ভালো খেলার পুরস্কারটা তো পেলাম না : তামিম
তাঁর গত বিপিএল শেষ হয়েছিল সর্বোচ্চ স্কোরার হয়ে। তবে চিটাগং ভাইকিংস কোয়ালিফায়ারের আগেই বাদ পড়ায় শেষমেশ শীর্ষ স্থানটা হারাতে হয়েছে তামিম ইকবালকে। এবার তেমনটা হয়নি, বলা ভালো হতে দেননি তামিম ইকবাল। এক ম্যাচ কম খেলেও সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের দৌড়ে মাহমুদ উল্লাহকে পেছনে ফেলেছেন ৮০ রানে।
এবারের বিপিএলে চিটাগং ভাইকিংস যদিও পুল পর্ব পেরিয়ে ঢুকেছে সেরা চারে, কিন্তু শিরোপা থেকে গেছে অধরাই। দলীয় সাফল্যের দৃষ্টিকোণ থেকে কেমন লাগছে আসরের সফলতম ব্যাটসম্যানের—সেটাই জেনেছেন সাইদুজ্জামান
প্রশ্ন : আপনি টপ করেন, কিন্তু দল পারে না—এটা কতটা পীড়া দেয়?
তামিম ইকবাল : কিছু তো হতাশাজনক বটেই। একজন ব্যাটসম্যান যদি বেশি রান করে, সে ব্যাটসম্যান তো দলের ফল ভালো আশা করতেই পারে।
গতবার অন্তত সেমিফাইনাল খেলা উচিত ছিল আমাদের। এবার আরো ভালো কিছুর আশা ছিল। হতাশ আমি এ কারণেই যে, ভালো করার পুরস্কারটা তো আর পেলাম না।
প্রশ্ন : কেন হচ্ছে না? প্রথমবারের ভুল থেকে তো নিশ্চয় কিছু শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু আবারও একই ভুল হলো।
তামিম : শুরুর দিকে কয়েকটি ম্যাচ হারার পর আমরা দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলে রেসে ফিরেছিলাম। কিন্তু শেষদিকে ছোট ছোট কিছু ভুলের মাসুল গুনেছি। ছোট এ ভুলগুলোরই চড়া মূল্য দিতে হয়েছে। ঢাকার সঙ্গে ১৭ ওভারে আমি আর শোয়েব মিলে ১২০ রানের মতো করেছিলাম। কিন্তু আমরা দুজন দ্রুত আউট হয়ে যাওয়ার পর ইনিংসটা বড় হয়নি। রাজশাহীর বিপক্ষে এলিমিনেটরে একই ঘটনা ঘটেছে, শেষ ২৪ বলে ২৪ রানও করতে পারিনি। আসলে স্থানীয় ক্রিকেটারদের থেকে যদি আরেকটু সাপোর্ট পেতাম, তাহলে শেষ পর্যন্ত টুর্নামেন্টে টিকে থাকতাম।
প্রশ্ন : দুবারই ভালো দল গড়েও প্রত্যাশিত রেজাল্ট পায়নি চিটাগং। যদি তুলনা করতে বলি, তাহলে কোনটা বেশি কষ্ট দিয়েছে আপনাকে?
তামিম : দুটোই খারাপ লেগেছে। গতবার খারাপ লেগেছিল একের পর এক জেতা ম্যাচ হেরেছিলাম বলে। এবার শুরুতে টানা হারের পরও যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম, সেটা গর্ব করার মতো। তবু শেষটা পারলাম না, দুঃখ এটা নিয়েও।
প্রশ্ন : একাদশের সাতজনই স্থানীয়। তাঁরা কেন পারলেন না?
তামিম : আমি বলব না যে তারা কেউ চেষ্টা করেনি। আবার টিম ম্যানেজমেন্টেরও কিছু ভুল ছিল। যেমন, অমি ভাই (জহুরুল ইসলাম) খুব ভালো টাচে ছিলেন। কিন্তু কম্বিনেশনের কারণে উনার ব্যাটিং অর্ডার বারবার চেঞ্জ হয়েছে। উনাকে আরেকটু ভালোভাবে ব্যবহার করা যেত। বিজয়ের (এনামুল হক) কাছ থেকে যা চেয়েছি, তা পাইনি। ওর ব্যাটিং আমি অসম্ভব পছন্দ করি। বিজয় যদি একটু ভালো খেলত, তাহলে আমাদের কাজটা ৪০ ভাগ সহজ হয়ে যেত। উদাহরণ দিয়ে বলি, আমার বড় ইনিংসের মতো ওর রানও দলকে সমান সাহায্য করত। কিন্তু সেটা হয়নি।
প্রশ্ন : বিদেশি ক্রিকেটাররা খুবই হাই প্রোফাইল। তো, তাঁরা কি প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছেন?
