পড়ানো হলো এক বিষয়, পরীক্ষা দিতে হচ্ছে অন্য বিষয়ে

বৃহস্পতিবার দুই শতাধিক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বিষয়ের পরীক্ষার স্থলে ‘শারীরিক শিক্ষা (বিষয় কোড ১৪২)’ বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে।

এ নিয়ে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার ছয়টি মাদ্রাসার পরীক্ষার্থীরা চরম বিপাকে পড়েছে। সেই সঙ্গে তাদের অভিভাবকরাও পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। কারণ, দুই বছর ধরে এসব শিক্ষার্থী যে বিষয়টি পড়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছে, আজ সে বিষয়ের বদলে অন্য একটি বিষয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে হচ্ছে। অন্যদিকে এসব শিক্ষার্থী অধিকাংশই বিষয়টি বদলে যাওয়ার কথা জেনেছেন গত মঙ্গলবার অর্থাৎ মাত্র এক দিন আগে।

তাই ভালো ফল তো দূরের কথা, পাস করা নিয়েই চিন্তিত হয়ে পড়েছে এসব পরীক্ষার্থী।

কালীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলার কাকিনা মহিমা রঞ্জন উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে উপজেলার ১৯টি মাদ্রাসার প্রায় ৫০৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে ছয়টি মাদ্রাসার ক্ষেত্রেই ঘটেছে ‘বিষয়’ পরিবর্তনের ঘটনা।

মাদ্রাসাগুলো হচ্ছে, মনিরাবাদ সুফিয়া একরামিয়া আলিম মাদ্রাসা, শাখাতি জব্বারিয়ো দাখিল মাদ্রাসা, ভুল্লারহাট আশরাফিয়া দাখিল মাদ্রাসা, দলগ্রাম দাখিল মাদ্রাসা, তেতুলিয়া দাখিল মাদ্রাসা ও কাশিরাম একরামিয়া আলিম মাদ্রাসা। এসব মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা নবম শ্রেণিতে উঠেই অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে আবশ্যিক বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছিল ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’।

পরে তারা দশম শ্রেণিতে ওই বিষয়ের ক্লাসে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি দাখিলের টেস্ট পরীক্ষাতেও অংশ নিয়েছিল। কিন্তু ফাইনাল পরীক্ষার প্রবেশপত্রে ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’ এর পরিবর্তে উল্লেখ রয়েছে ‘শারীরিক শিক্ষা’। ফলে শেষ পর্যন্ত তাদের শারীরিক শিক্ষা বিষয়েই পরীক্ষায় অংশ নিতে হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিভিন্ন মাদ্রাসায় কম্পিউটার-ল্যাপটপ থাকলেও রেজিস্ট্রেশন-ফরম পূরণের মতো অনলাইন নির্ভর কাজগুলো করা হয় বাণিজ্যিক দোকানে। এজন্য সংশ্লিষ্টদের একদিকে যেমন রয়েছে অদক্ষতা অন্যদিকে রয়েছে দায়িত্বহীনতা। আর দোকানে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়েই মূলত বিষয় পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার মতো ভুল হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে।

গত ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া চলতি দাখিল পরীক্ষা চলাকালে গত মঙ্গলবার ঘটনাটি শিক্ষকদের নজরে এলে তারা শিক্ষার্থীদের ঘটনাটি জানিয়ে নতুন বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে বলেন। কোনো কোনো মাদ্রাসা বুধবার শিক্ষার্থীদের ওই বিষয়ে বই সরবরাহ করেছে।

মনিরাবাদ সুফিয়া একরামিয়া আলিম মাদ্রাসার পরীক্ষার্থী ফাহিম হোসেন জানায়, ‘মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি-২০১৭) আমাদের মাদ্রাসায় ডেকে এনে বিষয় পরিবর্তনের ঘটনা জানিয়ে আমাদের হাতে বই ধরিয়ে দিয়ে শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলা হয়।’

ওই মাদ্রাসার অপর পরীক্ষার্থী সুরমার অভিযোগ, ‘গত দুই বছর থেকে “বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়” বিষয়ে পড়ে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। এখন শুনছি সে বিষয়ে আমরা পরীক্ষা দিতে পারব না। এতে আমাদের শিক্ষাজীবন নষ্ট হতে চলেছে।’

কাকিনা মহিমা রঞ্জন উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের সচিব ও কাকিনা মোস্তফাবিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সাইদার রহমান বলেন, ‘বিষয় পরিবর্তনের ঘটনাটি আমাকে জানানো হয়েছে কয়েকটি মাদ্রাসার পক্ষ থেকে। কিন্তু এ বিষয়ে আমার কিছু করার নেই। বৃহস্পতিবার ওই সব পরীক্ষার্থীকে ‘শারীরিক শিক্ষা’ বিষয়েই পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।’

কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আফরোজা বেগম বলেন, ‘এটি মাদ্রাসাগুলোর ভুলের কারণেই হয়েছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।’



মন্তব্য চালু নেই