জীবন থেকে আজই বিদায় করুন ১০ বদভ্যাস

বাজে অভ্যাসের ফাঁদে পড়ে জীবনে পেরেশানি ডেকে আনবেন না। এগুলো মানুষের উৎপাদনশীলতা ও সৃষ্টিশীলতা নষ্ট করে।

আপনাকে যেকোনো লক্ষ্য অর্জনের পথে বাঁধা দেবে বদভ্যাস। স্বাস্থ্যগত কারণেও বদভ্যাসগুলো মারাত্মক ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন এমনই ১০টি বদভ্যাসের কথা। আজই এসব থেকে বেরিয়ে আসা উচিত বলেই মনে করেন তারা।
১. ক্ষুধা না থাকলেও খাওয়া: আপনি হয়তো এত ব্যস্ত যে, অজান্তে চিপস খেয়ে চলেছেন। অথচ আপনার ক্ষুধা লাগেনি। এতে বোঝা যায়, আপনার দেহ স্বাভাবিক ক্ষুধা লাগার প্রক্রিয়ার সঙ্গে খাপ খাচ্ছে না। ক্ষুধা মেটানোর পর তুষ্টি আসার সহজাত সংকেত দেহ প্রদান করতে পারছে না। এভাবে ক্ষুধা না থাকার পর না বুঝতে পারলে ওজন বৃদ্ধি ও ডায়াবেটিসের মতো রোগ দেখা দেবে।

যা করবেন: তাই প্রতিবার খাওয়ার আগে মনে করে দেখবেন, আসলে কি কারণে খাচ্ছেন আপনি। আর ক্ষুধা নিয়ে খাওয়ার সময় স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।

২. বিছানায় মোবাইল ব্যবহার: ঘুমের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এক অভ্যাস। প্রযুক্তি যন্ত্রের আলো মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করে দেয়। ফলে মেলাটনিন হরমোনের ক্ষরণ বন্ধ হয়ে যায়। এই হরমোন ঠিক করে আপনি কখন ঘুমাবেন। স্মার্টফোন বা ট্যাবে মন দেয় মস্তিষ্ক।

যা করবেন: ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে যেকোনো প্রযুক্তি যন্ত্র থেকে দূরে থাকতে হবে। এমনকি একে বিছানায় নিয়ে শোয়াও উচিত না। ঘুমানোর সময় এসব দূরে রাখুন।

৩. দোষ দেওয়া: বিজ্ঞানের গবেষণায় বলা হয়, কারো সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করা হলে তা পরিস্থিতিকে খারাপের দিকে নিয়ে যায়। কাউকে দোষ দিয়ে কিছু বলা হলে, যাকে বলছেন তিনি অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে পড়ে যান। তা ছাড়া আপনার সম্পর্কেও তার ভুল ধারণা গড়ে ওঠে।

যা করবেন: কারো সম্পর্কে বাজে কথা বলার অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসা সহজ কাজ নয়। ভেবে দেখবেন, এসব কথা বলে আসলে আপনার নিজের ব্যক্তিত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অন্যের কাছে। আপনি ভুল কথাও বলতে পারেন।

৪. গোছালো না থাকা: হয়তো আপনার অফিসের টেবিল বা ঘরটা এলোমেলো থাকে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এলোমেলো থাকা পেশাগত জীবনটাকে পিছিয়ে দেয়। এতে আপনার উৎপাদনশীলতা লোপ পেতে থাকে। আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করে এবং মানসিক চাপ বাড়ায়।

যা করবেন: গোছালো হতে সময় ও কার্যসূচি হাতে লিখে রাখুন। সে অনুযায়ী কাজ করুন। অফিস বা বাড়ি গোছানের সময়ও নির্ধারণ করে নিন। এ কাজগুলো নিয়মিত করতে হবে। যে জিনিসটা যেখানকার, তা সেখানেই রাখার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

