নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগে ব্যাপক প্রস্তুতি

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভেদ যেন ফলাফলে প্রভাব না ফেলে সে জন্য প্রচারের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের হাতে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। এ জন্য মূল দল ও সহযোগী সংগঠনের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়া হয়েছে।

আজ এই নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ শেষে শুরু হবে আনুষ্ঠানিক প্রচার। আর ভোট হবে ২২ ডিসেম্বর।

এই নির্বাচনে সেলিনা হায়াৎ আইভীকে প্রার্থী করার পরই ক্ষমতাসীন দলে পুরনো বিভেদ নির্বাচনে কতটা প্রভাব ফেলবে-এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আইভী ও দলের ভেতর তার প্রতিদ্বন্দ্বী নেতা শামীম ওসমানকে ঢাকায় ডেকে এনে কথা বলেছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর শুক্রবার দলের পাঁচ কেন্দ্রীয় নেতা ঘুরে এসেছেন নারায়ণগঞ্জ। কথা বলেছেন, দলের বিরোধী দুই অংশের নেতাদের সঙ্গে। এসব উদ্যোগের পরও সংশয়-সন্দেহ কাটছেই না।

এই অবস্থায় নারায়ণগঞ্জের বিভেদ যেন নির্বাচনে প্রভাব না ফেলে সে জন্য নির্বাচনী প্রচারে আটঘাঁট বেঁধে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে কয়েকটি টিম করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সবকিছু সমন্বয় করছেন, তার দায়িত্ব পালন করবেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মণি।

দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ যেহেতু সংসদ সদস্য নন তাই তিনি নারায়ণগঞ্জে নিয়মিত যাবেন, সেখানে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাবেন। আর ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুহিবুল হাসান চৌধুরী নারায়ণগঞ্জ থেকেই নির্বাচন প্রচার-প্রচারণা পরিচালনা করবেন।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, নির্বাচনে প্রচারণার জন্য ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ নেতাদের একটি অংশ নিয়মিত যাবেন। তাদের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করে দিতে গত শনিবার দলীয় সভাপতি রাজনৈতিক কার‌্যালয়ে একটি বৈঠক হয়। এতে ছাত্রলীগের যেসব নেতাকর্মী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ভোটার অথচ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে তাদের প্রচারণায় অংশ নিতে হবে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সমন্বয় করবেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম।

নারায়ণগঞ্জে বিভেদ মেটাতে বৈঠক কতটা ফলপ্রসূ

গত শুক্রবার নারায়ণগঞ্জে পাঁচ ঘণ্টার এই বৈঠকে মহানগর, জেলা এবং সহযোগী সংগঠনের প্রায় ৩২ জন নেতা বক্তব্য দেন। সেখানেও সেলিনা হায়াৎ আইভীর একটি বক্তব্য নিয়ে আপত্তি জানায় কয়েকজন।

বৈঠকে উপস্থিত নারায়ণগঞ্জের একজন নেতা বলেন, ‘তৃণমূল থেকে যে প্রার্থী তালিকা পাঠানো হয়েছিল তা থেকে কেন প্রার্থী বাছাই করা হয়নি সে বিষয়টি উত্থাপন করেছিলাম আমরা। পরে কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের বলেছেন, আপনারা যাদের নাম পাঠিয়েছেন তাদের মধ্যে আনোয়ার হোসেনকে জেলা পরিষদের প্রশাসক পদে দলীয় সমর্থন দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে।’

আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন বলেন, শুক্রবারে বৈঠকটি ফলপ্রসূ হয়েছে। সেখানে তৃণমূল নেতাদের বক্তব্যে কোনো ক্ষোভ ছিল না। সবাই বলছে ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সেদিন কর্মীদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে, সাংগঠনিক প্রয়োজনে জাতীয় প্রতীক নৌকাকে বিজয়ী করার জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যোগ্য প্রার্থীকে বাছাই করেছেন।’

আইভীর বিরোধী নেতারা কী বলেছেন-জানতে চাইলে মুহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘ভোটের রাজনীতিতে তারা বিষয়টি মেনে নিয়েছে। এ কারণে তারা শেখ হাসিনার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে বলে আমাদের জানিয়েছেন।’



মন্তব্য চালু নেই