বড় তারকা হয়েও এবারের বিপিএলে লজ্জিত তারা!
ক্রিকেট বিশ্বের বড় তারকা তারা। কিন্তু পারফর্মের বিচারে এবারের বিপিএলে অংশ নিয়ে লজ্জিত তারা। মোটা অংকের টাকা নিলেও মোটেই তৃষ্ণা মেটাতে পারেননি গেইল। ‘আমাদের হয়তো তার কাছ থেকে আরও বেশি আশা ছিল। সেটা পূরণ করতে না পারলেও ও মনপ্রাণ দিয়েই চেষ্টা করেছে।’
এলিমিনেটরে হেরে কিছুক্ষণ আগে চিটাগং ভাইকিংস বিদায় নিয়েছে টুর্নামেন্ট থেকে। ম্যাচের পরই সংবাদ সম্মেলনে এসে সতীর্থ ক্রিস গেইলকে নিয়ে কথাগুলো বললেন ভাইকিংস অধিনায়ক তামিম ইকবাল। সেদিন সংবাদ সম্মেলনে কোনো সতীর্থকে নিয়েই নেতিবাচক কিছু বলেননি তামিম, বরং অভিনন্দন জানিয়েছেন সবাইকে। গেইলের ক্ষেত্রেও একই।
তবে একটু হতাশাও কি ছিল না তামিমের? বা চিটাগাং সমর্থকদের? বড় আশা করে নিয়ে আসা হয়েছিল বিপিএলে আগের তিন আসরে তিনটি সেঞ্চুরি করা গেইলকে। গেইলও এসে বেশ তাঁর মতো করে আওয়াজ তুললেন—এবার হবে ছক্কা বৃষ্টি। কিন্তু এবার একটা ফিফটিও আসেনি টি-টোয়েন্টির ফেরিওয়ালার ব্যাট থেকে।
মোট রান মিলিয়েই সেঞ্চুরি পেরিয়েছে একটুর জন্য, ৫ ম্যাচে রান ১০৯। গেইলের ব্যাট যা একটু-আধটু হেসেছে রাজশাহী কিংস ও রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ম্যাচে, দুটিতেই অবশ্য আউট চল্লিশের ঘরে। সর্বোচ্চ ৪৪, রাজশাহীর বিপক্ষে।
সবচেয়ে বেশি হতাশ করেছেন সৌম্য সরকার। কি জাতীয় দল, কি ঘরোয়া ক্রিকেট—রানই যেন হারিয়ে গেছে তাঁর ব্যাট থেকে। ১২ ম্যাচে রান করেছেন মাত্র ১৩৫। সর্বোচ্চ ইনিংসটাই মাত্র ২৬ রানের! ১২.২৭ গড়, সৌম্য ঠিক রংপুরের ‘আইকন’ হতে পারেননি।
ব্যাটসম্যানদের তালিকায় ২১ নম্বরে, বোলিংয়ে সাকিব ১৩-এর বাইরে! শুধু বরিশাল বুলসের বিপক্ষে ৬৯ রানের একটা ইনিংস বাদ দিলে ডোয়াইন স্মিথের বিপিএলও কেটেছে হতাশায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিস্ফোরক এই ব্যাটসম্যান চিটাগং ভাইকিংসের হয়ে আটটি ম্যাচ খেলেছেন, রান করেছেন মাত্র ১৬৩। বরিশালের সঙ্গে
ম্যাচটি বাদ দিলে বাকি সাত ম্যাচে মাত্র ৯৪! অবশ্য চার-ছক্কা ভালোই মেরেছেন স্মিথ। চার ১৯টি, ছক্কা ৬টি।
১৩ ম্যাচে ১২ ইনিংস, তাতে ২১৪ রান। বল হাতে ১১ উইকেট। সাকিব আল হাসানের পারফরম্যান্স কেমন ছিল? একদমই সাকিবীয় নয়। বরং বেশ ওপরের দিকে ব্যাটিং করেছেন, ১২ ইনিংসের ১০ বারই আউট হয়েছেন—ব্যাট করার যথেষ্ট সুযোগ পাননি এমন দাবি করার সুযোগ নেই। সেই সাকিব রান করাদের তালিকায় পড়ে আছেন ২১ নম্বরে। সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় ১৩ জনের মধ্যেই নেই।
একেকটা উইকেট পেতে খরচ করেছেন ২৮ রান। কোনো ম্যাচেই ২টির বেশি উইকেট নেই। গত বিপিএলের চমক ছিলেন আবু হায়দার। দেশি বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট (১৯টি) নিয়ে নিজেকে চিনিয়েছিলেন। এবারও তাঁর ওপর প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু এবার উদযাপনের সুযোগই আবু হায়দার পেলেন মাত্র চারবার। ৭ ম্যাচে ২৫ ওভার করে বরিশাল বুলস পেসার উইকেট পেলেন মাত্র চারটি!
