কুমিল্লায় ‘কোন্দল’ নিয়ে সুপারিশ যাচ্ছে শেখ হাসিনার কাছে
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ফলাফলে কী প্রভাব ফেলেছে, এ নিয়ে দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সুনামগঞ্জ-২ আসনে কেন্দ্রঘোষিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের একজন নেতার বিদ্রোহী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টিও উঠে এসেছে আলোচনায়। তবে এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে সুপারিশ পাঠানোর কথা জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।
রবিবার সকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘বৈঠকে পার্টির শৃঙ্খলা বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। সুনামগঞ্জ ও কুমিল্লা নির্বাচন এবং আগামীতে আরো কিছু নির্বাচন রয়েছে তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’
গত কয়েক বছর ধরেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কোন্দলের বহিপ্রকাশ ঘটছে। কেন্দ্র থেকে বারবার হুঁশিয়ারি এবং কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিলেও কাজ হয়নি। সম্প্রতি তিনটি উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের কারণ হয়েছেন মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচন করা তিন জন নেতা। দলের দুই প্রার্থীর সম্মিলিত ভোট ছিল বিজয়ী বিএনপির প্রার্থীর চেয়ে অনেক বেশি।
তবে আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব, কোন্দল নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লা সিট করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের পর। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা বিএনপির মনিরুল হক সাক্কুর কাছে ১১ হাজার ৮৫ ভোটে হেরেছেন।
এই নির্বাচনে সীমাকে প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগে কোন্দলের বিষয়টি সামনে আসে। কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছিল, দলের প্রার্থীকে জেতাতে আঁটঘাট বেঁধেই নামবে সবাই্। তবে ভোটের পর জানা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ আসলে ঐক্যবদ্ধ ছিল না। এতদিন কুমিল্লায় সীমার বাবা আফজল খানের সঙ্গে সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের দ্বন্দ্বের বিষয়টি গণমাধ্যেমে আসলেও ভোটের পর আলোচনা হচ্ছে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে নিয়েও। এই ভোটে তার সমর্থকদের কী ভূমিকা ছিল সেটাও এখন প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।
কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের পরই আগামী নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ক্ষতির কারণ হয় কি না এ নিয়ে আওয়ামী লীগে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। আর কোন্দল মেটানো এবং দলের ভেতরে উপদল তৈরিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
এর অংশ হিসেবেই রবিবারের এই বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দলের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিষয়ে করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। কারণ দলের মেজর সিদ্ধান্ত দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতে গ্রহণ করা হয়।’
কাদের বলেন, ‘আগামী ১২ এপ্রিল দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজকের আলোচনার দলের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার বিষয়বস্তু সুপারিশ আকারে তুলে ধরা হবে। এ বিষয়ে নির্বাহী কমিটিই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।’
ওবায়দুল কাদের জানান, আগামী ১৪ এপিল পয়লা বৈশাখ উৎযাপনে আওয়ামী লীগের রাজধানীর বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে শোভাযাত্রা বের করবে। গুলিস্তানে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হবে শেষ হবে এই মিছিল। এর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক কমিটি ও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখাকে।
বৈঠকে ১৯৭১ সালের ১৭ এপিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার গঠনের দিনটি উদযাপনে কমিটি গঠন করা হয়। দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে।
বৈঠকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এনামুল হক শামীম, কৃষি বিষয়ক সম্পাদাক ফরিদুন্নাহার লাইলী, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শামসুর নাহার চাপা, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলওয়ার হোসেন, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ূয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন ।
মন্তব্য চালু নেই