বিয়ে করেই মিডিয়া ছাড়লেন যেসব তারকা!
প্রায় সময় দেখা যায় শোবিজের তারকারা বিয়ে নিয়ে কোনো এক অজানা কারণে লুকোচুরি খেলেন, খেলতে ভালোবাসেন। এই ঘটনা শোবিজের রঙিন দুনিয়ায় একেবারেই প্রাচীন।
তবে নতুন করে চোখে পড়ার মতো একটি বিষয় হলো, আজকাল আমাদের অনেক তারকারাই বিয়ে করে চিরবিদায় জানাচ্ছেন মিডিয়াভুবনকে। আর এক্ষেত্রে নারীরাই উল্লেখ্য।
মান-মর্যাদা, সামাজিক স্ট্যাটাসের তোয়াক্কা না করে টাকার কুমির কিংবা বিত্তশালীদের গলায় মালা দিয়ে অনেক নারী তারকারা ত্যাগ করেছেন জ্বলজ্বলে ক্যারিয়ার, জনপ্রিয়তা আর কাট-অ্যাকশানের হাঁক ডাক। এ নিয়ে শোবিজে বিস্তর গবেষণা চলে প্রতিদিন।
বিয়ে করেই কেন মিডিয়া ছেড়ে দেন কিছু তারকা? এসব যুক্তিতর্কে বারবার উঠে আসে তারকাদের ছোটলোকি মন, অকৃতজ্ঞ স্বভাব আর মিডিয়া-দর্শকদের সঙ্গে নীরব প্রতারণার বৈশিষ্ট।
কেননা, তারকারা খ্যাতি পান মিডিয়ার জন্য, দর্শকদের জন্যই। হয়তো তারা নিজেদের মেধার বাহাদুরি করতে চাইবেন। কিন্তু এটা এক বাক্যে তাদের মানতে হবে, প্রচারণা না থাকলে, দর্শকদের কাছে না পৌঁছালে সুপ্ত মেধার কোনো মূল্য নেই।
তাই সবাই আজকাল প্রকাশ্যেই বলাবলি করেন, এইসব তারকারা মূলত আসেন নাম-যশ কামিয়ে টাকাওয়ালা বরের সন্ধাণ করতেই।
আর যখন সেটি পেয়ে যান তখন আর ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবেন না। চলুন দেখে নেই বিয়ে করে শোবিজকে বিদায় জানানো তারকাদের নামগুলো।
সারিকা
২০০৬ সালে একটি মোবাইল কোম্পানির মডেল হয়ে শোবিজে অভিষেক ঘটে মডেল ও অভিনেত্রী সারিকার। এর চার বছর পর আশুতোষ সুজনের ‘ক্যামেলিয়া’ নাটকের মাধ্যমে অভিনয় জীবন শুরু করেন।
তবে অমিতাভ রেজার পরিচালনায় একটি বিজ্ঞাপনচিত্র দিয়ে ২০০৮ এর দিকে মিডিয়ায় হৈ চৈ ফেলে দেন সারিকা। তারপর বাকিটা ইতিহাস।
পত্রিকার বিনোদন পাতায়, টেলিভিশন, পর্দায়, বিলবোর্ডে এবং সাধারণ মানুষের মনে অল্প সময়েই জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি
তবে সবকিছু ছাপিয়ে মডেলিংয়ে পেয়েছিলেন একচেটিয়া জনপ্রিয়তা। একজন আদর্শ বউ হয়ে উঠার স্বপ্ন নিয়ে সেই লোভনীয় ক্যারিয়ারকে তিনি ‘গুডবাই’ বলে দিলেন বিয়ের পর! হ্যাঁ, সবাই অবাক হয়েছিলো সারিকার এই সিদ্ধান্তে।
গেল বছরের ১২ অগাস্ট, মঙ্গলবার এক অনাড়ম্বর আয়োজনের মাধ্যমে সাত বছরের বন্ধু মাহিম করিমের সঙ্গে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন সারিকা। পুরান ঢাকার লক্ষীবাজারের বাসিন্দা মাহিম পেশায় একজন ব্যবসায়ী।
উল্লেখ্য, সারিকা অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে মোহন খানের ‘রাধা তুমি কার’, এস এ হক অলিকের ‘গেন্দুচোরা ও প্রেমকাহিনী’, হিমেল আশরাফের ‘প্রেমের বেদনা’, চয়নিকা চৌধুরীর ‘আহা বালিকা’ ও ‘বিকেলে সোনা রোদ’, সাইফ চন্দনের ‘একটু বোকামি অনেকটা পাগলামী’ ইত্যাদি।
আফসান আরা বিন্দু
লাক্স-চ্যানেল আইয়ের সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন তিনি। আর এই প্রতিযোগিতা মিডিয়ায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার একটি প্ল্যাটফর্ম দিয়েছে বিন্দুকে।
পরবর্তীতে হুমায়ূন আহমেদের গল্প এবং তৌকীর আহমেদের পরিচালনায় নির্মিত ‘দারুচিনি দ্বীপ’ চলচ্চিত্রটি দিয়েই মিডিয়ায় অভিষেক ঘটেছিল তার।
