নিত্যদিনের যে ১০ অভ্যাস আপনার উৎপাদনশীলতা ও সাফল্য ধ্বংস করছে
আপনি হলেন গিয়ে আপনার অভ্যাসগুলোর সমষ্টি। আপনি যদি বাজে অভ্যাস রপ্ত করেন তাহলে সেগুলো আপনার সাফল্যের পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে। অথচ আপনি টেরই পাবেন না কখন আপনি বদঅভ্যাসগুলো রপ্ত করে ফেলেছেন এবং কখন সেগুলো আপনার ক্ষতি করা শুরু করেছে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক নিত্যদিনের এমন ১০টি বদঅভ্যাস যেগুলো আপনার অজান্তেই আপনার সাফল্যের পথে বাধা হয়ে উঠছে:
১. বিছনায় বসে বা শুয়ে ফোন, ট্যাবলেট ও কম্পিউটার ব্যবহার করা
এই বদঅভ্যাসটি ঘুম এবং উৎপাদনশীলতার জন্য কতটা ক্ষতিকর তা লোকে সহজে উপলব্ধি করতে পারেন না। এসব যন্ত্র থেকে বের হওয়া ক্ষুদ্র তরঙ্গের নীল আলো মেজাজ-মর্জি, দৈহিক শক্তির মাত্রা এবং ঘুমের গুনগত মানের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এতে সবচেয়ে বেশি ব্যাঘাত ঘটে ঘুমের।
২. ঝোঁকের বশে ইন্টারনেটে ঘুরে বেড়ানো
কেনো পুরোপুরি মনোযোগ দিতে টানা ১৫ মিনিট সময় লাগে। এরপর উৎপাদনশীলতা বাড়তে থাকে। ফলে কাজের ফাঁকে ইন্টারনেটে ফেসবুক বা কোনো সংবাদ সাইটে একটু ঢু মারার পর পুনরায় কাজে মন বসাতে আরো ১৫মিনিট সময় লাগবে। এই সময়টুকু শুধু শুধুই অপচয় হবে। যা আপনার উৎপাদনশীলাত নষ্ট করবে।
৩. কথপোকথনের সময় ফোন চেক করা
কথপোকথনের সময় মোবাইলে একটি খুদে বার্তা আসা বা একনজরে কল চেক করার মতো আর কোনো কিছুই লোককে এতোটা বেশি বিরক্ত করে না। আপনি যখন কারো সঙ্গে কথোপকথনে লিপ্ত হবেন তখন আপনার পুরো শক্তি তাতেই নিয়োজিত করুন। আপনি দেখতে পাবেন যে, কথপোকথনে পুরোপুরি ডুব দিতে পারলে তা অনেক উপভোগ্য হয়ে উঠছে।
৪. একাধিক নোটিফিকেশন ব্যবহার করা
গবেষণায় দেখা গেছে যতবার আপনার ফোন বা ইমেইলে নোটিফিকেশন আসে ততবারই যদি আপনি তাতে মনোযোগ দেন তাহলে আপনার উৎপাদনশীলতা কমে যাবে। সুতরাং একটি নির্দিষ্ট সময়েই শুধু সেগুলো চেক করুন।
৫. যখন “না” বলা উচিৎ তখন “হ্যাঁ” বলা
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সানফ্রান্সিসকোতে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, আপনি “না” বলার ক্ষেত্রে যত কম সক্ষমতা দেখাবেন আপনি ততই বেশি মানসিক চাপে আক্রান্ত হবেন। এর ফলে সৃষ্ট উদ্যমহীনতা এবং অবসাদ আপনার আত্মনিয়ন্ত্রণ শক্তিকে দূর্বল করবে।
অনেকের জন্য “না” বলাটা একটি প্রধান আত্মনিয়ন্ত্রণ চ্যালেঞ্জ। “না” একটি শক্তিশালি শব্দ। সুতরাং এটি বলার ক্ষেত্রে ভয় পেলে চলবে না। সুতরাং যেখানে সরাসরি “না” বলা দরাকার সেখানে তাই বলুন।