তামিম : ইমরান খান জুনিয়রের কাছ থেকে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি পেয়েছি। মোহাম্মদ নবীর বেলাতেও তাই, এতটা ভালো আশা করিনি। শোয়েব মালিকও প্রত্যাশা মিটিয়েছে। আর বাকি যারা ছিল, তাদের মধ্যে (ডোয়াইন) স্মিথের শুরুটা ভালো ছিল না। কিন্তু যখনই রিদমে এসেছিল কম্বিনেশনের কারণে ও বাদ পড়ে গিয়েছিল। এরপর ফিরল এলিমিনেটরে, তাতে ছন্দপতন অস্বাভাবিক নয়। একটা জায়গাতেই আমাদের সমস্যা হয়েছে, সেটা ক্রিস গেইলকে নিয়ে। আমরা সবাই জানি ও কী মানের প্লেয়ার। সবার আশা ছিল ও একা হাতে আমাদের ম্যাচ জিতিয়ে দেবে। এই প্রথম একসঙ্গে খেলে দেখেছি, গেইল নিজেও সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে ম্যাচ জেতানোর। কিন্তু হয়নি। একটা কথা আমি বিশ্বাস করি, আপনি খেলোয়াড় কিনতে পারেন কিন্তু পারফরম্যান্স বিক্রি হয় না।
প্রশ্ন : স্মিথ কিংবা গেইল—এঁদের কাউকেই ম্যাচ ফিট মনে হয়নি। তার পরও তাঁদের ঘিরে এত বেশি প্রত্যাশা কেন?
তামিম : গেইল ভালো খেলে ফেললে ওর ফিটনেসের বিষয়টা আর চোখে পড়ে না। বড় রান করতে না পারাতেই এ বিষয়গুলো আলোচনায় আসছে। আমরা কিন্তু এ বিষয়গুলো জেনেবুঝেই ওকে নিয়েছি। গেইলের জন্য আপনি এগুলো স্যাক্রিফাইস করতে পারেন।
প্রশ্ন : আপনার দলের গেইল কিংবা সাকিব আল হাসানের দলের আন্দ্রে রাসেলের জন্য ফ্র্যাঞ্চাইজিরা অবিশ্বাস্য অঙ্ক খরচ করেছেন বলেই শুনেছি। সে তুলনায় দেশের শীর্ষ তারকাদের পারিশ্রমিক নস্যি। ইগোতে লাগে না?
তামিম : এটা আপনাকে মানতে হবে যে এ ফরম্যাটের কিছু স্পেশাল প্লেয়ার আছে। তারা শুধু ম্যাচই জেতায় না, টুর্নামেন্টের আকর্ষণও বাড়ায়। হয়তো এ কারণেই ওরা এত বেশি পায়। তবে একইসঙ্গে এটাও মনে হয়, অন্য সব দেশের এমন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া ক্রিকেটারটি সেদেশেরই। বোর্ড (বিসিবি) আমাদের জন্য অনেক কিছু করছে। আশা করি বোর্ড এ বিষয়টিও দেখবে।
প্রশ্ন : বিষয়টা শুধু বোর্ডেরই না, ফ্র্যাঞ্চাইজিরও। খুলনা টাইটানস তো নাকি আইকনের চেয়ে বেশি পারিশ্রমিক দিয়ে বিদেশি কাউকে আনেনি। এটা তো অন্যরাও অনুসরণ করতে পারত!
তামিম : এটা আসলে আপনার মাইন্ডসেটের ওপর। আপনি কি লোকাল প্লেয়ারদের বেশি পারিশ্রমিক দিয়ে ক্রিকেটকে প্রোমোট করতে চান নাকি বিদেশিদের দিতে চান। আবার এ নিয়ে আমাদের অভিযোগ করারও কিছু নেই। ফ্র্যাঞ্চাইজি দল বানায়, ইচ্ছাটা তাই তাদেরই। তবে একটা ব্যাপার কি জানেন, টুর্নামেন্ট শেষে আলোচনা ওঠে আইকনদের পারফরম্যান্স নিয়েই। সাকিব কেমন করল, মুশফিক কিংবা রিয়াদ ভাইয়ের (মাহমুদ উল্লাহ) পারফরম্যান্স নিয়েই কাটাছেঁড়া হবে।
প্রশ্ন : সব ধরনের ক্রিকেটই তো খেলেন। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের একটা বিশেষত্ব যদি বলেন…
তামিম : ম্যাচে যে একটা দলই জিতে, ফ্র্যাঞ্চাইজিদের এটা মানানো কঠিন (হাসি)!
প্রশ্ন : তার মানে তো প্রচণ্ড চাপে ছিলেন!
তামিম : আমরা খেলোয়াড়রা কোনো চাপ অনুভব করিনি। কোচই (মোহাম্মদ সালাউদ্দিন) সব কিছু সামলেছেন। আর আমাদের মালিক খুবই ক্রিকেট অনুরাগী, ভালো মানুষও।-কালেরকন্ঠ
মন্তব্য চালু নেই