এছাড়াও বেশ কিছু বিজ্ঞাপন ও নাটকের অভিনয় দিয়ে তিনি খুব সহজেই পৌঁছে যান দর্শকদের অন্তরে। দ্রæতই পরিণত হন শোবিজের চাহিদা সম্পন্ন একজন শিল্পীতে।
পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও তিনি বাজিমাত করেন নতুন মুখ হিসেবে। ‘পিরিতের আগুন জ্বলে দ্বিগুণ’ ও ‘জাগো’ ছবির মাধ্যমে বিন্দু নিজেকে প্রমাণ করেছেন বড়পর্দায়।
সর্বশেষ চলতি বছরেই মুক্তি পাওয়া ‘এই তো প্রেম’ নামের আরেকটি ছবিতে শাকিবের বিপরীতে কাজ করে তিনি অনেক সম্ভাবনার জন্ম দেন।
কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্যি, সব সম্ভাবনার ইতি বিন্দু নিজেই টেনে দিলেন নিজের উড়ন্ত ক্যারিয়ারের।
সম্প্রতি বিয়ে করেছেন এই লাক্স তারকা। পাত্র আসিফ সালাহউদ্দিন মালিক। তিনি আসিফ অ্যাপারেলস লিমিডেটের কর্ণধার। কুমিল্লার ছেলে আসিফ রাজধানীতেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
সেই আসিফের জীবন সঙ্গী হয়েই বিন্দু ঘোষণা দিলেন, আর কাজ করবেন না শোবিজে। এই সিদ্ধান্তের কোনো নড়চড় হবে না বলেও নিশ্চয়তা দেন বিন্দু।
তিনি বলেন, ‘আমার পক্ষে আসলে একসঙ্গে দু’টি বিষয় চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এখন থেকে নিজেকে পুরোপুরিভাবে পরিবারের কাজে নিয়োজিত করতে চাই।’
তবে এতদিন যাদের জন্য তিনি আজকের বিন্দুতে পরিণত হয়েছেন সেইসব দর্শকরা তাকে মিস করলে কী করবেন- জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি বিন্দু।
সাহারা
অনেক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে চলচ্চিত্রের আঙিনায় পা রেখেছিলেন লাস্যময়ী নায়িকা সাহারা। ২০০৩ সালে অভিষেক হয় তার। অনেক পরিশ্রম করে ঢাকার চলচ্চিত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন এই অভিনেত্রী।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অনেক তারকার সঙ্গে জুটি বাঁধলেও তার সফল চলচ্চিত্রগুলোর নায়ক শাকিব খান। সব মিলিয়ে ৫০টির মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।
তারমধ্যে বদিউল আলম খোকন পরিচালিত ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’ তার অভিনীত সবচেয়ে আলোচিত চলচ্চিত্র। এতেও তার বিপরীতে ছিলেন শাকিব খান। সর্বশেষ গেল বছরের শুরুর দিকে মুক্তি পায় সাহারা অভিনীত ‘তোকে ভালোবাসতেই হবে’ চলচ্চিত্রটি।
এরপর তাকে আর মিডিয়ায় দেখা যায়নি। তখন থেকেই গুঞ্জন উঠেছিলো তবে কী অভিনয় ছাড়ছেন সাহারা। খোঁজ নিতেই জানা গেলো কোনো এক প্রযোজকের সাথে প্রেম করছেন তিনি।
সেই প্রেমিকের ইচ্ছেতেই অভিনয় করছেন না। আর গেল ৮ মে, শুক্রবার জানা গেলো সেই প্রেমিকের নামটাও। তিনি ‘ঢাকা টু বোম্বে’ ছবির প্রযোজক মাহবুবুর রহমান মনি।
ওইদিন তার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন সাহারা। আর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে, নিজের বিয়ের অনুষ্ঠানেই মিডিয়া ত্যাগের ঘোষণা দিলেন। এখন থেকে আর দর্শকদের মনোরঞ্জন নয়; সংসার সামলাবেন সাহারা।
শায়না আমিন
বদরুল আনাম সৌদের ‘ক্রস কানেকশন’ নাটকের মাধ্যমে ছোট পর্দায় পা রাখেন জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী শায়না আমিন।
