আমেরিকার কুৎসিত ইতিহাসের সাক্ষী
আজকের আমেরিকা আর অতীতের আমেরিকার মধ্যে আকাশ আর পাতাল ফারাক। যদিও অতীতের আমেরিকার উপর দাড়িয়েই বর্তমান আমেরিকার ভিত্তি। কিন্তু ন্যাটিভ আমেরিকানদের যখন ক্রমশ খুন আর অত্যাচারের মাধ্যমে অভিবাসী নব্য আমেরিকানরা হটিয়ে দিতে শুরু করলো, তখনে থেকে ‘আমেরিকা’ শব্দটি তার মাহাত্ম্য হারায়। এমনও হয়েছে যে, উত্তর আমেরিকার কিছু কিছু অঞ্চলে ‘আমেরিকা’ শব্দটি এখন তুচ্ছার্থে গালি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। তো সেই ন্যাটিভদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া আমেরিকা (হালের যুক্তরাষ্ট্র) আজকের পৃথিবীতে ক্ষমতাধর দেশগুলোর অন্যতম। নিজের ক্ষমতার চর্চা হিসেবে সে যেমন তৈরি করেছে লাসভেগাস, তেমনি তৈরি করেছে হলিউডের মতো বিশাল এক বাণিজ্যিক জগত। আবার এই আমেরিকাই নিজের প্রয়োজনে নিজেদেরই তৈরি করা অনেক সুরম্য অট্টালিকাকে স্রেফ বাতিল করে দিয়েছে। ২০১৪ সালে যদি সেসব বাতিল করে দেয়া ইমারত দেখা যায়, তাহলে মনে হবে কোনো এক প্রাগৈতিহাসিক আমলে এগুলো তৈরি করা হয়েছিল।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, ন্যাটিভদের কাছ থেকে তো আর খুব সহজেই কেড়ে নেয়া সম্ভব হয়নি আমেরিকাকে। এজন্য অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হয়েছে অভিবাসীদের। ন্যাটিভদের ফিরতি আক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যেমন তৈরি করতে হয়েছে অনেক উঁচু অট্টালিকা, তেমনি ন্যাটিভদের হত্যা করতে ভাড়া করে আনা খুনীদের জন্য ভালো হোটেলও তৈরি করতে হয়েছিল। যেমন ধরা যাক, ফক্স হোটেলের কথাই। এমনি অনেক স্থাপনা রয়েছে গোটা আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্তে যা এখন আর ব্যবহার হয় না। কিন্তু আজও যুগের কুৎসিত সাক্ষী হয়ে দিব্যি দাড়িয়ে আছে সময়ের কাঠগড়ায়।
ফক্স হোটেল
যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েটে অবস্থিত এই হোটেলটি এখন আর ব্যবহার করা হয় না। অথচ সেই আগের মতোই রেখে দেয়া হয়েছে হোটেলটিকে। ধুলো আর অযত্নে যতটুকু ক্ষতি হওয়ার ততটুকুই হয়েছে শুধু। তবু এখনও এই হোটেলটি দেখলে মনে পরে যাবে আমেরিকার র্যাঞ্চ মালিকানা ও কার্টেল ব্যবসার দিনগুলোর কথা। যখন দূর দূরান্ত থেকে মানুষ তাদের গৃহপালিত পশুর পাল নিয়ে আসতো ডেট্রয়েটে বিক্রির জন্য। মূলত, আমেরিকার সেই গৃহযুদ্ধকালীন সময়ে গৃহপালিত পশুর সবচেয়ে বড় খদ্দের ছিল অভিবাসীদের সেনাবাহিনী। তবে যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে হোটেলটিতে স্থানীয় খনি শ্রমিকরা থাকতে শুরু করে। এরপর ডেট্রয়েটে খনি থেকে খনিজ উত্তোলন বন্ধ করে দিলে ধীরে ধীরে হোটেলটিও একটা সময় বন্ধ হয়ে যায়। কারণ ডেট্রয়েট একটি শুষ্ক এলাকা হওয়ায় এখানে জনজীবন খুবই সীমিত এবং পর্যটকের সংখ্যাও খুব কম।
সেন্ট বোনাভেঞ্চার চার্চ, ফিলাডেলফিয়া
