যেখানে এক রাতের জন্য বিয়ে হয় হিজড়েদের
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী দেখে মুষড়ে পড়লেন শ্রীকৃষ্ণ। চিন্তিত হলেন যুদ্ধের ভয়াবহ ফল নিয়ে। কিন্তু ধর্মের জয় দেখার জন্য তিনি চাইলেন যুদ্ধে জয়ী হোক পাণ্ডবরা।
কনিষ্ঠ পাণ্ডব সহদেবকে ডেকে নিলেন কৃষ্ণ। ভবিষ্যৎ গণনা করতে পারতেন তিনি। বহু আঁক কষে সহদেব কৃষ্ণকে জানালেন কুরুক্ষেত্রে জয়ী হতে হলে মা কালীর কাছে নরবলি দিতে হবে। যে পক্ষ আগে উপযুক্ত যোদ্ধাকে বলি দেবে‚ সে জিতবে।
বহু ভেবে অর্জুন ছাড়া আর কাউকে নরবলির জন্য উপযুক্ত মনে হল না কৃষ্ণের। কিন্তু কোনওভাবেই তৃতীয় পাণ্ডবকে হারাতে চাইছিলেন না তিনি। এই পরিস্থিতিতে কৃষ্ণের কাছে স্বেচ্ছায় আত্মোৎসর্গ করতে এগিয়ে আসেন অর্জুন পুত্র ইরাবান।
ইরাবান ছিলেন অর্জুনের মতো দক্ষ যোদ্ধা। অর্জুন এবং নাগরাজকন্যা উলুপির সন্তান ইরাবানকে পেয়ে হাতে যেন চাঁদ পেলেন শ্রীকৃষ্ণ। তিনি তাঁকে নিয়ে গেলেন পঞ্চ পাণ্ডবের কাছে। জানালেন ইরাবান তাঁর পিতার সাফল্যের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে চান।
ইরাবান বুঝলেন তাঁর জন্য জন্মদাতা অর্জুনের মনে কোনও স্নেহ-মায়া নেই। এরপর ইরাবানের কাছে শেষ ইচ্ছা জানতে চান কৃষ্ণ। তখন ইরাবান বলেন, নশ্বর পৃথিবীতে তাঁর জন্য শোক বিলাপ করার কেউ নেই। তিনি এক রাতের জন্য বিয়ে করতে চান। যাতে স্ত্রী মৃত্যুর পর তাঁর জন্য বিলাপ করেন।
কিন্তু বলিপ্রদত্ত যুবককে কে বিয়ে করবে? তখন কৃষ্ণ মোহিনীর রূপ ধারন করে বিয়ে করলেন ইরাবানকে। দুজনে এক রাতের জন্য কাটালেন দাম্পত্যের মধুময় রাত। পরের দিন সকালে শুরু হল কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ।
ইরাবানের ইচ্ছে ছিল তিনি নশ্বর শরীরে পুরো যুদ্ধ দেখবেন। এবং নিজে যুদ্ধ করবেন। তাই দেবী কালীর কাছে ১৮ দিন ধরে তাঁকে একটু একটু করে বলি দেওয়া হয়। যুদ্ধের শেষ দিন কয়েক মুহূর্ত যুদ্ধ করার সুযোগ তাঁকে দেন কৃষ্ণ। তখন ইরাবানের দেহে অবশিষ্ট ছিল শুধু কঙ্কাল আর মুণ্ডু।
ইরাবানের সম্মতিতে তাঁর মাথা কেটে ফেলা হয়। সেই মাথা গড়িয়ে যায় কৌরব সেনার উপর দিয়ে। মৃত্যুর আগে ইরাবান শুনতে পান তাঁর জন্য বিলাপ করে কাঁদছেন মোহিনী।
মহাভারতের এই পর্বের স্মরণে ভারতের তামিলনাড়ুর কুভুগমে বসে কুঠাভাণ্ডার উৎসব। সেখানে জড়ো হন নপুংসকরা। ইরাবানের পুজোর পরে এই হিজড়েদের বিয়ে করেন মন্দিরের পুরোহিত। একরাতের জন্য। পুরোহিত হিজড়েদের গলায় পরিয়ে দেন মঙ্গলসূত্র।
পরের দিন সকালে ইরাবানের মূর্তি কেটে ফেলা হয়। তখন ওই হিজড়েরা খুব জোরে জোরে শোক-বিলাপ করতে থাকেন। তাঁদের বিশ্বাস‚ তাঁরা আসলে ভগবান শ্রী কৃষ্ণের এক রূপ। তাঁদের মধ্যে দিয়েই মোহিনী রূপ ধারন করেন কৃষ্ণ।
মন্তব্য চালু নেই