ফুসফুস ছাড়াই ছয়দিন বেঁচে ছিলেন যে নারী
ক্ষতিকর এক ইনফেকশনের বিরুদ্ধে একজন নারীকে তুলতে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন ডাক্তাররা। ফুসফুস প্রতিস্থাপনের জন্য তাকে ৬ দিন ধরে ফুসফুস ছাড়াই বাঁচিয়ে রাখা হয়।
মেলিসা বেনয়েটের জন্মই হয়েছিল সিস্টিক ফাইব্রোসিস নিয়ে। তা এমন একটি বংশগত জটিলতা যাতে ফুসফুসে প্রচুর কফ জমে যায়। গত বছর এপ্রিলে ৩২ বছর বয়সী এই নারী ভয়াবহ লাং ইনফেকশন নিয়ে হাজির হন টরন্টো জেনারেল হসপিটালে। বিশের কোঠা থেকেই নিয়মিত লাং ইনফেকশনে ভুগে আসছেন তিনি। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখা যায়, এই ইনফেকশনের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াটি বেশীরভাগ অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি রেজিস্ট্যান্ট। অর্থাৎ এসব অ্যান্টিবায়োটিক তার ওপর অকেজো।
ইনফেকশনের কারণে এত কাশি হচ্ছিল যে তাতে ফ্র্যাকচার হয়ে যায় মেলিসার পাঁজরে। তার এই ক্ষতিগ্রস্ত ফুসফুসে রক্ত, পুঁজ এবং কফ জমে যেতে থাকে, কমতে থাকে বাতাসের পরিমাণ। মানুষ পানিতে ডুবতে থাকলে যে অবস্থা হয়, তেমন হতে থাকে তার ক্ষেত্রেও। একটা সময়ে ইনফেকশনের কারণে সেপ্টিক শকে পড়েন তিনি। শরীরে অক্সিজেন এতই কমে যায় যে ভেন্টিলেশন সিস্টেম ব্যবহার করতে হয় তাকে বাঁচিয়ে রাখতে। তার অন্যান্য অর্গান ফেইলিওর শুরু হয়। কিডনি ডায়ালাইসিস, প্রচুর পরিমাণে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ এবং বেশকিছু শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় তাকে। ডাক্তাররা সিদ্ধান্ত নেন, ফুসফুস প্রতিস্থাপনই হতে পারে তার একমাত্র আশা।
“তার ফুসফুস আর সেরে উঠবে না। সেরে ওঠার একমাত্র উপায় হলো ফুসফুস প্রতিস্থাপন,” জানান ইউএইচএন এবং মাউন্ট সিনাই হসপিটালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন হেড ডক্টর নিয়াল ফার্গুসন।
ডাক্তাররা সাহস করে এমন একটি কাজ করেন যা আগে কেবল তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব বলে ধরা হত। তারা দুইটি ফুসফুসই অপসারণ করে ফেলেন, আর তাও কোনো দানকৃত ফুসফুস পাওয়ার আগেই।
১৩ জন ডাক্তার মিলে নয় ঘন্টার এই অপারেশন করেন মেলিসার ওপর। তার ফুসফুসে এত বেশী পুঁজ ও কফ জমে গিয়েছিল যে তা হয়ে ওঠে “ফুটবলের মতো শক্ত”, জানান ডক্টর শাফ কেশাভজি, সার্জন ইন চিফ। তার শরীর থেকে এই ফুসফুস বের করে আনাটাও কঠিন ছিল।
এই অপারেশনের কয়েক ঘন্টার মাঝেই তার পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে। তার অন্যান্য অর্গানের অবস্থা ভালো হয়ে ওঠে। তাকে আর রক্তচাপের ওষুধ দেবারও দরকার পড়ে না।
এই সময়ে ফুসফুস ছাড়া কী করে বেঁচে ছিলেন তিনি? তার শরীরের সাথে সংযুক্ত করা হয় দুইটি সাপোর্ট সার্কিট। একটি ছোট পোর্টেবল আর্টিফিশিয়াল লাং তার হৃৎপিণ্ডের শিরা ও ধমনীর সাথে যুক্ত করা হয়। এটা তার রক্ত থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড অপসারণ করে ও অক্সিজেন যোগ করে। আরেকটি মেশিন তার রক্তের গ্যাসীয় পরিবহন ও রক্ত সংবহনে সাহায্য করে। ছয়দিন পর তার পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয় এবং এক জোড়া দানকৃত ফুসফুস পাওয়া যায়। তখন এই ফুসফুস তার শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়।
এখনো মেলিসা সেরে ওঠার মাঝেই আছেন এবং তার কিডনি ডায়ালাইসিস করা হচ্ছে। কিন্তু এপ্রিল থেকে তার অবস্থার প্রভূত উন্নতি হয়েছে। তিনি বাড়ি ফিরে গেছে, তার চুল ফিরে এসেছে, একা একাই হাঁটাচলা করছেন, আর নিজের মেয়ের সাথে ক্লান্তি ছাড়াই ঘন্টার পর ঘন্টা খেলাধুলা করছেন।
মন্তব্য চালু নেই