১৮৯৪ সালের দিকে ফিলাডেলফিয়ার স্থানীয় জনগণের জন্য এই চার্চটি তৈরি করা হয়েছিল। তৎকালীন সময়ে ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই চার্চটিতে মানুষ আসতো। তবে সবচেয়ে তথ্যবহুল ঘটনা হলো, এই চার্চটিকে কেন্দ্র করে আমেরিকার ইতিহাসে বেশ কয়েকটি বড় রক্তক্ষয়ী ঘটনার জন্ম হয়েছিল। আমেরিকার সেই ‘ধর্মযুদ্ধ’র সময়ে এই চার্চ থেকে অনেক ‘ফতোয়া’ জারি করা হয়েছিল অ-খ্রিষ্টানদের ব্যাপারে। তবে ১৯৯৩ সালের দিকে চার্চটি চিরদিনের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়।
ল্যান্সডাউন থিয়েটার, পেনসিলভানিয়া
আমেরিকার থিয়েটারের ইতিহাসে জড়িয়ে আছে ল্যান্সডাউন থিয়েটারের নাম। ১৯২৭ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়াতে তৈরি করা হয় থিয়েটারটি। গোটা অডিটোরিয়ামে আসন সংখ্যা ছির ১৪০০ এবং এটি তৈরি করেন বিখ্যাত প্রকৌশলী উইলিয়াম হ্যারল্ড লী। তবে লী এই থিয়েটারটি তৈরি করেছিলেন স্প্যানিশ রিভেরার অনুকরণে। ১৯৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের দর্শনীয় স্থানের তালিকায় স্থান পায় এই থিয়েটার।
লেব্রো ব্রাদার্স ক্লথিং কোম্পানি, বাল্টিমোর
বিশ শতকের শুরুর দিকে বিশ্বে যারা প্রথম কাপড়ের(আধুনিক) ব্যবসা শুরু করেন তাদের মধ্যে অন্যতম লেব্রো ব্রাদার্সের কোম্পানি। ১৮৯২ সালে কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত হলেও নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ চালাতে পারেনি। ১৯৫০ সাল থেকে ৮৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় কারখানাটি বাল্টিমোর ক্রাউন কর্ক অ্যান্ড সিল কোম্পানির আওতায় ছিল। পরবর্তী সময়ে আবারও লেব্রো ব্রাদার্সের কাছে কোম্পানিটি ফিরে আসলেও আগের মতো আর জমে উঠেনি। একটা সময় বিশাল কারখানা সমেত পুরো প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়।
হোমসবার্গ প্রিজন, ফিলাডেলফিয়া
প্রিজন শব্দের অর্থ যে কারাগার তা মোটামুটি সবাই জানেন। কিন্তু হোমসবার্গ প্রিজন শুধু কারাগারই ছিল না, এটি ছিল আমেরিকার ইতিহাসের সর্বপ্রথম মনস্তাত্ত্বিক সংশোধনাগার। একদল চিকিৎসক মিলে ১৮৯৬ সালে এই কারাগারটি তৈরি করেন। তাদের লক্ষ্য ছিল পেনসিলভানিয়া এবং ফিলাডেলফিয়ার মানসিক বিকারগ্রস্ত(অপরাধপ্রবণ) রোগিদের চিকিৎসা করা। অবশ্য এই চিকিৎসা পদ্ধতি এবং বেশকিছু কর্মকাণ্ডের জন্য সেসময় তুমুল বিতর্কের মুখে পরে কারাগারটি। এমনও বক্তব্য চালু আছে যে, এই কারাগারটিতেই প্রথম আমেরিকার ক্ষমতাসীনেরা ‘জীবানু অস্ত্র’র সফল পরীক্ষা চালিয়েছিলেন। ১৯৬৮ সালে এবিষয়ে দুই বছর মেয়াদী একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং ফিলাডেলফিয়া পুলিশ কমিশনার এবং জেলা অ্যাটর্নি মিলে এই তদন্ত করেন। পরবর্তী সময়ে অনেক বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে শেষমেষ ১৯৯৫ সালে কারাগারটি বন্ধ করে দেয়া হয়।
মন্তব্য চালু নেই