‘বিএনপির নেতাদের এত অত্যাচার করি না’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন হয়েছে। সে তুলনায় আওয়ামী লীগ তেমন কোনো অত্যাচার করছে না।

আজ শনিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে যুব মহিলা লীগের দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আকতার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এতে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিলসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।

সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ মাঝে মাঝে বিএনপি নেতারা খুব অভিযোগ করে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই। ২০০১ সালে বিএনপির গুণ্ডা বাহিনী তখন কী অত্যাচার করেছিল? এক-এগারোর পর?’

‘আমি তো বিরোধী দলে ছিলাম। আমাকে তো গ্রেপ্তার করার কথা না। কিন্তু আমাকে প্রথমে দেশে আসতে দিল না। পরে গ্রেপ্তার করা হলো। আজকে আমরা ক্ষমতায় আছি, কই বিএনপির নেতাদের ওপর এত অত্যাচার করি না। করলে তো আমরা করতে পারি। তারা নাকি ভয়ে রাস্তায় নামতে পারে না। এত যদি ভয় থাকে, তাহলে রাজনীতি কেন?’

‘তারাই এখন খুব ভারতবিরোধী’

বিএনপির দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা ভারতের কাছ থেকে কিছুই আদায় করতে পারেনি, তারা এখন আবার খুব ভারতবিরোধী কথা। এ সমস্ত খেলা বহু তারা খেলেছে।’

‘তাদের (বিএনপি) কোনো দেশপ্রেম না, ক্ষমতাটা তাদের কাছে বড় বিষয়। কারণ ক্ষমতায় এসে কী করেছে তারা? যে যখনই ক্ষমতায় এসেছে অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছে। নিজেরাও অর্থসম্পদের মালিক, কিছু মুষ্টিমেয় লোককে অর্থ সম্পদের মালিক করেছে। তাদের জোরে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করেছে।’

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন দাবি করে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘আজকে শুনি খুব ভারতবিরোধী। আমার প্রশ্ন, ২০০১ সালের নির্বাচনে আগে যখন আমেরিকান কোম্পানি আমাদের গ্যাস বিক্রি করতে চাইল ভারতের কাছে, এই ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েছিল কে? খালেদা জিয়া। সে-ই তো দিয়েছিল। মুচলেকা দিয়েই তো ক্ষমতায় এসেছিল। আমি তো দেইনি।’

‘আমি তো চেয়েছিলাম আমার দেশের সম্পদ আগে দেশের মানুষের কাজে লাগবে। ৫০ বছরের রিজার্ভ থাকবে। তার পর আমরা ভেবে দেখব আমরা বিক্রি করব কি করব না। ফলাফল কী? এত কথা বলে এখানে যে র-এর প্রতিনিধি সে তো হাওয়া ভবনে বসে থাকত। আমেরিকান এম্বাসির (মার্কিন দূতাবাস) লোক হাওয়া ভবনে বসেই থাকত।’

বিএনপির মুখে ভারতবিরোধিতা শোভা পায় না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০১ সালের নির্বাচনটা সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে হারাবে। আমি বলেছিলাম, গ্যাস পাবে না। আল্লাহ্তালাই গ্যাস দেবে না। তাই হয়েছে, পায়নি। গ্যাস দিতে পারেনি। মুচলেকা তো দিয়েছিল। তাদের মুখে আবার এত ভারতবিরোধী কথা? ৯১ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসল। ক্ষমতায় এসে ভারত গেল, ঘুরে আসলেন।’

“যখন এখানে সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করলেন, গঙ্গার পানির কী করলেন? উনি বললেন, ‘গঙ্গার পানির কথা? ওহ হো, ‍ওটা বলতে তো আমি ভুলেই গিয়েছি।’ ভারতবিরোধী কথা বললেন, তার আগে উনি গঙ্গার পানির আদায় করার জন্য ফারাক্কা পযন্ত লং মার্চ করেছিলেন। আন্দোলন করে ভারতে গিয়ে গঙ্গার পানির কথা ভুলেই গেলেন। দালালিটা করে কে? আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমরা কিন্তু গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা চেয়েছি।”

‘জিয়া, এরশাদ সমুদ্রসীমা নিয়ে আলোচনা করেননি’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়া, এরশাদ, এর পর খালেদা জিয়া মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের সমুদ্রসীমা নিয়ে কোনো আলোচনা বা কোনো মামলা করে নাই। কেন নেয় নাই? তাঁরা যদি এত দেশপ্রেমী হবে, তাহলে দেশের এই বিষয়ে কেন কথা বলেন নাই?’

নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে তারা নির্বাচন নিয়ে কথা বলে। জিয়াউর রহমান তো অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল, সংবিধান লঙঘন করে, নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে। অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের হাতে সৃষ্ট এই বিএনপি।’

‘বিএনপির নির্বাচনের ইতিহাস হ্যাঁ/না ভোটের’

আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘তাদের (বিএনপি) যে নির্বাচনের ইতিহাস। হ্যাঁ/না ভোট, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেরর পর সংসদ নির্বাচন শুরু করে সেই ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন, মাগুরা উপনির্বাচন, মিরপুর উপনির্বাচন বিভিন্ন নির্বাচনের তথ্য যদি আমরা দেখি, তাহলে এ দেশে কবে, কখন নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন তারা করছে বা করতে পেরেছে? তাদের ইতিহাসে তা নাই।’

‘তাদের ইতিহাসে আছে ভোট কারচুপি, অতিরিক্ত ব্যালট পেপার ছাপানো, অথবা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে ভোটের রেজাল্ট ছিনিয়ে নেওয়া। দেশের সম্পদ বিক্রি করে দিয়ে অন্যের কাছে। এই যে রাজনীতিতে দ্বিচারিতা। হাওয়া ভবন আবার প্রধানমন্ত্রীর অফিসে ফান্ড করে কমিশন নেওয়া হতো।’

‘বিএনপি হানাদারের মতো অত্যাচার করেছে’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০১ সালের নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি-জামায়াত জোট অত্যাচার শুরু করে। তাদের অত্যাচারের ধরনটা যদি দেখি ঠিক সেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতো তারা অত্যাচার চালিয়েছে। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী যেভাবে অত্যাচার করেছিল, মনে হলো জামায়াত-বিএনপি ঠিক একই কায়দায় বাংলাদেশের ওপর অত্যাচার করেছিল।’

পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তা জেনারেল জানজুয়ার মৃত্যুতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর শোকবার্তার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিতনা পেয়ার দিল ম্যা থা, সোচ লিয়ে ভাই।’



মন্তব্য চালু নেই