ভিড়ে ঠাসা পার্কই ছিল প্রেমের ঠিকানা
তাকে লুকিয়ে-লুকিয়ে দেখেই হয়তো কেটেছে সারাটা বছর। কারও আবার বছরভরের ব্যস্ততায় প্রেমই খাচ্ছে হাবুডুবু। পুরানো প্রেমকে গুছিয়ে নিতে আর নতুন প্রেমের খাতা খুলতে তাই হাজির হয়েছিল ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’। ভোরের আলো ফুটতেই এদিন তরুণ-তরুণীরা একে-অপরের হাত ধরে বেরিয়ে পড়েন প্রেমের ঠিকানায়।
যদিও বরাবরই ১৪ ফেব্রুয়ারি নয়, বসন্ত আগমনেই আসল ভ্যালেন্টাইন্স ডে বলে এসেছে বাঙালিরা। হলুদ শাড়ির জড়তা, আড়চোখের দুষ্টুমিতে প্রেমের আলাদাই আমেজ তৈরি হয় যেন। বিশেষত বয়স যাদের মধ্যগগনে, তাদের কাছে স্মৃতিমধুর বসন্ত মানেই বাসন্তীদের নিয়ে বসন্তদের মেতে ওঠা। রোমের সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াসের সঙ্গে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের বিরোধের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক নেই তাদের। যদিও ন’য়ের দশকের গোড়ায় বিদেশি কার্ড কোম্পানিগুলির দৌলতে এ দেশে ভ্যালেন্টাইন ডে-র প্রথা শুরুর পরে বাঙালিরাও কমবেশি মেতেছে।
সৈনিকদের বিয়ে নিষিদ্ধ করার যে বিদান রোমান সম্রাট দিয়েছিলেন সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের সুরে বাঙালির বিপ্লবী মনও সেই লুকিয়ে সৈনিকদের বিয়েকে সমর্থন করেছে। আর সেখানেই জুড়ে গিয়েছে প্রেম। নতুনদের অবশ্য প্রাত্যহিকের ব্যস্ততা থেকে প্রেমের ফাঁক খুঁজে নেওয়াটাই ভ্যালেন্টাইন। তার উপর এ বছর দিনটাও পড়েছে ছুটির দিন। ফলে প্রেম একেবারে বিন্দাস।
অনেকটাই অভাস মিলিছে পহেলা ফাল্গুনে শহর জুড়ে যুগলদের পদচারণায়। হলুদ শাড়িতে ফাল্গুনীদের মাথায় ফুল আর ডিএএসএলআর’এর ক্যামেরা কচাকচ শব্দের ছবি তোলা ছিল যেন পুরো শাহাবাগ, টিএসসি আর রমনা-সোহরাওয়ার্দী উদ্যান জুড়ে। তার প্রভাব লক্ষ্য করা যায় আবার বই মেলা জুড়েও।
তবে নগরীর হাবভাবে উল্টোটাও দেখা। সোমবার থেকেই শাহবাগ ছাড়াও চন্দ্রিমা উদ্যানেও যেন লাল-গোলাপি রঙ লেগেছে। বাহারি বেলুন কিংবা হার্টের আকারের বেলুন কিনছেন অনেকে। চোখ পড়লো শাড়ি পড়া একঝাঁক তরুণীদের দিকে। জানা গেল, সোমবার বন্ধুদের সঙ্গে দলবেঁধে কাটিয়েছেন। আর মঙ্গলবার কাটবে শুধু দু’জনের। ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্বাবিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী জানায়, বাইরে কোথাও যাওয়া মানেই অনেক সময়ের ব্যাপার। তার থেকে ঢাকার পার্কই ভাল। বেশ কিছু বিবাহিত যুগলও রয়েছেন।
যেমন রামপুরা থেকে আসা এক যুগলে সাথে কথা হলো, জানালেন “তিন বছর প্রেমের পরে বিয়ে। তার পরে আরও চার বছর কেটেছে। ভিড় এড়াতে আগেই ঘুরে গেলাম। কিন্তু বড় বেশিই ভিড়।” হ্যাঁ গতকাল বিকালে শাহাবাগ-টিএসসি এলাকায় প্রচুর ভীড় ছিল। তবে নগরীর তারুণের প্রেম নাড়া দেয়নি অনেক প্রবীণ মনকেই। আজিমপুরেরে প্রবীণ যুগল সরকারী অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা যেমন জানান, “পাশ্চাত্য সংস্কৃতি নিয়ে এত কীসের মাতামাতি বুঝি না। ভালোবাসা তো মনের ব্যাপার! তার জন্য আবার নিদিষ্ট দিন কিছের।”
একসময়ে সেই অশান্ত বাংলাদেশ, পেট্রল বোমা আর হরতাল-অবরোধ যেন সবকিছুই অতীত! এই ঢাকার এখন মুল অস্ত্রই যেন ছিল ভালোবাসা। কিছুটা ভীড় হোক বা হইচই, গতকালের দিনটি মনে হয় আবেক আর উদ্দাম প্রেমের ছোয়ায় নগরী হয়ে উঠেছিল শুধুই যুগলদের। আর সেই ভালোবাসা দিবসে জমজমাট হয়ে উঠেছিল অমর একুশে গ্রন্থমেলা। আর ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও ছিল ভালোবাসার ছড়াছড়ি।
মন্তব্য চালু নেই