এরপর বেশ কিছু বিজ্ঞাপন ও নাটকে কাজ করেন। ‘গুড়া মশলা’, ‘রমজানের ইফতার`’, ‘রেক্সনা’র বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হয়ে তিনি দারুণ প্রশংসিতও হন।
পাশাপাশি আবু আল সাঈদের ‘প্রেমের অঙ্ক’, ‘এলমি নো’, ধারাবাহিক ‘লোকালয়`’, আরিফ খানের ‘মন উচাটন’সহ বেশ কিছু নাটকে অভিনয় করে অল্পদিনেই তারকাখ্যাতি অর্জন করেন।
সেই সুবাদে নাম লিখান চলচ্চিত্রের রুপালী পর্দায়। ২০১১ সালে কাজ করেন ‘মেহেরজান’ নামেরি একটি চলচ্চিত্রের নাম ভূমিকায়। প্রেম ও মুক্তিযদ্ধের গল্প নিয়ে তৈরি এই ছবিটি নিয়ে বিতর্ক হলেও প্রশংসিত হয় শায়নার অভিনয়। ২০১২ সালে মুক্তি পায় শায়নার দ্বিতীয় ছব ‘পিতা’। এটিও ছিলো মুক্তিযুদ্ধের গল্প নির্ভর চলচ্চিত্র।
আর চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারী মুক্তি পাওয়া নার্গিস আক্তার পরিচালিত বাণিজ্যিক ছবি ‘পুত্র এখন পয়সাওয়ালা’ মুক্তির পর নির্মাতারা যখন শায়নাকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেন তখনই বিয়ে করে সংসারী হবার ইচ্ছে নিয়ে দেশ ছাড়েন শায়না। লন্ডনে গিয়ে মাসুদ রানা নামের এক প্রবাসী বাংলাদেশিকে বিয়ে করেছেন তিনি।
সেখানেই পেতেছেন সুখের সংসার। প্রায় ৪ মাস হয়ে গেল দেশে ফিরছেন না। শোনা যাচ্ছে শোবিজে আর কাজ করার ইচ্ছে নেই শায়নার। অবশ্য তার দ্বিতীয় স্বামী রানারই আপত্তি। তিনি চান না শায়না অভিনয় করুক।
লামিয়া
ভিট চ্যানেল আই টপ মডেল ২০১৪’র প্রথম রানার্সআপ হয়েই তার রঙিন জীবনে পদার্পণ। তারপর কাজ করেছেন নাটকে। তিনি সাদিয়া ইসলাম লামিয়া।
সম্প্রতি সায়মন তারিক পরিচালিত ‘মাটির পরী’ ছবিতে অভিনয় করেছেন। এটি এখন মুক্তির অপেক্ষায় আছে। কিন্তু ক্যারিয়ারে নতুন পালক যোগ হবার আগেই সব কিছুর ইতি টানলেন লামিয়া।
গেল মে মাসেই বিয়ে করে, বিয়ের অনুষ্ঠানেই সাংবাদিকদের কাছে ঘোষণা দিলেন ‘শোবিজে আর কাজ করব না’। এসময় লামিয়া বলেন, ‘এখন সংসার নিয়ে থাকতে চাই। তাই অভিনয়ে আপতত আমাকে দেখা যাবে না।’
তবে ভবিষ্যতে কবে নাগাদ দেখা যাবে সে বিষয়েও কিছু বলেননি লামিয়া। তার নীরবতাই বলে দিয়ে যায়, মিডিয়া থেকে নিজের নামটি মুছে দিতেই চলেছেন তিনি।
উল্লেখ্য, গেল ১৪ মে মিরপুরের একটি অভিজাত রেঁস্তোারায় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয় লামিয়ার। তার বর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী নৃত্য পরিচালক তানজিল আলম।
এই উল্লেখ করা পাঁচ তারকা ছাড়াও চলচ্চিত্রাভিনেত্রী রেসি, জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী রোমানা, কণ্ঠতারকা সোনিয়াসহ আরো অনেক তারকাই বিয়ে করে মিডিয়া ছেড়েছেন।
তাদের মধ্যে কেউ কেউ রয়েছেন যারা বিয়েটাও করেছেন লুকিয়ে। তবে একথা বলার অপেক্ষা রাখে না, আমাদের শিল্পী সঙ্কট; বিশেষ করে মেধাহীন শিল্পের এই বাজারে মিডিয়া ছেড়ে দেয়া এইসব সফল ও জনপ্রিয় তারকাদের শূন্যস্থান সহজে পূরণ হবে না।
তাদের যেমন মিস করবে ভক্ত-দর্শকেরা, ঠিক তেমনি তাদের অভাবে ভুগবে আমাদের শোবিজ। তাই আর কোনো নতুন তারকা যেন এমন আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত না নেন, সেই শুভকামনা রইল।
মন্তব্য চালু নেই