৫. মাল্টিটাস্কিং: একযোগে একাধিক কাজ করেন অনেকে। মনে হয়, এতে সব কাজ একযোগে শেষ করা যায়। আসলে এটা ভুল ধারণা। এ পদ্ধতিতে কোনো কাজই সঠিকভাবে সম্পন্ন করা যায় না। ফলে মানসিক চাপ দেখা দেয়।

যা করবেন: মানুষের মস্তিষ্ক একযোগে একটির বেশি কাজ করতে পারে না। তাই একটি কাজ সঠিকভাবে করা অনেক বেশি ভালো।

৬. সঞ্চয়ের হিসাব না থাকা: জরুরি অবস্থা বা অবসর জীবনের জন্য, যে কারণেই হোক সঞ্চয়ের হিসাব না থাকা বড় ধরনের ভুল। কর্মজীবনের প্রথম থেকেই এ কাজটি করা উচিত।

যা করবেন: তাই আয়ের অন্তত ১০ শতাংশ সঞ্চয় করতে থাকুন। ব্যাংকে এমন ব্যবস্থা করুন যেন আপনার অন্য কোনো অ্যাকাউন্ট বা বেতনের অ্যাকাউন্ট থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সেখানে জমা হয়ে যায়।

৭. ঋণে জর্জরিত হওয়া: প্রয়োজনে ঋণ নিতে হয়। কিন্তু এটা আপনার দৈহিক ও মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটায়। অর্থ পরিশোধের চাপে উচ্চ রক্তচাপ, আলসার, হজমে সমস্যা, মাথাব্যথা, বিষণ্নতা এবং পেশির সংবেদনশীলতা তৈরি করে।

যা করবেন: খরচের হিসাবে লাগাম দিন। কিন্তু অর্থ বাঁচিয়ে নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করুন। যদি সুযোগ পান, তো একবারে শোধ করে দিন।

৮. গসিপ: কর্মক্ষেত্রে এটা কেবল আপনার সুনাম ক্ষুন্ন করে তাই নয়, মানসিকভাবেই বিপর্যস্ত করে তোলো। এই বদভ্যাসে সহকর্মীদের আস্থা হারাবেন। কিংবা অন্য কেউ গসিপে যুক্ত থাকলে সেখানে অবস্থান নেওয়ার অভ্যাসও রয়েছে অনেকের।

যা করবেন: এ থাকে দূরে থাকার চেষ্টা করবেন। তবে এটা সত্য যে, গসিপে যারা অংশ নেন তাদের মধ্য সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু যারা এতে অংশ নেয়, তাদের কেউ-ই পছন্দ করেন না। তাই এ থেকে সাবধান থাকাই ভালো।

৯. ধূমপান: এর ক্ষতিকর দিক নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। এর এমন কোনো দিক নেই যা উপকারী। বিভিন্নভাবে স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটায়। ধূমপান যেকোনো দিক থেকেই মারাত্মক ক্ষতিকর।

যা করবেন: ধূমপান ছেড়ে দেওয়া বেশ কষ্টদায়ক কাজ। কিন্তু চেষ্টা করলেই সম্ভব হয়। কাউন্সেলিং বা বিহেভিয়োরার থেরাপিস্টের সহায়তায় কাজটি সহজে করা যায়। আর তাই করতে পারেন।

১০. অজুহাত তৈরি: সব মানুষের জীবনে ব্যর্থতা আসে। অনেক কাজ সময়মতো করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। কি কারণে ব্যর্থতা এসেছে তার অজুহাত তৈরি না করে, ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করুন। এতে আরো বেশি উৎপাদনশীল ও সফল হয়ে উঠবেন।

যা করবেন: বাস্তবিক পরিকল্পনা করুন। ব্যর্থতার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখুন। ব্যর্থতা মানুষকে শিক্ষা দেয়। এই শিক্ষা গ্রহণ করতে না পারলে এগোতে পারবেন না। সূত্র: ইনক



মন্তব্য চালু নেই