সিদ্ধান্ত নিয়ে ঠেলাঠেলি, বিপাকে ৭০ হাজার শিক্ষার্থী
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৭০ হাজার শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। উৎকণ্ঠায় রয়েছেন তাদের পরীক্ষা, ক্লাস ও লেখাপড়া নিয়ে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ঢাকা মহানগরীর ৭টি সরকারি কলেজ সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এ বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি ওইসব কলেজ ঢাবির আওতায় চলে গেলেও সিলেবাস প্রণয়ন, পরীক্ষা কার্যক্রমসহ নানাবিধ সমস্যা নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছেন।
সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। কলেজগুলো হচ্ছে, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, বিভিন্ন বিষয়ে তারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় লিখিত পরীক্ষা দিলেও ব্যবহারিক পরীক্ষা দেয়া হয়নি তাদের। ইতোমধ্যেই তাদের কলেজ চলে যায় ঢাবির আওতায়। এখন নতুন প্রতিষ্ঠানের আওতায় তাদের এ পরীক্ষা কবে, কোথায় অনুষ্ঠিত হবে তাও জানে না তারা।
সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্স পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর থেকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের মামলায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কন্ট্রোলার মো. বদিউজ্জামান গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকায় মাস্টার্স চূড়ান্ত বর্ষের সকল পরীক্ষা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্থগিত করেছন।
শিক্ষার্থীরা জানায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে তারা অধিভূক্ত কলেজের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারবে না। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছেন এ সিদ্ধান্ত কলেজ কর্তৃপক্ষ জানাবে। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের এ বিষয়ে সঠিক কিছু বলতে পারছে না।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্ত সাত কলেজের বিষয়ে সিদ্ধান্ত ১ এপ্রিল জানানো হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। ১ এপ্রিল রাজধানীর ৭ কলেজের সঙ্গে মতবিনিময় সভা হবে। সেখানে উপস্থিত সবার মতামতের ভিত্তিতে পরীক্ষা ও আনুষাঙ্গিক সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ইতোমধ্যে বৈঠকের বিষয়টি ওইসব কলেজকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকত্তর শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত ডীন (ভারপ্রাপ্ত) মো. আনোয়ার হোসেন জানান, শুধু স্নাতক সম্মান প্রথম বর্ষেই তাদের আওতায় প্রায় ২২ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চূড়ান্ত বর্ষে আরো অর্ধ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী রয়েছেন। তারা এখানে বিভিন্ন বর্ষে ফি পরিশোধ পূর্বক ভর্তি হয়ে পরীক্ষায়ও অবতীর্ণ হয়েছেন। তাদের অনেকে এক বা একাধিক বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হয়েও পরের বর্ষে প্রমোশন পেয়ে ভর্তি হয়েছেন।
চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষার আগেই পূর্বের বর্ষের অনুত্তীর্ণ বিষয়গুলোতে উত্তীর্ণ না হলে ফলাফল স্থগিত থাকে। এখন যারা একাধিক বর্ষে একাধিক বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হয়েছেন তারা কোন সিলেবাসে কোথায় পরীক্ষা দেবেন তা নিয়ে পরিস্কার হওয়া প্রয়োজন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় চলছে ১৯৯২ সালের আইন ও বিধি অনুযায়ী। বর্তমানে ওইসব শিক্ষার্থীর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন করারও প্রয়োজন হতে পারে। এ মর্মে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরী কমিশনের সচিব ড. মো. খালেদ স্বাক্ষরিত এক চিঠি ঢাকা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহোদয়দের কাছে পাঠানো হয়েছে।
ওই চিঠিতে বলা হয়, উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আওতাধীন সরকারি কলেজ সমূহকে সংশ্লিষ্ট এলাকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অধিভুক্ত করা সংক্রান্ত দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্যই ঢাকা মহানগর এলাকায় অবস্থিত ৭টি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল অধিভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য কোনো বিধি-বিধান সংশোধন করার প্রয়োজন হলে জরুরি ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবহিত করার জন্য ঢাকা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অনুরোধ করা হয়েছে।
এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সাতটি সরকারি কলেজের প্রায় ৭০ হাজার শিক্ষার্থী এ অনিশ্চয়তা থেকে দ্রুত পরিত্রাণ চান।
মন্তব্য চালু নেই