্তানের দেখাশোনার ভার পড়ে ভাগ্নে আহম্মেদ শরীফ শাকিলের ওপর।
আর দেখাশোনা করতে গিয়ে মামির সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে শাকিল। এই সুযোগে মামার পাঠানো সব টাকাও নিয়ে নেয় সে। তিন বছরের এই সম্পর্ক এক পর্যায়ে পরিণতির দিকে নিতে চায় শাকিল।
কিন্তু সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে বিয়ে করতে রাজি হননি মিতু। এ কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মিতুকে গলা কেটে হত্যা করে শাকিল।
মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এমন তথ্যই পেয়েছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা। মঙ্গলবার নির্মম এ ঘটনাটি ঘটে রাজধানীর কাফরুলের ইব্রাহিমপুরের একটি বাসায়। ঘটনার পর থেকে ঘাতক শাকিল পলাতক রয়েছে।
কাফরুল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) কামরুল হোসাইন বলেন, তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ঘটনার দিন শাকিল তার মামি মিতুকে বাথরুমে গলা কেটে হত্যা করে।
আর এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মিতুর সাত বছর বয়সী মেয়ে। শিশুটির চিৎকারেই প্রতিবেশীরা ঘরে এসে মিতুর রক্তাক্ত লাশ দেখে থানায় খবর দেন।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, তিন বছর ধরে মিতুর স্বামী রফিকুল ইসলাম সৌদি আরবে থাকেন। আর মিতু দুই শিশু সন্তান নিয়ে কাফরুলের ইব্রাহিমপুর এলাকার মানিকের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।
৯ বছর আগে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। রফিকুলের ভাগ্নে শাকিল তার পরিবারের সঙ্গে কাফরুলের ইব্রাহিমপুর বাজার রোডের একটি বাসায় থাকে। কাছাকাছি বাসা হওয়ায় মামি মিতুকে দেখাশোনার দায়িত্ব পড়ে শাকিলের ওপর।
সে মিতুর বাজার করা থেকে শুরু করে সব কাজ করে দিত। মিতুর সাত বছর বয়সী মেয়ের গৃহশিক্ষকও ছিল সে। এক সময় মামির সঙ্গে শাকিলের সম্পর্ক তৈরি হয়। দুই মাস আগে মিতুকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় শাকিল। কিন্তু মিতু রাজি হননি।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার পর থেকে শাকিলের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন মিতু। এতে শাকিল ক্ষিপ্ত হয়ে নানাভাবে হুমকি দেয়া শুরু করে।
এক পর্যায়ে বিষয়টি পারিবারিকভাবে সবাই জেনে যায়। তারপরও শাকিল মিতুর সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করে। ব্যর্থ হয়ে সে মিতুকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়।
ঘটনার দিন সকাল ৮টার দিকে মিতুর বাসায় যায় শাকিল। মিতুর সাত বছর বয়সী মেয়ে দরজা খুলে দেয়। ঘরে ঢুকে মিতুর সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। তখনও মিতুকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিতে থাকে শাকিল।
মিতু তাতে রাজি হচ্ছিল না। এক পর্যায়ে রান্নাঘর থেকে চাকু নিয়ে আসে শাকিল। এরপর মিতুকে বাথরুমে টেনে নিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। হত্যার পর পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায় সে। খবর পেয়ে দুপুরের দিকে পুলিশ মিতুর লাশ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় মিতুর ভাই ফিরোজ আলম ভূঁইয়া বাদী হয়ে শাকিলকে আসামি করে কাফরুল থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন।
সেখানে তিনি হত্যার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন- তার ভগ্নিপতি রফিকুল ইসলাম সৌদি আরব থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠাত। বাসায় যাওয়া-আসার কারণে বিকাশের পিন নম্বর জানত শাকিল।
বিভিন্ন সময় মিতুকে না জানিয়ে, বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা আত্মসাৎ করেছে শাকিল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে অনেকদিন ধরেই মতবিরোধ চলছে। শাকিল এর জেরেই মিতুকে হত্যা করেছে।
পুলিশ জানায়, শাকিলকে গ্রেফতার করা গেলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
মন্তব্য চালু নেই