প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে উচ্ছ্বসিত আ.লীগ

হাজার বছরের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন খণ্ডিত ইতিহাসের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম। সর্বশেষ একাত্তর সালে লাখো বাঙালির রক্তস্নাত ভালোবাসায় এবং ভারতের প্রত্যক্ষ সহায়তায় জন্ম নেয়া বাংলাদেশের জনক বঙ্গবন্ধু অবশ্য সে ঋণের কথা স্বীকার করে সম্পন্ন করেছিলেন ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি। বলা হয়, প্রথম চুক্তির ঘাটতি কমিয়ে আনা হয়েছিল দ্বিতীয় ইন্দিরা-মুজিব চুক্তিতে।

সাড়ে চার দশকে গঙ্গায় পানি গড়িয়েছে সাগরসম। আর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের বৈরিতাও দাঁড়ায় পাহাড়সম। অবশেষে সম্পর্কের গভীরতা ফিরেছে আওয়ামী লীগের বদৌলতে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের ভারত সফর নিয়ে উচ্ছ্বসিত ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা মনে করেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন মূলত আওয়ামী লীগের হাত ধরেই। যেকোনো সময়ের চেয়ে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এখন মধুর। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীর এ সফর অতি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন সংগঠনটির নেতারা।

পাশের দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক টানাপোড়েন শুরু বঙ্গবন্ধু হত্যার পরপরই। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের প্রদীপ নিভে যায়। জিয়াউর রহমানের পাকিস্তানপ্রীতির কারণে ভারত ক্রমান্বয়ে মুখ ফিরিয়ে নিতে থাকে।

আরেক সামরিক শাসক এইচএম এরশাদ ক্ষমতায় এসে ভারতের আশীর্বাদ পেলেও সম্পর্ক ঘাটতি ঘোচাতে ব্যর্থ হন। বরং ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির বড় ব্যবধান তৈরি হয় এরশাদের আমলেই।

১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতায় এসেই গঙ্গা চুক্তির বিষয় নিয়ে নালিশ করে জাতিসংঘে। এতে বৈরিতা আরও বাড়ে। পানির পরিবর্তে ফারাক্কার দুয়ার আরও বন্ধ হয়। এমন দাবি আওয়ামী লীগ নেতাদের।

তবে প্রেক্ষাপট পাল্টে যায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর। ১৯৯৬ সালে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানি চুক্তি সম্পন্ন হয়। ভারত এখন বাংলাদেশ, বিশেষত আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত বন্ধু। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুজাতা সিংয়ের দুতিয়ালির মধ্য দিয়ে তা ফের প্রমাণিত হয়েছে। শঙ্কা ছিল নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসায়।

তবে সফল কূটনৈতিক কৌশলের মধ্য দিয়ে মোদি সরকারকেও বাগে আনতে সক্ষম হন শেখ হাসিনা। সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন স্বাধীনতার ইতিহাসে বড় পাওয়া এবং তা নরেন্দ্র মোদির সরকারই করে। সম্পর্ক নিভে যাওয়ার প্রদীপে ফের আলো জ্বলে ওঠে। যে আলোর দিন দিন বিচ্ছুরণ ঘটছে। যদিও ভারতের প্রতি আনুগত্যের প্রশ্নে নানা বিতর্কও জন্ম দিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ভারত আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে তাদের যে অবদান তো কোনো বাঙালি অস্বীকার করতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু বন্ধুরাষ্ট্রটির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে জোরালো ভূমিকা রেখেছেন। এরপর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর চিত্র পাল্টে যায়।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কারণেই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের এখন সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক। ভারতও চায় বাংলাদেশে সহায়ক সরকার ক্ষমতায় থাকুক। এ কারণেই বাংলাদেশ ভারতের কাছে এখন অধিক গুরুত্ব পাচ্ছে। দুই দেশের মধ্যকার ঘাটতিও অনেক কমে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফর দুই দেশের সম্পর্ক আরও মজবুত করবে।’

‘ভারত বন্ধুরাষ্ট্র কিন্তু প্রভু নয়’- এমনটি উল্লেখ করে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের রক্তের সম্পর্ক। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে দেশটির প্রায় ১২ হাজার সেনা প্রাণ হারিয়েছে। উন্নয়ন প্রশ্নে আমরা যুগপথ হাঁটতে চাই। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের এখন যে মধুর সম্পর্ক, তা আরও কার্যকর হবে প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন এ সফরের মধ্য দিয়ে।’



মন্তব্য চালু নেই