ডোয়াইন ব্রাভো আর শহীদ আফ্রিদিরাও নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। ব্রাভো অলরাউন্ডার পরিচয় ভুলে পুরোদস্তুর বোলার হয়ে গেছেন। ১২ ম্যাচে ২০ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হয়েও কেন ফ্লপ তালিকায়? ব্যাটিংয়ে যে ৮ ইনিংসে রান করেছেন মাত্র ৯১। প্রথম দিকে ওপরে ব্যাটিং করলেও ফর্ম দেখেই নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল টপঅর্ডার থেকে। ব্যাটসম্যান ব্রাভো মোটের পর ফ্লপ।
আফ্রিদিরও গল্পটা একই। ১১ ম্যাচে রংপুর রাইডার্স অলরাউন্ডার উইকেট নিয়েছেন ১৭টি। কিন্তু ব্যাট হাতে ঠিক অতটা আলো ছড়াতে পারেননি। ৮ ইনিংসে রান ১১৯। ‘আফ্রিদি-ঝড়’ দেখার সুযোগ এক ম্যাচেই যা পেয়েছিলেন রংপুর সমর্থকেরা, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বিপক্ষে। ১৯ বলে তিন চার আর দুই ছক্কায় করেন ৩৮ রান।
প্রথম আলোকুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ব্যাটসম্যানদের মধ্যে লিটন দাসের ব্যর্থতাটা চোখে লেগেছে। ১১ ম্যাচের মধ্যে ৭ বার ব্যাট হাতে নেমেছেন এই ব্যাটসম্যান। কিন্তু রান? মাত্র ৬৪, সর্বোচ্চ ২৪। শুধু কুমিল্লার হিসেব করলে গত আসরের বিস্ময় আসহার জাইদি এবার হতাশ করেছেন। এবার সুযোগই পাননি, খেলেছেন মাত্র তিনটি ম্যাচ। রান করেছেন ২৯, উইকেট? একটিও নেই!
ঢাকা ডায়নামাইটসের জন্য হতাশা হয়ে এসেছে রবি বোপারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনের পারফরম্যান্স। এমনই যে, দুজন সুযোগই পাননি খুব বেশি ম্যাচে। দুই ম্যাচে ব্যাট হাতে নেমে জয়াবর্ধনে করেছেন মাত্র ৪২ রান। বোপারা অবশ্য ম্যাচ খেলেছেন ৬টি। তাতে ব্যাট হাতে হতাশ, রান করেছেন মাত্র ৩৫, বল হাতে যদিও পাঁচ উইকেট নিয়েছেন।
বাংলাদেশের বোলারদের হিসেব করলে চোখে লেগেছে সাকলাইন সজীবের ব্যর্থতা। ঘরোয়া ক্রিকেটে অন্যতম প্রতিভাবান এই বাঁহাতি স্পিনার ৮ ম্যাচে ২৭ ওভার করেও উইকেট নিয়েছেন মাত্র ৫টি।
গতবার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের হয়ে ফাইনালে দুর্দান্ত খেলা অলক কাপালি এবার ব্যর্থ। খেলেছেন এবার খুলনা টাইটানসে, সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ছয়টি ম্যাচে। তাতে ব্যাটও হাসেনি। কাপালি রান করেছেন মাত্র ৪৩, সর্বোচ্চ ২৩। বল হাতে দুটি ওভার করেছিলেন, তাতে উইকেট পাওয়ার অবশ্য তিনিও করেছিলেন কি না, সন্দেহ আছে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য বড় হতাশা হয়ে এসেছে মেহেদী হাসান মিরাজের পারফরম্যান্স। অবশ্য ব্যাট করারই তো তেমন সুযোগ পাননি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের নায়ক এই তরুণ অলরাউন্ডার, বেশির ভাগ সময় নেমেছেন শেষদিকে। বল হাতে ১৪ ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়েছেন। তবে ব্যাট হাতে পারফরম্যান্সটা করুণ, ১৪ ম্যাচে ১০ ইনিংস। রান করেছেন ৭৮, সর্বোচ্চ ৪১।
অবশ্য মিরাজ ব্যাট হাতে নিজেকে সেভাবে মেলে ধরার সুযোগও পেয়েছেন কম।
এই ‘ফ্লপ’দের অনেকেই আজ নামার সুযোগ পাচ্ছেন, বাকিরা বিদায় নিয়েছেন। কে জানে, সেরাটা হয়তো আজকের জন্যই জমিয়ে রেখেছেন সাকিব-ব্রাভোরা!
মন্তব্য চালু নেই