৬. বিষাক্ত লোকদের ব্যাপারে ভাবা
যখনই আপনার কোনো বিষাক্ত ব্যক্তি বা সহকর্মীর কথা মনে পড়বে তার কথা না ভেবে বরং এমন কারো কথা ভাবুন যিনি আপনার জীবনে বরং আশীর্বাদ বয়ে এনেছেন।
৭. বৈঠকের সময় বহুমুখি কর্মতৎপরতায় লিপ্ত হওয়া
বৈঠকে কখনোই অর্ধেক মনোযোগ দিয়ে অংশগ্রহণ করবেন না। কোনো বৈঠকে যদি আপনার পুরোপুরি মনোযোগ দেওয়া দরকার নেই বলেই মনে হয় তাহলে তেমন বৈঠকে অংশগ্রণ না করাই ভালো। বৈঠকে বসে বহুমুখি তৎপরতায় লিপ্ত হলে অন্যরা ভাববে যে নিজেকে তাদের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভাবছেন।
৮. গল্পগুজব
গল্পগুজবকারী লোকেরা অন্যদের দুর্দশা দেখে আনন্দ লাভ করেন। এতে সাময়িকভাবে আনন্দ লাভ করা গেলেও দীর্ঘমেয়াদে কাজটি বেশ বিরক্তিকর হয়ে উঠবে এবং অন্যরা মনে আঘাতপ্রাপ্ত হবেন। সুতরাং অন্যের দুর্দশা নিয়ে মজা কুড়িয়ে সময় অপচয় করবেন না।
ইলিয়েনর রুজভেল্ট বলেছেন, “মহান মনের অধিকারীরা ধারণা নিয়ে আলোচনা করেন, গড়পড়তা লোকেরা ঘটনা নিয়ে আলোচনা করেন আর ক্ষুদ্র মনের লোকেরা অন্য লোককে নিয়ে আলোচনা করেন।”
৯. সাফল্য সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়া সক্রিয় না হওয়া
অামরা প্রায়ই কোনো কিছু শুরু করতে গিয়ে ব্যর্থ হওয়ার ভয়ে থেমে যাই। কারণ আমারা জানি আমাদের ধারণাগুলো নিখুঁত নয়। এবং আমরা হয়তো ভালো কিছু উৎপাদনে সক্ষম নাও হতে পারি। কিন্তু আপনি যদি কখনো কিছু উৎপাদন না করেন এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আপনার ধারণাগুলোকে বিবর্তিত হতে না দেন তাহলে আপনি ভালো কিছু উৎপাদন করবেন কীভাবে? ভুল করলে তা শোধরানো সম্ভব কিন্তু আপনি কিছুই না করেন তাহলে শোধরাবেন কীভাবে?
১০. নিজেকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করা
আপনি যখন নিজেকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করে সুখ লাভের চেষ্টা করবেন তখন আর আপনি নিজেই নিজের সুখের কর্তা থাকতে পারবেন না। আপনি যখন নিজের কোনো কাজ সম্পর্কে সুখ অনুভব করবেন তখন কাউকে তা নষ্ট করবেন না। তবে অন্যরা আপনার সম্পর্কে কী ভাবছে বা না ভাবছে সে সম্পর্কে পুরোপুরি নির্বিকার থাকা সম্ভব না হলে অন্যদের মতামতকে এক চিমটি লবণ হিসেবে গ্রহণ করুন। আর মনে রাখবেন লোকে আপনাকে যতটা ভালো বা খারাপ বলে আপনি কখনোই তেমনটা নন। সুতরাং অন্যদের মূল্যায়নে নিজের সুখের উৎস সন্ধান না করে বরং নিজের ভেতর থেকেই সুখ লাভের টেষ্টা করুন।
সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার
মন্তব্য চালু নেই