মুখে গর্ত, একটু চেষ্টায় ভরাট করা যায়!

আমরা সবাই কম-বেশী ব্রণ সমস্যায় ভুগে থাকি। ব্রণ আমাদের সুন্দর মুখে ভিলেন হিসেবে কাজ করে, আত্মবিশ্বাসও কমিয়ে দেয় কয়েকগুণ।

সাধারণত নানা রকম প্রসাধনী মেখে বা ওষুধ খেয়ে আমরা ব্রণ সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করি। একসময় হয়তো ব্রণ সমস্যা কিছুটা মিটেও যায়, কিন্তু সত্যিকার অর্থে এর সমাধান হয় কি? জেদী ব্রণ বিদায় নিলেও রেখে যায় কিছু চিহ্ন, যেমন : দাগ, মুখে গর্ত, যা আপনার সৌন্দর্য নষ্ট করে। তাহলে এখন উপায়?

গবেষকদের মতে, নানা কারণেই ব্রণ হতে পারে। ব্রণ যে কোনও বয়সের মানুষের ত্বকেই দেখা দেয়, কিন্তু টিনএজারদের ত্বকে ব্রণ বেশি হয়ে থাকে। তৈলাক্ত ত্বকেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্রণ দেখা যায়।

পিউবার্টি বা বয়ঃসন্ধিকালে হরমোন টেস্ট্রোরেন আর প্রোজেস্ট্রোরেনের প্রভাবে ত্বকের সিবেসিয়াস গ্রন্থি বেশি করে তেল নিঃসরণ শুরু করে। তবে এই তেল বের হয়ে আসতে পারে না। কারণ তেল বেরিয়ে আসার পথটি ক্রটিযুক্ত থাকে। তাই তেল গ্রন্থির ভিতর জমতে শুরু করে। জমতে জমতে এক সময় গ্রন্থিটা ফেটে যায়।

ফলে তেল আশপাশের টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়ে। তখন ব্যাকটেরিয়া তেলকে ভেঙে টিস্যুতে ফ্যাটি এসিড তৈরি করে। এই ফ্যাটি এসিড ত্বকের ভেতর সৃষ্টি করে প্রদাহ। এর ফলে চামড়ার মধ্যে দানার সৃষ্টি হয়। যা ব্রণ নামে পরিচিত।

ব্রণ স্বাভাবিকভাবেই ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট করে থাকে। ব্রণের ক্ষত দাগকে মূলত একনে স্কার বলা হয়। ব্রণ হাত দিয়ে খুঁটলে এমন দাগ দেখা দেয় ত্বকে। আর এই ক্ষত দাগগুলোকে ত্বক হতে খুব সহজে মুছে ফেলা যায় না।

এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই কিছু প্রাকৃতিক উপায়ে এই গর্ত ও দাগগুলো সারিয়ে ফেলা যায়। তবে একটু সবুর করতে হবে, জানেন তো সবুরে মেয়া ফলে। তাহলে দেরি কেন? আসুন জেনে নিই কী সেই উপায়, যার সাহায্যে ব্রর্ণের গর্ত ভরাট করা যায় :

ভিটামিন-ই তেল : ব্রণের গর্তের দাগ সারানোর জন্য সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর সমাধান হচ্ছে ভিটামিন-ই তেল। এটি ব্রণের গর্তে যাদুর মত কাজ করে। প্রতিদিন অল্প পরিমাণে ভিটামিন-ই তেলের ব্যবহারে আপনার মুখমণ্ডল হয়ে উঠবে দাগহীন, উজ্জ্বল।

প্রথমে সমস্ত মুখমণ্ডল তেল মুক্ত ফেস ওয়াস দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। এরপর একটা পরিষ্কার পিন বা সূঁচ এর সাহায্যে ক্যাপসুলটি ফুটো করে তেল নিঃসরণ করুন। তারপর পরিষ্কার হাত দিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন। খুব বেশি তৈলাক্ত ত্বক হলে লাগানোর আধ ঘণ্টা পর টিস্যু পেপার দিয়ে অতিরিক্ত তেল চেপে চেপে তুলে নিন। নয়ত সারা রাত লাগিয়ে রাখতে পারেন। এটা সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করুন।

