হঠাৎ অস্থির পেঁয়াজের বাজার
ভরা মৌসুমে কারণ ছাড়াই হঠাৎ বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীতে আকারভেদে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে দুই টাকা।
এর কারণ হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘বাজারে এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণে নতুন মৌসুমের পেঁয়াজের সরবরাহ আছে। কিন্তু রমজানকে টার্গেট করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মজুদ করছেন পেঁয়াজ, এ জন্য দাম বেড়ে যাচ্ছে। এ জন্য এখনই মজুদকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন।’
জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগে রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোয় প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ২০ থেকে সর্বোচ্চ ২৬ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে সর্বোচ্চ ২ টাকা দাম বেড়েছে পণ্যটির। বর্তমানে একই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ২৮ টাকায়। নিম্নমানের পেঁয়াজ ১৮ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা কেজি দরে। ভরা মৌসুমে এ দরবৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
রমজানে প্রতিবছরই পেঁয়াজের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। এ কারণে সরকার আগে থেকেই পণ্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করে। সরকার ও ব্যবসায়ী দুই পক্ষ থেকেই বলা হয়, রমজানে পণ্যমূল্য বাড়বে না। রমজান আসতে এখনো দেড় মাসের মতো সময় বাকি। রমজানে হয়ত পেঁয়াজের দাম বাড়বে না। কিন্তু মজুদকারীদের এখনই লাগাম না ধরলে রমজানের আগেই মূল্য বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। কারণ, বর্তমানের দরবৃদ্ধির জন্য তারা একমাত্র কারণ হিসেবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর মজুদ প্রবণতাকে দায়ী করছেন।
পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে পেঁয়াজের মৌসুম চলছে। বাজারে এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণে নতুন মৌসুমের পেঁয়াজের সরবরাহ আছে। এ অবস্থায় দাম মোটামুটি স্থিতিশীল থাকার কথা।
জানা গেছে, বর্তমানে বাজারে হালি পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। এ ধরনের পেঁয়াজ বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায়। এ কারণে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যটি মজুদ শুরু করেছেন। আসছে রমজান ও ঈদুল আজহায় এসব পেঁয়াজ বাড়তি দামে বিক্রির লক্ষ্যে এখন থেকেই মজুদ গড়ে তুলতে শুরু করেছেন এসব ব্যবসায়ী। এ মজুদ প্রবণতা পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উৎপাদন মৌসুমে বৃষ্টিপাতের কারণে এবার পণ্যটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টির কারণে দ্রুত পচনশীল হয়ে উঠেছে এসব পেঁয়াজ। এ কারণে সামনের দিনগুলোয় পণ্যটির সরবরাহে সংকট তৈরি হতে পারে। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এ সংকটের পাশাপাশি যদি বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়, তাহলে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
এদিকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যেও একই চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে। সংস্থাটির তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোয় প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২০-২৮ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে কেজিতে ২ টাকা দাম কম ছিল এসব পেঁয়াজের।
পেঁয়াজ আমদানিকারক মিল্টন সাহা জানান, অনেক ব্যবসায়ী পেঁয়াজ মজুদ করতে শুরু করেছেন। এ ছাড়া বৃষ্টিপাতের কারণে উৎপাদিত পেঁয়াজের এক বড় অংশ নষ্ট হয়েছে এবার। এ কারণে পণ্যটির দাম বাড়ছে।
তিনি বলেন, ‘এখন থেকেই পণ্যটির বাজারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে বাজারে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হবে।’ এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে এখন থেকেই প্রযোজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান এ ব্যবসায়ী।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব শুভাশীষ বসু বলেন, ‘শুধু পেঁয়াজ নয়, সব ধরনের দ্রব্য নিয়ে ব্যবসায়ীরদের সঙ্গে আমরা বৈঠক করব। আগামী কয়েক মাস সন্তোষজনক পর্যায়ে দ্রব্যমূল্য রাখার বিষয়ে আমরা জনগণকে আশ্বস্ত করতে চাই।’
মন্তব্য চালু নেই