মায়ের লাশ কাঁধে নিয়ে ৫২ কিলোমিটার পাড়ি
জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে সাহায্য না পেয়ে শেষে বাধ্য হয়ে মায়ের লাশ কাঁধে নিয়ে টানা ১০ ঘন্টা হাঁটলেন ভারতের এক সেনা সদস্য। কোনো সমতল জায়গায় নয়, খারাপ আবহাওয়া ও প্রায় ছয় ইঞ্চি মোটা বরফের ওপর দিয়ে ওই পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে মায়ের শেষকৃত্য সারেন ওই সেনা।
কাশ্মীরের পাঠানকোটে কর্মরত সেনা জওয়ান মুহাম্মদ আব্বাস (২৫)-এর পৈত্রিক ভিটে কুপওয়ারা জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম কারনা। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরেই প্রবল ঠাণ্ডা ও ভারি তুষারপাতের ফলে উপত্যকার একাধিক জায়গায় মোটা বরফের চাদর পড়েছে। তাই প্রবল ঠাণ্ডার হাত থেকে মা সাকিনা বেগমকে রেহাই দিতেই গ্রামের বাড়ি থেকে সরিয়ে পাঠানকোটে নিজের কাছে রেখেছিলেন আব্বাস।
গত ২৮ জানুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় আব্বাসের মা সাকিনা বেগমের। আবহাওয়া খারাপের হওয়ায় মায়ের লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সৎকারের জন্য মায়ের লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দিতে একটি কফিনবাহী হেলিকপ্টার পাঠানোর জন্য কুপওয়ারা জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ জানান আব্বাস। খারাপ আবহাওয়ার অজুহাত দিয়ে তার সেই অনুরোধ খারিজ করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন।
এরপরই পাঠানকোটে নিজের কর্মস্থল থেকে মায়ের লাশ নিয়ে কুপওয়ারে সেনা হেডকোয়ার্টাসে নিয়ে আসেন আব্বাস। তার আশা ছিল গ্রামের বাড়ি যাওয়ার রাস্তা চলাচলের উপযুক্ত হলে সড়কপথে গ্রামের বাড়ি ফিরে যেতে পারবেন। কিংবা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু তিন দিন ধরেও তার কোনটাই না হওয়ার কারণে আব্বাস মায়ের লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলেন। এরপরই বাকি পথ পায়ে হেঁটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আব্বাস। সেইমতো মায়ের লাশ ট্রেচারে চাপিয়ে কয়েকজনকে সাথে নিয়ে বিপদসঙ্কুল পথ দিয়ে হাঁটা শুরু করেন আব্বাস।
এরপর প্রায় ৫২ কিলোমিটার দীর্ঘ চৌকিবাল-কারনা সড়ক পেরিয়ে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছন আব্বাস। যদিও আবহাওয়া দফতরের থেকে আগামী চব্বিশ ঘন্টা ভারি তুষারপাতের সম্ভাবনার সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই সতর্কবার্তাকে উপেক্ষা করেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গ্রামের বাড়িতে পৌঁছান তারা।
আব্বাস বলেন, পুরো বিষয়টি অত্যন্ত অপমানজনক। ঠিকভাবে মায়ের দাফন করার মতো ক্ষমতা ছিল না আমার। প্রশাসনের তরফেও আমাদের অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু পরে তারাও হেলিকপ্টার দেয়নি। এটা সত্যিই খুব ভয়ানক ট্রেকিং (পাহাড় যাত্রা) ছিল। পুরো এলাকাটাই তুষারপ্রবণ ছিল এবং মায়ের লাশ নিয়ে আমরা একবার এদিক একবার ওদিক হয়ে যাচ্ছিলাম।
আব্বাসের ভাতিজা নওয়াজ বলেন, আমরা হেলিকপ্টারের জন্য বসেছিলাম। আমরা জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদেরকে ফোনও করেছিলাম। তারা বলেছিলেন হেলিকপ্টার আসছে…কিন্তু তা আর আসে নি। ওই দিনগুলোতে আমরা একেবারে শেষ হয়ে গিয়েছিলাম। আমাদের যাত্রাটাও মসৃণ ছিল না, ভাবছিলাম আমরা বুঝি মরদেহ নিয়ে শেষ পর্যন্ত গ্রামের বাড়িতে পৌঁছাতে পারবো না।
মন্তব্য চালু নেই