আজও নির্মাণ করা হয়নি আত্রাইয়ের মিরাপুর বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ

কাজী আনিছুর রহমান, রাণীনগর (নওগাঁ) : নওগাঁর আত্রাই উপজেলার মিরাপুর বধ্যভূমিতে আজও নির্মিত হয়নি কোন স্মৃতিসৌধ। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের নেই কোন উদ্যোগ। ফলে ধীরে ধীরে শহীদদের স্মৃতিচিহ্ন মুছে যেতে বসেছে। যাদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে দেশ শক্রুমুক্ত হয়েছিলো, তাদের সন্মানে কিছু করতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন এলাকার একাধিক প্রবীণ ব্যক্তি। এদিকে এই বধ্যভ’মিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ না হওয়ায় শহীদ পরিবারের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

তথ্যঅনুসন্ধানে জানা যায়, ‘১৯৭১ সালের ১১ জুলাই ভোর রাত’ তখনও ফজরের আযান হয়নি। ওই সময় পাক-হানাদার বাহিনী দু’টি বড় বজরা নৌকাযোগে এসে উপজেলার মিরাপুর গ্রাম এবং পার্শ্ববর্তী নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রাম ঘেরাও করে মুক্তিকামী নিরস্ত্র সাধারণ মানুষদের আটক করে। পাকবাহিনী নামাজরত মুসল¬ীদেরকেও আটক করে। আটকৃতদের আত্রাই-নওগাঁ সড়কের পার্শ্বে মিরাপুর গ্রামের একটি বাঁশঝাড়ের মধ্যে একত্রিত করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করার অভিযোগে প্রায় ৩০ জনকে ওই বাঁশঝাড়ের মধ্যে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এছাড়াও ওই সময় বর্বর পাকহানাদার বাহিনী পাশ্ববর্তী রাণীনগর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের ৪/৫ জন নরীকে ধর্ষণ করে। কৃষ্ণপুর গ্রাম থেকে আটককৃত ১৭ বছরের স্কুল ছাত্র ওয়াহিদউদ্দিন মিলুকে সেদিন গুলি না করে ছেড়ে দেয় পাকবাহিনী। মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে যাওয়া ওয়াহিদ উদ্দিন মিলু বলেন, আমার চোখের সামনে প্রায় ৩০ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেদিন যাদেরকে হত্যা করা হয়েছিল তাদের মধ্যে ২৪ জন শহীদের নাম জানা গেছে। স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ৪৪ বছরেও এই বধ্যভূমির শহীদ পরিবারের কেউ খোঁজ নেয়নি। ঐ সব পরিবারের দাবি এখানে শহীদের স্মরণে বধ্যভ’মিটি সংরক্ষণ করে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হোক।

এ ব্যাপারে শাহাগোলা ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা মোঃ এমদাদুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, শাহাগোলা ইউনিয়নের নীরবে নিভৃতে মিরাপুর বধ্যভ’মির স্মৃতিচিহ্ন দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে। তিনি আরো জানান এই গণকবর ও বধ্যভ’মি সরকারী ভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা না হলে এক সময় হয়তো নতুন প্রজন্ম প্রিয় মাতৃভ’মির স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত মানুষ গুলো সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা থাকবে না।

এ ব্যাপারে আত্রাই উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আখতারুজ্জামান বলেন, বধ্যভ’মিটি সংরক্ষণে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নেওয়া দরকার। তা না হলে একদিন হয়তো বা বধ্যভ’মির স্মৃতিচিহ্ন মুছে যাবে। মিরাপুরে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মান আমাদেরও প্রাণের দাবি। আমরা বিষয়টি নিয়ে উপর মহলে লেখালেখিও করেছি।



মন্তব্য চালু নেই