যৌনমিলনের বিখ্যাত বই ‘কামসূত্র’ সম্পর্কে যে কথাগুলো আপনি জানেন না!

প্রাচীন ভারতের পণ্ডিত মল্লনাগ বাৎস্যায়ন রচিত সংস্কৃত সাহিত্যের যৌনাচার সংক্রান্ত গ্রন্থ ‘কামসূত্র’। গ্রন্থের উপজীব্য বিষয়বস্তু যৌনতা সংক্রান্ত ব্যবহারিক উপদেশ। গ্রন্থটি মূলত গদ্যে লিখিত; তবে অনুষ্টুপ ছন্দে রচিত অনেক পদ্যাংশও রয়েছে। কাম শব্দের অর্থ ইন্দ্রিয়সুখ বা যৌন আনন্দ। সূত্র শব্দের আক্ষরিক অর্থ সুতো বা যা একাধিক বস্তুকে সূত্রবদ্ধ রাখে। কামসূত্র শব্দটির অর্থ পুস্তকের আকারে যৌনকাজ জাতীয় উপদেশমালার গ্রন্থনা। এতে রমণীদের জন্য প্রযোজ্য চৌষট্টি কলা বিবৃত হয়েছে।

হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে শিবের দ্বাররক্ষক নন্দী কামশাস্ত্রের আদি রচয়িতা। তিনি শিব ও তার পত্নী পার্বতীর রমণকালে উচ্চারিত পবিত্র বাণী শুনে মুগ্ধ হন। পরে ‘মানবজাতির কল্যাণার্থে’ সেই বাণী লিখে রাখেন।

ঐতিহাসিক জন কেই মনে করেন, কামসূত্র একটি সারগ্রন্থ যা খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীতে বিভিন্ন রচনাসূত্র থেকে সংকলিত হয়ে তার বর্তমান রূপটি লাভ করে। পাঠকদের কামসূত্রের অজানা কিছু কথা জানানো হলো…

১. কামসূত্রে ৬৪টি যৌন ভঙ্গিমার (সেক্সুয়াল পজিশন) কথা বলা হয়েছে। এ বইতে বলা হয়েছে আট রকমভাবে ভালবাসা যায়। প্রতিটি ভালবাসায় ৮টি করে ‘সেক্সুয়াল পজিশন’ থাকে।

২. সংস্কৃততে কাম শব্দের অর্থ বাসনা, আর সূত্র শব্দের অর্থ নিয়ম। বাসনার মধ্যে সেক্সের পাশাপাশি বলা হয়েছে গান, পড়া, কবিতা, নাচকেও। বাংলাদেশ-ভারতে ‘কাম’ ও ‘কর্ম’ শব্দে একসময় কোন অর্থভেদ ছিল না। উপমহাদেশের কোন কোন ভাষা এখনো এ অর্থসম্পর্ক বহন করে।

৩. ১৮৮৩ সালে ব্রিটেনে ২৫০ কপি কামসূত্র বই বিক্রি হওয়ার পর নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৯৬৩ সাল থেকে বইটির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। বতর্মানে সর্বকালের সেরা বেশি বিক্রিত হওয়া বইয়ের তালিকায় একেবারে প্রথম দিকে আছে কামসূত্র।

৪. কামসূত্র বইতে ২০ শতাংশ সেক্সুয়াল পজিশনের কথা বলা হয়েছে। বইয়ের বাকি ৮০ ভাগে বলা হয়েছে কী করে ভাল নাগরিক হওয়া যায়। পুরুষ, নারীর সম্পর্ক কী করে ভাল থাকে।

৫. যেসব প্রেমিক-প্রেমিকা পিঠের ব্যথা, আর্থারাইটিস জাতীয় রোগে ভুগছেন তাদের কামসূত্র পজিশন চেষ্টা না করার সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে এ বইতে।

৬. ১৯৯৬ সালে কামসূত্রের ওপর তৈরি হওয়া ‘Kama Sutra – A Tale Of Love’ সিনেমাটিকে প্রথমে ভারতে রিলিজে ছাড়পত্র দেওয়া নিয়ে টালবাহনা করা হয়। ১৪টা কাটের পর সিনেমাটিকে ভারতে মুক্তির ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

৭. কামসূত্রে বলা হয়েছে কামড়ানো ও খামচানো ভালবাসা বাড়ানোর একটা বড় উপায়। এ জন্য আঙুলের নখ পরিষ্কার রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এ বইয়ে। দাঁত পরিষ্কার রাখার কথাও বলা হয়েছে। বইতে বলা আছে “The qualities of good nails are that they should be bright, well set, clean, entire, convex, soft, and glossy in appearance. The defects of teeth on the other hand are that they are blunt, protruding from the gums, rough, soft, large, or loosely set.”

৮. কামসূত্রে ঘর সুন্দর রাখার টিপস দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে ঘরে থুতু ফেলার আলাদা সুন্দর পাত্র রাখা উচিত, হাতির দাঁতের তারের বাজনা ঝুলিয়ে রাখা উচিত, পরিষ্কার ঘর ও নরম বিছানা ও অবশ্য ফুলের পাত্র রাখা উচিত।

৯. পরস্ত্রীদের সঙ্গে মিলনের জন্য আলাদা একটা অধ্যায় রাখা হয়েছে এ বইতে। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে বিবাহিত নারীদের সঙ্গে পরপুরুষদের শারীরিক মিলন বা ভালবাসা উচিত নয়।

১০. কামসূত্রে ৪০টি বিভিন্ন উপায়ে চুম্বনের কথা বলা হয়েছে। সেই উপায়গুলোকে দশ ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

১১. কামসূত্রে যৌন উদ্দীপক বা ভায়াগ্রার কথা বলা হয়েছে। এ বইতে বলা হয়েছে দুধের সঙ্গে ডিম সিদ্ধ, মাখন ও মধু মিশিয়ে খেলে পুরুষদের ভালবাসার জীবন অনেক বেশি রঙিন হয়।



মন্তব্য চালু নেই