চাইলেই এদের চিহ্নিত করা যায়, তবে করবে কে?
সাঁওতাল পল্লিতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় সর্বশেষ প্রকাশিত ভিডিওতে যেসব পুলিশ সদস্য ও দুর্বৃত্তদের দেখা গেছে, তাদের আইনের আওতায় আনা খুবই সহজ। কারণ, ভিডিওতে তাদের চেহারা ও কর্মকাণ্ড স্পষ্ট। এছাড়া, পুলিশের রোস্টারে সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের নাম রয়েছে। এসব কিছু বিশ্লেষণ করলেই তাদের গ্রেফতার করা যাবে বলে মনে করছেন পুলিশ কর্মকর্তা ও মানবাধিকার কর্মীরা।
পুলিশ জানিয়েছে,ঘটনার দিন পাঁচজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে চার শতাধিক পুলিশ সদস্য সেখানে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের সঙ্গে র্যাব সদস্যরাও ছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, পুলিশ একটি শৃঙ্খল বাহিনী। তাদের দায়িত্ব পালন, অভিযান ও অবস্থানের বিষয়গুলো সবসময় লিখিত থাকে। সাঁওতাল পল্লিতে ওই দিন কোন কোন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করেছেন, তা লিখিত রয়েছে। কার নেতৃত্বে পুলিশ সেদিন ওই পল্লিতে দায়িত্ব পালন করেছে তাও লিখিত থাকার কথা।
ওই কর্মকর্তা বলেন,পুলিশ কোথাও দায়িত্ব পালনে গেলে নিজ নিজ কর্মস্থলে সেটার সিসি (কার্বন কপি) থাকে। দায়িত্ব পালন শেষেও সিসি থাকে। সাঁওতাল পল্লি এলাকায় সকালে চিনিকলের রিকুইজিশনে আখ কাটার জন্য থানা পুলিশ দেওয়া হয়েছিল। সংঘর্ষের পর সেখানে গাইবান্ধা জেলা পুলিশ লাইন থেকেও পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। বিকালে তারা দায়িত্ব পালন করেন। তখনই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।’
তিনি বলেন,‘সিসির জন্য নির্দিষ্ট বই আছে। ডিউটিতে যাওয়ার আগে সেখানে সবার নাম ও নম্বর লিখে ইউনিট প্রধানের সই নিয়ে, সেই পাতাটা বই থেকে ছিঁড়ে নিয়ে রওনা হয়। ডিউটি শেষে আবার সেই কাগজটি জমা দিতে হয়।’
অপর এক পুলিশ সদস্য জানান,‘সহজ কথায় এটা ডিউটিতে যাওয়ার এবং আসার একটি ডকুমেন্টস। ডিউটি থেকে ফিরে এসে এটি অফিসে জমা দিতে হয়। এমন অনেক ডিউটি আছে যেখানে টিএ ডিএ হয়। এটাকে সিসি-কমান্ড সার্টিফিকেটও বলা হয়।’
তিনি বলেন, ‘গাইবান্ধায় যারা সেদিন ডিউটি করেছেন, সব কিছু লিখিত রয়েছে। সবাইকেই পাওয়া সম্ভব।’
পুলিশের আগুন দেওয়ার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান। তিনি বলেন, ‘যারা আগুন দিয়েছেন, তাদের খুঁজে বের করা কঠিন কোনও কাজ না। ভিডিও যদি সঠিক হয়ে থাকে, তাহলে তাদের চিহ্নিত করা খুবই সহজ কাজ।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাই, পুলিশকে দিয়ে বিষয়টি তদন্ত না করিয়ে অন্য কোনও সংস্থাকে দিয়েও তদন্ত করানো যায়। তবে আমি বিশ্বাস করি পুলিশই পারবে।’
নূর খান বলেন, ‘যদি নিরপেক্ষ তদন্ত না হয়, তাহলে এখানে বিচার বিভাগেরও ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত হতে পারে।’
অপরদিকে, সাঁওতালদের ঘরে পুলিশের আগুন দেওয়ার ভিডিওটি তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ভিডিওটি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশের কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ। ভিডিওটি নিয়ে পুলিশের সন্দেহও রয়েছে। তাই এটি যাচাই বাছাই করে দেখছেন তারা। গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত সরকার বলেন, ‘‘ঘটনার দিন প্রায় চার শতাধিক পুলিশ সদস্য কাজ করেছেন সেখানে। তাদের সঙ্গে পাঁচজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও র্যাব সদস্যরাও ছিলেন।’- বাংলাট্রিবিউন।
মন্তব্য চালু নেই