লেবু : লেবু সাইট্রিক এসিডের অন্যতম একটি উৎস। কয়েক গ্লাস লেবুর শরবত পান করলে তার সাইট্রিক উপাদান আপনার দেহের ভেতর থেকে মরা কোষ সারিয়ে ত্বকের রঙ হালকা করতে সাহায্য করে। একটি মাঝারি আকারের লেবুর রস সমপরিমাণ পানির সঙ্গে মিশিয়ে মুখে ঘষুণ, এতে গর্তের দাগ হালকা হবে।

অ্যালোভেরা জেল : অ্যালোভেরা জেল প্রকৃতির আশীর্বাদ স্বরূপ। এই একটা উপাদান ত্বকের নানা রকম সমস্যা থেকে মু্ক্তি দেয়। প্রথমেই একটি আস্ত অ্যালোভেরা নিয়ে সেটিকে ছুঁরির সাহায্যে যে কোনও এক দিক থেকে কাটুন। কাটলেই দেখবেন ভেতরে স্বচ্ছ জ়েলীর মত উপাদান, এটি ব্যবহার করুন। দিনে যতবার ইচ্ছা ব্যবহার করতে পারেন। এটি আপনাকে দেবে বিরক্তিকর ব্রণের গর্তের দাগ থেকে মুক্তি।

টমেটো : টমেটোতে আছে ভিটামিন ‘এ’ যা ব্রণ ও ব্রণের দাগ দুটোই সারিয়ে তোলে। তাছাড়া এতে আছে ত্বকের ক্ষয়-ক্ষতি সারিয়ে তুলার প্রচুর পরিমাণে এন্টি-অক্সিডেন্ট। মাঝারি আকারের টাটকা টমেটো নিন। একে সমান ২ ভাগে ভাগ করুন। এবার দুই গালে ম্যাসাজ করুন। এতে গর্তের দাগ হালকা হবে এবং মুখে রোদে পোড়া ভাবও কমবে।

অলিভ ওয়েল : এক্সট্রা ভারজিন অলিভ ওয়েল দ্রুত ব্রণের গর্ত সারাতে সাহায্য করে। অলিভ ওয়েলের ময়েশ্চারাইজিং গুণাগুণের কারণে এটি দ্রুত ত্বকের সঙ্গে মিশে যায় এবং গর্ত সারাতে সাহায্য করে। অল্প পরিমাণে অলিভ ওয়েল নিয়ে মুখমণ্ডলে মালিশ করুন এবং ভালো ফল পেতে ঘুমুতে যাওয়ার আগে ব্যবহার করুন।

মধু : মধু একটি পরিচিত প্রাকৃতিক প্রসাধনী। ফ্যাট কম থাকায় এটি আপনাকে ফিট থাকতে যেমন সাহায্য করে তেমনি নিয়মিত ব্যবহারে সারিয়ে তোলে ব্রণের গর্তের দাগ।

বরফ কুচি : পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, বরফ কুচির ব্যবহারে ব্রণের গর্ত হালকা হয়। পাতলা কাপড় বা তুলোতে একটা বরফের টু্করো নিয়ে গর্তের জায়গায় ১৫-২০ মিনিট ঘষে লাগান। এতে ত্বকে গর্তের দাগ মিশে যাবে।

এছাড়া ব্রণের গর্ত সারাতে আপনার ফেস প্যাকে মেশান বেসন, টকদই ও শশার রস। এই ফেস প্যাকে ব্যবহারে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে, উজ্জ্বল, প্রাণবন্ত, দাগহীন। আপনাকে দেখাবে আরও সুন্দর এবং বাড়াবে আত্মবিশ্বাস।



মন্তব্য চালু নেই