সেক্স করিনি : জুপিটার ঘোষ
শুধু ক্যারিয়ার নয়, ২৭ বছরের জীবনে এর আগে এমন বিব্রতকর অবস্থায় পড়েননি তিনি। অভিযোগ আর সন্দেহের তীর একের পর এক যেভাবে ধেঁয়ে আসছে, তাতে বুঝে উঠতে পারছেন না কী করবেন! তবে জুপিটার ঘোষ নিজেকে চেনেন, তাইতো স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন, ‘আমি কোন অন্যায় করিনি। সব অভিযোগের মুখোমুখি হবো। আমার বিরুদ্ধে যে চক্রান্ত শুরু হয়েছে, তার শেষ দেখতে চাই।’
মনোবল এতোটা চাঙ্গা থাকলেও এটা সত্য যে খুলনার এই প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটারের ক্যারিয়ারই নয়, ব্যক্তি জীবনেও ঝড় উঠেছে। ফেসবুক, ইউটিউব আর কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলে খবর বেরিয়েছে, অনৈতিক কাজ করতে গিয়েই রংপুর রাইডার্স থেকে বহিষ্কার হয়েছেন তিনি। যদিও তার আগেই জুপিটার জানিয়েছিলেন, তাকে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন রংপুরের ম্যানেজার সানোয়ার হোসেন। সেই প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় বহিষ্কার করা হয়েছে তাকে।
যদিও তেমন অভিযোগের পরই রাজধানীর বিলাসবহুল হোটেল লা মেরিডিয়ানের কিছু সিসিটিভি ফুটেজ এসেছে মিডিয়ার হাতে। যেখানে দেখা গেছে- ২ নভেম্বর মাঝরাতে একজন নারীকে নিয়ে জুপিটার তার হোটেল রুমে যাচ্ছেন। এরপর ৪০ মিনিট রুমে অবস্থানের পর দু’জনকে আবার একসঙ্গে বেরিয়ে আসতেও দেখা গেছে। রাইডার্স কর্তৃপক্ষের দাবী, ম্যানেজারের অনুমতি না নিয়েই মাঝরাতে হোটেলে একজন নারীকে নিয়ে যান জুপিটার।
কিন্তু সময়ের আলোচিত এই ক্রিকেটার শনিবার পরিবর্তন ডটকমকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘দেখুন, ফুটেজে দেখা গেছে একজন মেয়েকে নিয়ে আমি রুম ১০৭০ নম্বরে যাচ্ছি। এটা আমি অস্বীকার করছি না। যে কেউ আমার রুমে যেতেই পারে। তবে আমি বুঝতে পারছি, ওরা ইঙ্গিত করছে, সেই মেয়েটির সঙ্গে আমার শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে, তাইতো? এমন বাজে ইঙ্গিত যখন হচ্ছেই তবে আমিও চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি। চলুন সব কিছু পরিষ্কার করে নেই। বিসিবি-রাইডার্স কর্তৃপক্ষ সবাইকে নিয়ে চলুন বসি। আর সেই মেয়েটিকে ডাকি। এখন তো চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেক এগিয়েছে। আমার সেই নারী বন্ধুটির ডিএনএ টেস্ট করলেই তো সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে। আমি আবারো বলতে চাই, সেদিন হোটেল রুমে আমি সেক্স করিনি। এটা নিয়ে আমি চ্যালেঞ্জ করলাম।’
জুপিটার জানালেন, বিপিএলে মধ্যরাতে নারী মডেল নিয়ে পার্টি নতুন কিছু নয়। এনিয়ে কোন নিষেধাজ্ঞাও নেই। পরিবর্তনকে তিনি বলছিলেন, ‘এটা নিয়ে আর কী বলবো, মন খারাপ হয়ে যায়। ১০ নভেম্বরের কথা বলতে পারি আমি, এদিন তো লা মেরিডিয়ানে অনেকেই মডেল নিয়ে এসেছিলেন। রাতভর পার্টি হয়েছে। তাদের তো কোন বিচার হয়নি! আমার বেলাতেই শুধু তথাকথিত এই নিয়ম ভাঙ্গার অভিযোগ!’
৭টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলা এই ক্রিকেটার আরো বলছিলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজে আমাকে নিয়ে যা প্রচার করা হচ্ছে, তা কেবলই খণ্ড চিত্র। পুরোটা দেখলে বুঝতে পারতেন যে সেদিন রাতে আমার রুমে আরো অনেকেই গিয়েছিলেন।’
এখন অবশ্য পুরো বিষয়টা শুধু জুপিটার কিংবা রংপুর রাইডার্সের হাতে নেই। বিসিবির অ্যান্টি করাপশন ইউনিট (আকসু) তদন্ত করছে সবকিছু। যেখানে এরইমধ্যে হাজিরা দিয়েছেন জুপিটার। তাকে যে পাতানো ম্যাচ খেলার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, সেটা বলেছেন। আবার রাইডার্স কর্তৃপক্ষ হোটেলের সেই সিসিটিভি ফুটেজ পাঠিয়েছে বিসিবির কাছে। আবার বিসিবি সানোয়ার-জুপিটার দুজনের উপরই সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
অবশ্য এই বিপিএলেই নারীঘটিত ব্যাপারে জড়িয়ে এরইমধ্যে বড় অংকের জরিমানার মুখোমুখি হয়েছেন সাব্বির রহমান এবং আল আমিন হোসেন। বলা হচ্ছে ক্রিকেট ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বড় অঙ্কের জরিমানা। সাব্বিরের বিপিএল পারিশ্রমিকের এক-তৃতীয়াংশ এবং আল-আমিনের পারিশ্রমিকের অর্ধেক কেটে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এ+ ক্যাটাগরির ক্রিকেটার হিসেবে সাব্বিরের পারিশ্রমিক ৪০ লাখ টাকা। সেই হিসেবে তার প্রায় ১৩ লাখ টাকা কাটা হবে। আল আমিন এ ক্যাটাগরিতে থাকায় পারিশ্রমিক ২৫ লাখ টাকা। ৫০ ভাগ কাটার অর্থ সাড়ে ১২ লাখ টাকা পাবেন না তিনি।
তবে জুপিটারের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ক্যারিয়ারটাই শঙ্কার মুখে পড়তে পারে। তিনি অবশ্য ভয় পাচ্ছেন না। বলছিলেন, ‘এনিয়ে আমি আর ভয় পাচ্ছি না। এখানে একটা সমস্যা চলছে, তার সমাধানও হবে। দেখুন, আমাকে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল, আমি না করেছি। আমাকে তো বরং পুরস্কৃত করা উচিত!’
মন্তব্য চালু নেই