হেরেও বিরাট হৃদয় জয় করলেন যোদ্ধা হামিদ

বেন স্টোকসকে জবাব দেওয়া ‘শাট আপ’ ভঙ্গির চব্বিশ ঘণ্টা পরেই বিরাট কোহলি চরিত্রের অন্য দিক দেখল ক্রিকেটবিশ্ব। এবার ভারত অধিনায়ক বুঝিয়ে দিলেন, ক্রিকেট মাঠে প্রকৃত বীরত্বকে কীভাবে সেলাম করতে হয়, সেটাও তিনি জানেন।

আঙুলের হাড়ে চিড় নিয়েও হামিদ শুধু ব্যাটই করে গেলেন না, ৫৯ রানের অসম্ভব লড়াকু ইনিংস খেললেন। তাঁর অসামান্য প্রতিরোধের জন্যই ভারতকে শেষ ইনিংসে ১০৩ রান তাড়া করতে হল। না হলে ইনিংসেই জিতে পারতেন কোহলি’রা। এতটাই খারাপ অবস্থা হামিদের হাতের যে, তাঁকে দ্রুত দেশে ফিরে যেতে হচ্ছে। অস্ত্রোপচার করে তাঁর হাতে প্লেট বসাতেও হবে।

উনিশ বছরের ভারতীয় বংশোদ্ভূতের লড়াই দেখে মুগ্ধ কোহলি’ও। মাঠের মধ্যেই তিনি পিঠ চাপড়ে দেন তাঁর। তারপর টেস্ট জিতে উঠে মোহালির ড্রেসিংরুম বারান্দায় সোফা বসে হামিদের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথাও বলেন। ভবিষ্যৎ তারকাকে ব্যাটিং নিয়ে বেশ কিছু পরামর্শও দিয়েছেন বর্তমান মহাতারকা।

সাংবাদিক সম্মেলনে এসেও কোহলি উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে যান হামিদের। ‘‘উনিশ বছরের এক তরুণ হিসাবে দারুণ লড়াই করেছে হামিদ। টিমের ওকে দরকার ছিল। হাতের মারাত্মক চোট নিয়েও মাঠে নেমে অসাধারণ লড়াই করে গেল,’’ বলে কোহলি ভবিষ্যদ্বাণী করে দেন যে, দারুণ প্রতিভাবান এক তারকাকে পেতে চলেছে ইংল্যান্ড। ‘‘হামিদ খুব বুদ্ধিমান ক্রিকেটারও। সমস্ত ফর্ম্যাটেই সম্পদ হয়ে উঠতে পারে ও,’’ বলেছেন কোহলি।

কে বলবে, মাত্র চব্বিশ ঘণ্টা আগেই স্টোকস’কে জবাব দিতে তাঁর মুখে আঙুল দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ার ভঙ্গি ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল ক্রিকেটবিশ্বে। স্টোকস বনাম কোহলি নিয়ে প্রাক্তনরাও জড়িয়ে গিয়েছেন। সুনীল গাওস্করের যেমন পছন্দ হয়নি কোহলির প্রথম দিনের আগ্রাসী ভঙ্গি। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, স্টোকস তো আউট হয়েই গিয়েছিল। কী দরকার ছিল আবার ওকে ‘সেন্ড অফ’ দেওয়ার? কোহলি অবশ্য তাতে বিন্দুমাত্র না দমে দ্বিতীয় ইনিংসে ওই ‘শাট আপ’ ভঙ্গি করেন। যার সঙ্গে চোদ্দো বছর আগের সেই সৌরভ-ফ্লিনটফ জামা খোলাখুলির তুলনা চলছে।

তবে এর মধ্যেই হামিদের প্রতি কোহলির সৌজন্য ক্রিকেটের স্পিরিটকেও তুলে ধরল মোহালিতে। কোহলি নিজেও জানেন, চোট পাওয়া আঙুল নিয়ে খেলা কত কঠিন। শেষ আইপিএলেই কাটা আঙুল নিয়ে তিনি পর-পর ম্যাচ খেলে চলেছিলেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে এবং চারটি সেঞ্চুরিও করেছিলেন।

মাঠের মধ্যে প্রতিপক্ষের প্রশংসা করার ঘটনাও কোহলি এই প্রথম ঘটালেন না। ঢাকায় এশিয়া কাপে প্রত্যাবর্তন ম্যাচে দারুণ বল করায় মহম্মদ আমিরকে তিনি ‘ওয়েল বোল্ড’ বলেছিলেন। তখন ক্রিজে তিনিই ব্যাট করছিলেন। আমিরকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় ইডেনে ব্যাটও উপহার দেন কোহলি। তাহলে বিরাটমন্ত্র? যুদ্ধ জেতো সৌজন্য না হারিয়ে।



মন্তব্য চালু নেই